ঠাকুরদা ছিলেন এয়ারফোর্সে। নিজে বেড়ে উঠেছেন আগ্রার বিমানবন্দরের পাশে। ছোট থেকেই এই দুইয়ের প্রভাব পড়েছিল তাঁর উপর। তাই তিনি নিজে চেয়েছিলেন পাইলট হতে। কিন্তু হয়ে গেলেন বিরিয়ানি বিক্রেতা!
যেমন তেমন বিক্রেতা নন, জনপ্রিয় বিরিয়ানি বিক্রেতা। তাঁর দোকানে ভিড় জমান স্বরা ভাস্কর, ম্রুনাল ঠাকুররা।
তিনি সমীর সেবক। থাকেন দেহরাদুনে। মুসৌরী যাওয়ার পথে বহু পর্যটকই তাঁর হাতের রান্না খেয়ে যান।
রোজ ভোর ৫টায় ঘুম ভাঙে তাঁর। কাবাব, ২০ কিলো বিরিয়ানি এবং ৫ কিলো বাটার চিকেন তৈরি করে ফেলেন। রবিবার তাঁর বিক্রি সবচেয়ে বেশি।
অথচ ছোট থেকে পরিকল্পনা কিছু অন্যই ছিল তাঁর। দ্বাদশ শ্রেণি পাশ করার পরই পাইলট হওয়ার প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেছিলেন।
২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত কানাডার এক স্কুলে তিনি প্রশিক্ষণ নেন।
কিন্তু সাম্প্রতিক কালে পাইলটদের চাকরি খুবই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। একের পর এক বিমান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তার উপর দোসর কোভিডের প্রভাব।
ফলে অনেক অভিজ্ঞ পাইলটও বেকার হয়ে পড়েছেন। চাকরির লাইনও লম্বা হয়েছে অনেক।
পাইলটদের সেই লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পর সমীর বুঝেছিলেন, সে দিকে না যাওয়াই ভাল। ফলে পেশা বদলানোর সিদ্ধান্ত।
সমস্ত পেশা ছেড়ে কেন রাঁধুনি হতে গেলেন তিনি? কারণ রান্নার প্রতি ভালবাসা। রান্না করতে ভালবাসেন তিনি। কানাডায় থাকাকালীন নিজের খাবার নিজেকেই বানাতে হত। সেই থেকেই নানা সুস্বাদু পদ বানাতে শিখেছিলেন।
লখনউয়ের খাবার বেশি পছন্দ তাঁর। ছোটবেলায় মা যেভাবে উনুনে রান্না করে খাওয়াতেন সেই স্বাদ আজও তিনি ভুলতে পারেননি। তাই নিজের বাড়িতে কাঠের উনুনে লখনউ স্পেশাল খাবার বানান তিনি।
প্রথম প্রথম তিনি শখেই রান্না করতেন। চিকেন কোর্মা এবং চিকেন বিরিয়ানি। তাঁর রান্না বন্ধুমহলে এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে খাবারের অর্ডার নেওয়া শুরু করে দেন। ২০২০-র সেপ্টেম্বর থেকে তিনি নিজের কেটারিং ব্যবসা শুরু করেন।
প্রতি সপ্তাহেই তাঁর মেনুর তালিকায় কিছু নতুন ডিশ যুক্ত হয়। চিকেন কোর্মা এবং চিকেন বিরিয়ানি ছাড়া বেগুন ভর্তা, মেথি মালাই পনির, বাটার চিকেন, মটন শামি কাবাব, ডাল বুখারার মতো লখনউয়ের গন্ধ মেশানো খাবার বানাতে শুরু করেন।
এই স্বাদের টানে মুম্বই, দিল্লি থেকেও অনেকে ছুটে আসেন তাঁর কাছে। স্বরা, ম্রুনাল ছাড়া প্লে ব্যাক সিঙ্গার অঙ্কুর তিওয়ারি, লেখিকা স্নিগ্ধা পুনম এবং কানাডার জনপ্রিয় ব্লগার মেরিলেন ওয়ার্ড তাঁর হাতের রান্না খেয়ে প্রশংসা করেছেন। লেখিকা স্নিগ্ধা আবার ইয়াকনি পোলাও স্বামীর জন্য দিল্লিতে নিয়েও এসেছেন।
এতদিন অর্ডার নিয়ে নিজের বাড়িতেই রান্না করতেন সমীর। তারপর সেটা পৌঁছে দিতেন। এ বার তিনি নিজের একটা রেস্তোরাঁ খোলার পরিকল্পনা করছেন।
রেস্তোরাঁর রাঁধুনি এবং আরও কিছু কর্মচারীর জন্য ইন্টারভিউ নিচ্ছেন। বাড়ির কাছেই রেস্তোরাঁর জন্য জায়গাও বেছে ফেলেছেন। রেস্তোরাঁর নাম দিয়েছেন ‘না চিজ’।