হেলিকপ্টার থেকে ফুল ছুড়ছেন অতিরিক্ত ডিজি। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে
বুধবার রাজধানী দিল্লি। বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহর। আগের দিন সাধারণের গাড়ি। আর এ দিন পুলিশের। সেই একই ভাঙচুরের ছবি। তাণ্ডবের দৃশ্য। কুশীলব সেই কাঁওয়ার যাত্রীরা। এই যখন শিবভক্তদের নমুনা, তখন মেরঠে আবার এই পুণ্যার্থীদের উপরই হেলিকপ্টার থেকে পুষ্পবৃষ্টি করলেন সেখানকার শীর্ষ পুলিশকর্তারা।
প্রশ্ন উঠেছে, ধর্ম ও জাত পাতের ঊর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষতায় অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে অশোকস্তম্ভের ছাপ দেওয়া উর্দি গায়ে চড়ানো পুলিশকর্তারা কীভাবে একটি ধর্মীয় শোভাযাত্রার উপর পুষ্পবৃষ্টি করতে পারেন। যদিও পুষ্পবৃষ্টির মূল হোতা মেরঠের ডিজিপি ‘ধর্মীয়’ উদ্দেশ্য নেই বলে সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। অন্যদিকে পর পর দু’দিনের তাণ্ডবের পর প্রশ্নের মুখে কাঁওয়ার যাত্রী তথা শিব ভক্তদের আচরণ নিয়েও।
বৃহস্পতিবারের ঘটনার সূত্রপাত এক মহিলাকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনাকে ঘিরে। অভিযোগ, শিবের মাথায় জল ঢালতে যাওয়ার পথে পাপ্পু নামে এক যুবক এক তরুণীর উদ্দেশে কটু মন্তব্য করেন। ওই তরুণী স্থানীয় নরসেনা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এর পরই আরও কয়েকজন কাঁওয়ার যাত্রীকে নিয়ে ওই তরুণীর উপর পাপ্পু চড়াও হয় বলে অভিযোগ। এই নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়।
আরও পড়ুন: শিবভক্তদের ‘রুদ্রমূর্তি’, দাঁড়িয়ে দেখল পুলিশ
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। কিন্তু পুলিশকর্মীরা যেতেই তাঁদের ঘিরে ধরে ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন শিব ভক্তরা। এর পর শুরু হয় তাণ্ডব। বাঁশ, লোহার রড দিয়ে মেরে পুলিশ জিপটি কার্যত ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। পুলিশকর্মীরা তাঁদের গ্রেফতার করা দূরে থাক, বাধা দেওয়ার চেষ্টাও করেননি।
বুলন্দশহরে যখন মহাদেব অনুগামীরা ‘রুদ্রমূর্তি’ ধারণ করে পুলিশের গাড়ি ভাঙছে, মেরঠে আবার পুলিশই কার্যত পুজো করছে সেই শিব ভক্তদের। পূজারির ভূমিকায় পুলিশ কর্তারা। তাও নম নম করে নয়, রীতিমতো আকাশ থেকে পুষ্পবৃষ্টি করে। হেলিকপ্টারে চড়ে কাঁওয়ার যাত্রীদের উপর ফুল ছুড়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন মেরঠের অতিরিক্ত ডিজি প্রশান্ত কুমার, পুলিশ কমিশনার অনীতা মেশ্রম-সহ পদস্থ পুলিশকর্তারা। সেই ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তারপরই সমালোচনায় সরব হয়েছে নানা মহল।
যদিও প্রশান্ত কুমার পরে বলেন, কাঁওয়ার যাত্রীদের স্বাগত জানাতেই ফুল ব্যবহার করা হয়েছে। এটার মধ্যে ধর্মীয় কোনও বিষয় খোঁজা উচিত নয়। সব ধর্ম বা সম্প্রদায়ের উৎসব-অনুষ্ঠানেই সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে পুলিশ। গুরুপরব, ইদ, জৈন উৎসবেও একইভাবে পুলিশ অংশগ্রহণ করে।
আরও পড়ুন: জিন্নাকেই প্রধানমন্ত্রীর পদে চেয়েছিলেন গাঁধী: দলাই লামা
উত্তর ভারতে কাঁওয়ার যাত্রা আসলে এ রজ্যের শিবভক্তদের তারকেশ্বর যাওয়ার মতোই। শ্রাবণ মাসে বাড়ি থেকে বাঁকে গঙ্গাজল নিয়ে হেঁটে হরিদ্বার, গোমুখ বা গঙ্গোত্রীতে জল ঢালতে যান প্রচুর পুণ্যার্থী। কিন্তু সেই পুণ্যার্থীদের বিরুদ্ধেই দেদার গাঁজা খাওয়া, মহিলাদের উত্ত্যক্ত করা, অশালীন ব্যবহার, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মতো নানা অভিযোগ ওঠে।সেই সমর্থকদেরই এমন রাজকীয় অভ্যর্থনা করায় নানা মহল থেকে সমালোচনার মুখে পড়েছে পুলিশ। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করছে,তাদেরই এভাবে স্বাগত জানানো কতটা যুক্তিযুক্ত।