ক্ষেপণাস্ত্র ক্লাবে স্বাগত। ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস ও লুক্সেমবুর্গের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর। সোমবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই
ক্ষেপণাস্ত্র ক্লাবে ঢোকার অনুমতি মিলল। এ বার তাকে হাতিয়ার করেই ভারত পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠীর (এনএসজি) টিকিট পাওয়ার চেষ্টা করবে বলে কূটনৈতিক সূত্রে খবর। ঘটনাচক্রে এ দিনই এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়ে দিয়েছেন, চিনা প্রাচীর টপকে ভারত এনএসজি-তেও ঢুকতে পারবে বলে তিনি নিশ্চিত।
মোদীর সাম্প্রতিক আমেরিকা সফরের সময়েই ক্ষেপণাস্ত্র ক্লাব এমটিসিআর-এর সদস্য হওয়া নিয়ে বারাক ওবামা প্রশাসনের আশ্বাস পেয়েছিল দিল্লি। আজ ওই গোষ্ঠীর তিন সদস্য দেশ ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস ও লুক্সেমবুর্গের রাষ্ট্রদূতের সামনে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর। এমটিসিআর-এর অধিকাংশ সদস্যই এনএসজি গোষ্ঠীভুক্ত। কিন্তু এনএসজি-র সোল বৈঠকে ভারতের পথে বারবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে চিন, তারা এখনও এই ক্লাবের সদস্য নয়। সাউথ ব্লক সূত্রে খবর, এনএসজি-তে ঐকমত্য না হলে ভারতের ঢোকার সম্ভাবনা নেই। সেই ঐকমত্যে বারবার বাধা দিচ্ছে চিন। কিন্তু বেজিং যদি এমটিসিআর-এ ঢুকতে চায় তবে এ বার দিল্লির সম্মতি প্রয়োজন হবে। সেই বিষয়টিকেই দর কষাকষির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে ভারত।
সোল বৈঠকের আপাতব্যর্থতার পরেও এ দিন এনএসজি প্রসঙ্গে আত্মবিশ্বাসী শুনিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গলা। এক টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী জানান, সাংহাই রাষ্ট্রগোষ্ঠী, ক্ষেপণাস্ত্র ক্লাব এমটিসিআর ও এনএসজি-র সদস্যপদের জন্য আগের সব সরকারও চেষ্টা করেছে। তাঁর আমলে এমটিসিআর ও সাংহাই গোষ্ঠীর সদস্য হতে পেরেছে ভারত। এনএসজি নিয়ে প্রক্রিয়াও সদর্থক ভাবে শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘‘সব বিষয়েরই নির্দিষ্ট নিয়ম থাকে। তা মেনেই এগোতে হবে।’’
কিন্তু এনএসজি-র সোল বৈঠকে চিনই বারবার ভারতের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন কূটনীতিকরা। নরেন্দ্র মোদী সরকারের সঙ্গে ১৯ বার নানা স্তরে চিনা সরকারের আলোচনা হয়েছে। আদৌ কি বেজিংয়ের মনোভাব বদলানো সম্ভব? প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘‘মনোভাব বদলানো কূটনীতির কাজ নয়। কোথায় কোথায় দু’দেশ একসঙ্গে কাজ করতে পারে সেটাই খুঁজে বার করতে হয়।’’ তিনি জানাচ্ছেন, চিনের সঙ্গে অনেক সমস্যা রয়েছে। তা মেটাতে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। সমস্যা কমানোর চেষ্টা করতে হবে। মোদীর দাবি, ‘‘চিন কিন্তু আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছে। কয়েকটি বিষয়ে বেজিংয়ের নীতি আমাদের চেয়ে আলাদা। কয়েকটি বিষয়ে আমাদের নীতি বেজিংয়ের চেয়ে আলাদা। চিনের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে আমাদের অবস্থান জানাতে হবে।’’
আবার এনএসজি পর্বে ভারতের হয়ে আমেরিকার আসরে নামাও চোখে পড়েছে কূটনীতিকদের। ‘মার্কিন মিত্র দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত না হয়েও কি আমেরিকার ঘনিষ্ঠ হতে পারে ভারত? মোদীর জবাব, ‘‘অন্য দেশের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে চলেই আমরা এত দিন ভুল করেছি। এখন আর দ্বিমেরু বিশ্ব নেই। বরং সারা বিশ্বের মধ্যে যোগাযোগের ধরন বদলে গিয়েছে। ১২৫ কোটি মানুষের দেশের স্বার্থ বুঝে কাজ করতে হবে।’’ তবে আমেরিকার সম্পর্ক যে অনেক ভাল হয়েছে তা এক কথায় মেনে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘আমার আমেরিকা সফরের সময়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যমই জানিয়েছিল, বারাক ওবামার বিদেশনীতির ফলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক অনেক উষ্ণ হয়েছে।’’