ফাইল চিত্র।
যোগী আদিত্যনাথকেই সামনে রেখে উত্তরপ্রদেশের ভোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেই লখিমপুর খেরির ঘটনা নতুন করে বিজেপি নেতৃত্বকে ভাবনায় ফেলেছে। উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব-সহ আসন্ন পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে উত্তরাখণ্ড, গোয়া, মণিপুরে ক্ষমতা ধরে রাখাও বিজেপির কাছে চ্যালেঞ্জ। ২০২২-এর গোড়ায় এই নির্বাচনগুলিকে পাখির চোখ করে সোমবার দিল্লিতে বিজেপির জাতীয় পদাধিকারীদের বৈঠক বসছে। সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই বৈঠকে পাঁচ রাজ্যে বিজেপির প্রচারের সুর বেঁধে দিতে পারেন।
দিন দশেক আগেই বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা দলের নতুন জাতীয় কর্মসমিতির সদস্যদের নাম ঘোষণা করেছেন। তার পরে এই প্রথম বিজেপির জাতীয় পদাধিকারীদের বৈঠক বসছে। আগামী ৭ নভেম্বর বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের আলোচ্য বিষয় নিয়ে এই বৈঠকেই প্রাথমিক আলোচনা হবে। বিজেপি নেতারা মনে করছেন, সোমবার থেকে শুরু করে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ১৯ দিন উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে দলের নির্বাচনী কৌশল তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী সোমবার জাতীয় পদাধিকারীদের বৈঠকে যে দিশা দেখাবেন, তার ভিত্তিতে অমিত শাহ, নড্ডা ও সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত নেতা বি এল সন্তোষ জাতীয় কর্মসমিতিতে কী কী বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তা ঠিক করে ফেলবেন। জাতীয় কর্মসমিতির আগে বিজেপির কিসান মোর্চা, সংখ্যালঘু মোর্চা ও ওবিসি মোর্চারও বৈঠক হবে। যুব, মহিলা, তফসিলি জাতি ও জনজাতি মোর্চার বৈঠক ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে।
বিজেপি সূত্রের খবর, লখিমপুর খেরিতে কৃষক হত্যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনির ছেলে আশিসের যুক্ত থাকার অভিযোগ বিজেপিকে সমস্যায় ফেলেছে। আশিসকে গ্রেফতার করা হলেও মন্ত্রী অজয় এখনও নিজের পদে বহাল। বিরোধীদের চাপ, কৃষকদের ক্ষোভের মুখে বিজেপি নেতৃত্বের চিন্তার কারণ হল, অজয় মিশ্র ব্রাহ্মণ নেতা। এমনিতেই ঠাকুর সম্প্রদায়ের যোগীকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসানোয় উত্তরপ্রদেশের ব্রাহ্মণেরা বিজেপির উপরে ক্ষুব্ধ। তার উপরে মিশ্রকে পদত্যাগ করতে বলা হলে ব্রাহ্মণদের ক্ষোভ এসে পড়তে পারে। দুর্গাপুজোর মধ্যেই গোটা বিষয় নিয়ে অমিত শাহ, নড্ডা, সন্তোষেরা বৈঠক করেছেন। উত্তরপ্রদেশের বিজেপি নেতারা দিল্লিতে এসে আরএসএস নেতৃত্বের সঙ্গেও বৈঠক করে গিয়েছেন।
লখিমপুর খেরির ঘটনার পরেই কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা প্রধানমন্ত্রীর লোকসভা কেন্দ্র বারাণসীতে জনসভা করেন। সেই জনসভায় বিরাট ভিড় দেখে বিজেপি প্রমাদ গুণছে। এখনও পর্যন্ত ঠিক রয়েছে, মোদী নিজে ২৫ অক্টোবর বারাণসীতে জনসভা করবেন। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পেরও উদ্বোধন করবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় ২ লক্ষ লোক জড়ো করতে চাইছে বিজেপি।
কেন্দ্রে মোদী সরকারের মতোই উত্তরপ্রদেশে যোগী সরকারের বিরুদ্ধে কোভিড মোকাবিলায় ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় মোদী সরকারের প্রস্তুতির অভাব প্রধানমন্ত্রীর সুশাসক ভাবমূর্তিতে ধাক্কা দিয়েছে বলে বিজেপি নেতারাও মানছেন। এই ব্যর্থতা ঢাকতে কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপি ১০০ কোটি ডোজ় টিকাকরণ নিয়ে ঢাক পিটিয়ে প্রচারে যেতে চাইছে। রবিবার সকাল পর্যন্ত দেশে ৯৭.৬৫ কোটি ডোজ় টিকা দেওয়া হয়েছে। যদিও এর মধ্যে মাত্র ৩২.১৮ কোটি মানুষের দু’ডোজ় টিকাকরণ হয়েছে। সরকারের অঙ্ক, চলতি সপ্তাহেই ১০০ কোটি ডোজ় টিকাকরণ হয়ে যাবে। বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা, টিকাকরণের সেঞ্চুরি হলেই তার কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে সর্বত্র প্রচার শুরু হয়ে যাবে।