ফাইল চিত্র।
অফিসে গেলে মোবাইলে আরোগ্য সেতু অ্যাপ বাধ্যতামূলক। তা সে সরকারি দফতরই হোক বা বেসরকারি। ট্রেনে বা মেট্রোতে চড়লেও আরোগ্য সেতু অ্যাপ ডাউনলোড করে রাখতে হবে। বিদেশ বা ভিন্ রাজ্য থেকে নিজের বাড়ি ফিরলেও আরোগ্য সেতু থাকা চাই। লকডাউনের পরে মে মাসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এমনই নিয়ম জারি করেছিল।
কিন্তু এই আরোগ্য সেতু অ্যাপ কারা, কোথায় তৈরি করেছে? মোদী সরকারের কোনও দফতরের কাছে তার কোনও তথ্য নেই। কী ভাবে এই অ্যাপ তৈরি হল? তা-ও জানা নেই। এই সংক্রান্ত ফাইল কোথায় রাখা হয়েছে? তথ্য নেই। কারা এই অ্যাপ তৈরিতে সাহায্য করেছে? এই অ্যাপের মাধ্যমে যাতে মোবাইলের তথ্য চুরি না হয়ে যায়, তার জন্য কী কী সতর্কতা নেওয়া হয়েছে? নেই সে তথ্যও। মোদী সরকারের ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক, এনআইসি (ন্যাশনাল ইনফরমেটিক্স সেন্টার) ন্যাশনাল ই-গভর্ন্যান্স ডিভিশন— কারও কাছেই প্রশ্ন করে কোনও উত্তর মেলেনি।
সমাজকর্মী সৌরভ দাস তথ্যের অধিকার আইনে এ বিষয়ে প্রশ্ন করেও জবাব না-মেলায় মুখ্য তথ্য কমিশনের কাছে অভিযোগ জানান।
এ বার তথ্য কমিশন সরকারি দফতরগুলিকে তোপ দেগে নোটিস পাঠিয়েছে। কমিশনের প্রশ্ন, তথ্য আড়াল করার অপরাধে কেন এই সরকারি দফতরগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তার ব্যাখ্যা চাই।
মোদী সরকার মে মাসের গোড়ায় আরোগ্য সেতু অ্যাপ প্রায় সব ক্ষেত্রেই বাধ্যতামূলক করে দেওয়ায় কোটি কোটি মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড হয়েছে। তখনই রাহুল গাঁধী-সহ বিরোধী নেতারা অভিযোগ তুলেছিলেন, সরকার এর মাধ্যমে আমজনতার উপরে নজরদারি করতে চাইছে। কেন্দ্রের সাইবার হানা রোখার ভারপ্রাপ্ত সংস্থা সার্ট-ইন (কম্পিউটার এমারজেন্সি রেসপন্স টিম)-ও ওই অ্যাপের মাধ্যমে তথ্য চুরির আশঙ্কা জানিয়েছিল। তার পরেই সব ক্ষেত্রে আরোগ্য সেতু অ্যাপ বাধ্যতামূলক করার শর্ত শিথিল করতে শুরু করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
কংগ্রেস নেতারা বলছেন, রাহুল তখনই বলেছিলেন, আরোগ্য সেতু অ্যাপ তৈরির দায়িত্ব বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে। এখন সেই অভিযোগই প্রমাণিত হল। তৃণমূল নেতারাও আজ জানিয়েছেন, তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব আগেই একে ‘দুরারোগ্য গোয়েন্দা সেতু অ্যাপ’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেন, “কে তৈরি করেছে, ফাইল কোথায়, তথ্য চুরি রোখার কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, রহস্যজনক অ্যাপ নিয়ে সরকারের কোনও ধারণা নেই। অথচ কোটি কোটি নাগরিককে অ্যাপ ব্যবহারে বাধ্য করা হয়েছে।”
কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা এনআইসি যে কোনও সরকারি ওয়েবসাইট বা অ্যাপ তৈরির দায়িত্বে থাকে। কিন্তু আরোগ্য সেতু অ্যাপের ক্ষেত্রে এনআইসি জানিয়েছে, এর ফাইল তাদের কাছে নেই। তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রক প্রশ্নের জবাব দেওয়ার দায় ই-গভর্ন্যান্স ডিভিশনের ঘাড়ে ঠেলে দিয়েছে। ডিভিশন জানিয়েছে, এর সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। তা হলে কে জানে? তারও জবাব মেলেনি। কমিশনের প্রশ্ন, এনআইসি-র কাছে কোনও তথ্য না থাকলে আরোগ্য সেতু সরকারি ওয়েবসাইট তৈরি হল কী ভাবে?
কমিশন ও বিরোধীদের তোপের মুখে আজ কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করেছে, অতিমারি ও লকডাউনের বিধিনিষেধের মধ্যে সংক্রমণ চিহ্নিত করতে ২১ দিনের রেকর্ড সময়ে আরোগ্য অ্যাপ তৈরি হয়েছিল। এতে শিল্পমহল, শিক্ষাজগৎ, সরকারের সেরা মস্তিষ্কেরা কাজ করেছেন। এই অ্যাপের ভূমিকা নিয়ে কারও কোনও সংশয় থাকার কারণ নেই। কিন্তু তথ্যের অধিকার আইনে কেন সরকার জবাব এড়িয়ে গেল, তার ব্যাখ্যা মেলেনি।