ঠেলায় পড়ে এ বারে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টায় নামল নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ জুটি। এর জন্য একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।
মোদী সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর থেকে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার কৌশল নিয়েই চলছিল। আগের মতো প্রধানমন্ত্রী আর সাংবাদিকদের বিদেশ সফরে নিয়ে যান না। অতীতে বিজেপির যে সব বৈঠকে সংবাদমাধ্যমের প্রবেশাধিকার ছিল, সেগুলিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। মন্ত্রী-আমলাদেরও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে— সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা চলবে না। বিজেপি নেতৃত্ব ভেবেছিলেন, সরকার ও দল ভাল কাজ করলে সংবাদমাধ্যম এমনিতেই সেগুলি প্রচার করবে। কিন্তু সরকারের এক বছর পর দেখা যাচ্ছে— তা তো হয়ইনি, উল্টে সংবাদমাধ্যম এখন আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে। অসন্তোষের পারদও চড়ছে। সেটি সামলাতে এখন সংবাদপত্রের বিরুদ্ধেও সরকার মামলা করছে।
কিন্তু গণতন্ত্রে ও জনমত গঠনে যে সংবাদমাধ্যমও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে— সেটি অনুধাবন করছেন মোদী-শাহ। ক’দিন আগেই নরেন্দ্র মোদী আক্ষেপ করে বলেছেন, সরকার এত ভাল কাজ করছে, কিন্তু সংবাদমাধ্যমে প্রতিফলিত হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে অমিত শাহের সঙ্গেও তিনি কথা বলেন। দলের অন্য নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন অমিত শাহ। পরে অমিতও কবুল করেন, গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় কোথাও ফাঁক থেকে যাচ্ছে। সে কারণেই তিনি একটি টাস্ক ফোর্স গড়ে দিয়েছেন।
এই নতুন টাস্কফোর্সের নেতৃত্ব দেবেন দলের মুখপাত্র এম জে আকবর। সঙ্গে থাকছেন অমিত শাহের ঘনিষ্ঠ নেতা শ্রীকান্ত শর্মা, যিনি বেশ কয়েক বছর ধরেই বিজেপির মিডিয়া সেলের দায়িত্বে রয়েছেন। এরই সঙ্গে সিদ্ধার্থনাথ সিংহ, অনিল বালুনি ও স্বদেশ বর্মাকেও রাখা হয়েছে। এই নতুন টাস্ক ফোর্সের এক সদস্য আজ বলেন, ‘‘দলের মুখপাত্ররা যে রকম বিভিন্ন টেলিভিশনে গিয়ে দলের বক্তব্য বলছেন, সেটি চলবে। কিন্তু সাংবাদিক, সম্পাদকদের মধ্যে সরকার ও দল সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব কাটানোটাও এই কমিটির লক্ষ্য।’’
সংবাদমাধ্যমকে কী ভাবে সামলানো হবে, তা নিয়ে গোড়া থেকেই হিমশিম খাচ্ছে বিজেপির নতুন নেতৃত্ব। প্রথমে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকে প্রকাশ জাভড়েকরকে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু অচিরেই নরেন্দ্র মোদী বুঝতে পারেন, তাঁকে দিয়ে হচ্ছে না। তার পর অরুণ জেটলির মতো ওজনদার সেনাপতিকে সেই মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু জেটলির পক্ষে প্রতিদিন রোজকার খবর দেওয়া সম্ভব নয়। যাবতীয় বিতর্কে কেন্দ্রের সিনিয়র মন্ত্রী হিসেবে মুখ খুলতে পারেন না তিনি। সে কারণেই এই টাস্কফোর্স।
কিন্তু কংগ্রেসের বক্তব্য, এ ভাবে মিডিয়া ম্যানেজ করার চেষ্টা করে কিচ্ছু হবে না। সংবাদমাধ্যম সমাজের আয়না। শাসক দল যা করবে, সংবাধমাধ্যমে তার প্রতিফলন ঘটবেই। বিজেপিরই এক নেতা রসিকতা করে বলেন, ‘‘বিরোধী দলে থাকার সময়ে বিজেপি সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রিয় ছিল। কারণ তখন দলের রাশ ছিল দিল্লির অভিজ্ঞ নেতাদের হাতে। আর এখন দলের দুই শীর্ষ নেতা নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ দুজনেই এসেছেন গুজরাত থেকে। যে ভাবে গুজরাতে সংবাদমাধ্যমকে তাঁরা ব্যবহার করে এসেছেন, দিল্লিতে সেটা চলে না।’’ তাঁর কথায়— গুজরাতের মানসিকতা থেকে দিল্লিতে ফিরতে খানিকটা সময় লাগল!