রইল বাহাদুরি, বিদায় বাহাদুর

এ দিন উত্তরবঙ্গের হাসিমারা বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে শেষ বারের মতো উড়ল মিগ-২৭ যুদ্ধবিমান। বাহিনীতে তারই ডাকনাম বাহাদুর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৩১
Share:

উড়ান: হাসিমারার বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে মিগ ২৭-এর শেষ সফর। —নিজস্ব চিত্র।

পাহাড়ের খাঁজে আড়াল খুঁজে লুকিয়ে ছিল শত্রু পক্ষ। তবে নজর এড়াতে পারেনি তারা। আকাশপথে হানা দিয়ে একের পর এক শত্রু-ঘাঁটি ধ্বংস করে দিয়েছিল বাহাদুর!

Advertisement

এ-হেন যোদ্ধাকেই শুক্রবার বিদায় জানাল বায়ুসেনা।

বিমানবাহিনী জানিয়েছে, এ দিন উত্তরবঙ্গের হাসিমারা বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে শেষ বারের মতো উড়ল মিগ-২৭ যুদ্ধবিমান। বাহিনীতে তারই ডাকনাম বাহাদুর। কার্গিলে পাহা়ড়ের আড়ালে থাকা শত্রু-ঘাঁটি ধ্বংসে তার অবদান মনে রেখেছেন বিমানবাহিনীর কর্তারা। বাহিনী সূত্রের খবর, বাহাদুরই আদি মিগ-২৭ যুদ্ধবিমান। পরে এ দেশে প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটিয়ে মিগ-২৭ (ইউপিজি বা আপগ্রেডেড) বিমান তৈরি হয়েছে। বায়ুসেনার মুখপাত্র উইং কম্যান্ডার অনুপম বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আদি মিগ-২৭ অবসর নিলেও ‘আপগ্রেড’ গোত্রের দু’টি স্কোয়াড্রন থাকছে বাহিনীতে।

Advertisement

এ দিনই বিকানেরের কাছে নাল বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে মিগ-২১ (টি৯৬) বিমানেরও অবসরের পালা শুরু হয়েছে। নালের ১০৮ স্কোয়াড্রন থেকে এই বিমানকে শেষ বার ওড়ান বায়ুসেনা-প্রধান বি এস বীরেন্দ্র সিংহ ধানোয়া। এই বিমানের আরও একটি স্কোয়াড্রন রয়েছে। আদি মিগ-২১ (বাহিনীর ভাষায়, মিগ ২১ এফএল) অবশ্য ২০১৩ সালেই এ রাজ্যের কলাইকুন্ডা থেকে শেষ বার উড়েছিল।

বায়ুসেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, আশির দশকের শেষ দিকে মিগ-২৭ বিমান আসে এ দেশে। আকাশ থেকে মাটিতে থাকা নিশানায় নির্ভুল লক্ষ্যে বোমা ফেলতে পারত সে। এর বাইরে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তেও দক্ষ ছিল সে। আকাশপথে হানা দেওয়া শত্রু-বিমানকেও নিকেশ করার ক্ষমতা ছিল তার। কার্গিল যুদ্ধ এবং অন্যান্য অভিযানে অবশ্য এ-সবের বাইরে আরও একটি কারণে পাইলটদের প্রিয় হয়ে উঠেছিল ‘বাহাদুর’। কী কারণ?

বায়ুসেনার এক কর্তা জানান, বাহাদুরের ডানাতেও বিশেষ কারিকুরি ছিল। উড়তে উড়তে প্রয়োজনমতো ডানার কৌণিক অবস্থান বদলে ফেলা যেত। শত্রু-ঘাঁটিতে অভিযানের সময়ে এই কারিকুরি পাইলটদের বা়ড়তি সুবিধা দিত। মিগ-২৭ সামলানোর দায়িত্বে থাকা অনেক পাইলট একে ‘সুইং উইঙ্গার’ বলেও ডাকেন। হাসিমারার ‘সুইফট’ ছিল মিগ-২৭ যুদ্ধবিমানের শেষ স্কোয়াড্রন। এই স্কোয়াড্রনের গর্বের ইতিহাস উজ্জ্বল। এদের হামলার মাধ্যমেই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। তবে সেই আক্রমণ হয়েছিল ‘ন্যাট’ বিমান দিয়ে। বর্তমানে স্কোয়াড্রনের কম্যান্ডিং অফিসার গ্রুপ ক্যাপ্টেন এস এল মহাজন আগে সুখোই যুদ্ধবিমানের স্কোয়াড্রনে বদলি হয়েছিলেন। কিন্তু বিদায়বেলায় প্রিয় বাহাদুরের কাছে ফিরেছেন তিনি।

বাহাদুরকে এ বার বিভিন্ন সংগ্রহশালায় রাখা হতে পারে। তার অবসরের ফলে তৈরি হওয়া শূন্যস্থান পূরণ করা হবে সুখোই-৩০ এবং পরবর্তী কালে র‌্যাফালে যুদ্ধবিমান দিয়ে। এই স্কোয়াড্রনের পাইলট এবং অন্য কর্মীরা বদলি হচ্ছেন অন্যত্র।

শুধু কাজের মধ্যে আর থাকছে না বাহাদুর। তবে হাসিমারার বাতাসে রয়ে যাচ্ছে তার গর্জন আর ইতিহাস ধরে রাখছে তার বাহাদুরি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement