এই জেলায় জেলাশাসক হয়ে তাঁর বদলি হয়ে আসাটাই ভাগ্য বদলে দিল মিজোরামের প্রত্যন্ত জেলা লঙ্গলাইয়ের। অপুষ্টিতে যেখানকার বেশির ভাগ শিশুই ভুগত, তাদের পাত এখন রঙিন সবজিতে ভরপুর।
মিজোরামের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া এবং বিপর্যয়প্রবণ জেলা এই লঙ্গলাই। প্রতি বছর বর্ষায় এই জেলার ৪০ থেকে ১৭০টি গ্রাম একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে সেখানে চাষবাস একেবারেই হয় না। এক অভিনব পদ্ধতিতে তিনি বদলে দিয়েছেন এই জেলার অবস্থা। কী ভাবে?
গ্রামের ফল, শাক-সবজির মূল উৎস অসমের শিলচর। আইজল থেকে ১৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শিলচর থেকেই যাবতীয় খাদ্যসামগ্রী এসে পৌঁছয় এই গ্রামে। খারাপ রাস্তা পেরিয়ে আসতে দু’দিন সময় লেগে যায়। যাও বা সেগুলি এসে পৌঁছয়, কিন্তু ট্রাকের মধ্যে দু’দিন পড়ে থাকায় সেগুলোর অনেকটাই আবার খারাপ হয়ে যায়। আর যেগুলো ভাল থাকে তার দাম অনেক গুণ বেড়ে যায়।
মূলত চাকমা এবং লাই সম্প্রদায়ের মানুষের বাস এই জেলায়। গ্রামের বেশির ভাগ শিশুই অপুষ্টির শিকার। কারণ, তারা স্থানীয় কিছু শাক আর ভাত ছাড়া আর কিছুই খেতে পায় না।
চলতি বছরেই এই জেলায় বদলি হয়ে আসেন ২০১৪ ব্যাচের আইএএস অফিসার শশাঙ্ক আলা। তিনি এ সব দেখে অত্যন্ত ভেঙে পড়েন। ঠিক করেন, গ্রামেই ফসল ফলাবেন। গ্রাম থেকে অপুষ্টি দূর করবেন। তার জন্য বেছে নেন স্কুলগুলোকে। সমস্ত স্কুলে তিনি ‘মাই স্কুল, মাই ফার্ম’ প্রকল্প চালু করেন। কী এই প্রকল্প?
যে সমস্ত স্কুলের নিজস্ব জমি রয়েছে, তারা সেই জমিতে এবং যাদের নেই তারা স্কুলের ছাদে চাষাবাদ শুরু করেন। বিভিন্ন রকম সবজি চাষ শুরু হয় সেখানে। চাষাবাদের সঠিক পদ্ধতি শেখানোর জন্য স্থানীয় কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের সাহায্যও নেন তিনি।
হলুদ, আদা, টমেটো, ভুট্টা, গাজর, ক্যাপসিকাম এমন নানান সবজির চাষ শুরু হয়। এমনকি হলুদ এবং আদার উৎপাদন এত বেশি পরিমাণে হয়েছে যে রফতানিও শুরু করেছেন তাঁরা।
ইতিমধ্যেই ২১৩টি স্কুল এবং অঙ্গনওয়াড়ি এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় আরও ৫০০ স্কুল এবং অঙ্গনওয়াড়িকে এই প্রকল্পের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। তৃতীয় দফায় হাঁস, মুরগি প্রতিপালনও শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে।
এই ব্যবস্থা এতটাই লাভজনক এবং এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে, সম্প্রতি একটি ফেসবুক পোস্টে উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডুও এটা শেয়ার করেছেন।