লোকাল ট্রেন পরিষেবাও বেসরকারি হাতে? ফাইল চিত্র
ট্রেন চালানোর দায়িত্ব সরাসরি বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার পথে আরও এক ধাপ এগোল রেল মন্ত্রক। দূরপাল্লার পাশাপাশি ভাবনায় রয়েছে লোকাল ট্রেনও। প্রাথমিক ভাবে হাওড়া-পুরী, হাওড়া-দিল্লি, হাওড়া-মুম্বইয়ের মতো দূরপাল্লার রুটের পাশাপাশি মুম্বই, কলকাতার লোকাল ট্রেন পরিষেবাকেও আংশিক ভাবে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিতে চাইছে রেল।
নরেন্দ্র মোদী সরকার দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসেই জল মাপতে প্রথম ধাপে লখনউ-নয়াদিল্লি, মুম্বই-আমদাবাদ রুটে তেজসের মতো ট্রেন চালানো, এমনকি টিকিটের দাম ঠিক করার দায়িত্বও তুলে দেয় আইআরসিটিসি-র হাতে। পরবর্তী ধাপে আন্তঃশহর (ইন্টারসিটি) ১৪টি, দূরপাল্লার ১০টি ও শহরতলির চারটি লোকাল ট্রেন পরিষেবা বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার প্রাথমিক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে রেল।
আগামী শুক্রবার রেল মন্ত্রকে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেই বৈঠকে দক্ষিণ-পূর্ব রেল-সহ মোট ছ’টি জ়োনের প্রিন্সিপাল চিফ অপারেশনস ম্যানেজারকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। রেল সূত্রে ইঙ্গিত, যদি ওই বৈঠকে কিছু ট্রেনকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়, তা হলে ওই সব ট্রেনের ভাড়া অনেকটাই বাড়াবে সংস্থাগুলি। পাশাপাশি সেগুলিতে রেলকর্মী বা প্রবীণদের ছাড়ও সম্ভবত মিলবে না। রেল ইউনিয়নগুলির আশঙ্কা, আগামী এক দশকে ধাপে ধাপে পুরো রেল চালানোই বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে মোদী সরকার।
সাফাই, খাবার, ইন্টারনেট, টিকিট বিক্রির মতো একাধিক পরিষেবা ইতিমধ্যেই বেসরকারি হাতে তুলে দিয়েছে রেল মন্ত্রক। এ বার ধাপে ধাপে ট্রেন চালানোর দায়িত্বও ঝেড়ে ফেলতে চাইছে মোদী সরকার। রেল মন্ত্রকের দাবি, বর্তমানে যাত্রীখাতে প্রতি বছর গড়ে ৩০ থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। সে কারণে দূরপাল্লার পাশাপাশি এ বার লোকাল ট্রেনের দায়ও ঝেড়ে ফেলতে চাইছে পীযূষ গয়ালের মন্ত্রক।
গতকাল বোর্ডের জ়োনগুলিকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারের একশো দিনের পরিকল্পনায় যাত্রীদের বিশ্বমানের পরিষেবা দিতে রেল পরিচালন ব্যবস্থা বেসরকারি হতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে। কারা ট্রেন চালাবে, তা দরপত্রের মাধ্যমে বেছে নেওয়া হবে। সংস্থাগুলিকে রুট নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। সেই রুটে আধুনিক যাত্রিবাহী ট্রেন চালাতে হবে এবং বিনিময়ে রেলকে তার প্রাপ্য মেটাতে হবে সংস্থাগুলিকে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ওই ট্রেনগুলির ভাড়া নির্ধারণ করার অধিকার থাকবে সংশ্লিষ্ট সংস্থার হাতে। তবে রেল সূত্রে বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে যাত্রীরা যাতে ভাড়ায় ছাড় পান, সে বিষয়টি মাথায় রাখা হচ্ছে। চিঠিতে সুনির্দিষ্ট ভাবে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যেই প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু রুটকে চিহ্নিত করেছে রেল বোর্ড। জ়োনাল রেলওয়েকে তাদের জ়োনে যে রুটে ট্রেন চালালে লাভ হতে পারে, সেগুলিকে বেসরকারি সংস্থার জন্য চিহ্নিত করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে এ নিয়ে পরিকল্পনা জানাতে বলা হয়েছে ছ’টি জ়োনের অফিসারদের।
ইউনিয়নগুলির আশঙ্কা, বেসরকারি হাতে গেলে একে তো রেলের ভাড়া বাড়বেই। উপরন্তু থাকবে কাজ হারানো আশঙ্কা। এ নিয়ে ক্ষোভ ছড়াচ্ছে রেলের অন্দরমহলে। রেলের একাংশের বক্তব্য, বেসরকারি হাতে চলে যাওয়া ট্রেনগুলিতে রেলের কর্মীরা কোনও ছাড় পাবেন না। আইআরসিটিসি-র হাতে থাকা দু’টি তেজসে প্রবীণ নাগরিক, শিশু বা রুগিরা ভাড়ায় ছাড় পান না। নয়া ট্রেনগুলিতেও একই অবস্থা হতে পারে বলে আশঙ্কা কর্মীদের।