জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) সংশোধন প্রক্রিয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা রুজু করার কথা ঘোষণা করলেন দক্ষিণ করিমগঞ্জের বিধায়ক সিদ্দেক আহমদ।
আজ করিমগঞ্জের আবর্ত ভবনে এক সাংবাদিক বৈঠকে এ কথা জানান সিদ্দেক। তিনি জানান, স্বাধীনতার আগে থেকে অসমে থাকা বাগান শ্রমিকরা নথির অভাবে নাগরিক পঞ্জিতে নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারছেন না। সমস্যার মুখে পড়েছেন বৈবাহিক সূত্রে অসমে থাকা ভিন রাজ্যের মহিলারাও। অবিভক্ত অসমের মেঘালয় বা অরুণাচলপ্রদেশে কর্মরত ব্যক্তিদের নাম ‘লিগ্যাসি ডেটা’য় না থাকায় এনআরসিতে তাঁরাও নাম তুলতে পারছেন না। তাই নাম নথিভুক্তকরণ প্রক্রিয়া ঠিক না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় নাগরিক পঞ্জির কাজ বন্ধ রাখার আবেদন জানান বিধায়ক। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘প্রক্রিয়াটি ঠিক করা না হলে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া অন্য কোনও উপায় থাকবে না।’’ বিধায়ক জানান, বিভিন্ন বাগান শ্রমিকরা ইংরেজ আমলে অসমে বসতি স্থাপন করেন। চা-শ্রমিকদের কাছে কোনও পাট্টা থাকে না। পুরনো ভোটার তালিকার মতো কোনও নথিও তাঁদের কাছে নেই। তাই এনআরসিতে তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না। এর জেরে অসমের লক্ষ লক্ষ শ্রমিক এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছেন। বিধায়কের বক্তব্য— খিলঞ্জিয়া বা ভূমিপূত্রদের (অসমে স্থায়ী ভাবে বসবাস করা নাগরিক) নিয়ে অসমের আঞ্চলিক দলগুলো সরব হলেও, এখানকার চা-শ্রমিকরাও যে ভূমিপুত্র তাতে সন্দেহ নেই। এ ছাড়া অবিভক্ত অসমের অনেক বাসিন্দা কর্মসূত্রে শিলং বা মিজোরামে ছিলেন। সে কারণে তাঁদের নাম লিগ্যাসি ডেটায় ওঠেনি। তার জেরে তাঁদের নাম এনআরসিতে তুলতে সমস্যা হচ্ছে। বিধায়ক উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘‘অসমের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী গোপীনাথ বরদলৈ, প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী হিতেশ্বর শইকিয়ার নামও ১৯৫১ সালের লিগ্যাসি ডেটায় ছিল না। বৈবাহিক সূত্রে অন্য রাজ্যের অনেক মহিলা অসমে দীর্ঘ দিন বসবাস করছেন। জাতীয় নাগরিক পঞ্জিতে তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্তও সঠিক নয়।’’ এ সব কারণেই তিনি সর্বোচ্চ আদালতে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
অন্য দিকে, রেশন কার্ড এবং খাদ্য সুরক্ষার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখতেও জেলাশাসকের কাছে আর্জি জানিয়েছেন বিধায়ক সিদ্দেক। তিনি বলেন, ‘‘খাদ্য সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন জায়গায় সরকার মনোনীত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটি হিতাধিকারীদের নাম চূড়ান্ত করে দেয়। কিন্তু জনগণনায় করিমগঞ্জের কয়েক লক্ষ বাসিন্দাকে বাদ দেওয়া হয়। খাদ্য সুরক্ষা কমিটি যাঁদের নাম চূড়ান্ত করেছিল, তাঁদের অনেকে ওই তালিকায় জায়গা পাননি।’’ বিধায়কের অভিযোগ, গণনার ভূল হিসেবকে বাস্তবায়িত করতে জোগান বিভাগও খাদ্য সুরক্ষা তালিকা থেকে অনেকের নাম বাদ দিয়ে দেয়। এখন খাদ্য সুরক্ষা কার্ড বণ্টন করা হলে পরিণতি ভয়ঙ্কর হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন সিদ্দেক।
খাদ্য সুরক্ষা তালিকা তৈরির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তারা কোনও মন্তব্য করতে চাননি।