লেফটেন্যান্ট গভর্নর সাক্সেনার আলোচনার আমন্ত্রণ ফেরালেন মুখ্যমন্ত্রী কেজরীওয়াল। ফাইল চিত্র।
মেয়র নির্বাচন ঘিরে আম আদমি পার্টি (আপ) এবং বিজেপি কাউন্সিলরদের সংঘাতের জেরে গত এক মাস ধরে কার্যত অচলাবস্থা চলছে দেশের রাজধানীতে। এই পরিস্থিতিতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে আলোচনার জন্য ডেকেছিলেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভি কে সাক্সেনা। কিন্তু শুক্রবার কেজরী সেই আমন্ত্রণ এড়িয়ে গিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে দিল্লিতে নতুন করে রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা।
কেজরীওয়াল সম্প্রতি সাক্সেনাকে চিঠি লিখে দিল্লির মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের (এমসিডি) প্রিসাইডিং অফিসার এবং অল্ডারম্যানদের মনোনয়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কেজরীর অভিযোগ, বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দিতে লেফটেন্যান্ট গভর্নর সাক্সেনা দিল্লির নির্বাচিত সরকারকে উপেক্ষা করে একতরফা ভাবে বিভিন্ন পদাধিকারী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। গত ৬ জানুয়ারি আপ এবং বিজেপি কাউন্সিলরদের সংঘাতের জেরে প্রথম বার মেয়র নির্বাচন ভেস্তে যাওয়ার পরে সাক্সেনার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েও পাননি মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেই তিনি ওই চিঠি লিখেছিলেন।
এর পর ২৪ জানুয়ারি আবার অশান্তির জেরে ভেস্তে যায় মেয়র নির্বাচন প্রক্রিয়া। এর পর আপের তরফে সুপ্রিম কোর্টে বিষয়টি নিয়ে মামলা করা হয়। এই পরিস্থিতিতে কেজরী-সহ দিল্লির সব মন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন আপের ১০ জন বিধায়ককে আলোচনার জন্য শুক্রবার বিকেল ৪টেয় নিজের বাসভবনে ডেকেছিলেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর সাক্সেনা। কিন্তু কেজরী জানিয়ে দিয়েছেন, পঞ্জাবে অন্য কর্মসূচিতে ব্যস্ত থাকবেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ডিসেম্বরের গোড়ায় পুরভোটে ২৫০ আসনের দিল্লি পুরনিগমে ১৩৪টি ওয়ার্ডে জিতেছিল কেজরীওয়ালের আপ। ক্ষমতাসীন বিজেপি নেমে আসে ১০৪-এ। ৯টি ওয়ার্ডে জেতেন কংগ্রেস প্রার্থীরা। তবে দিল্লির মেয়র নির্বাচনে সেখানকার রাজ্যসভার ৩ জন ও লোকসভার ৭ জন সাংসদ এবং ১৪ জন বিধায়কেরও ভোটাধিকার রয়েছে। যার অর্থ, মোট ২৭৪টি ভোটের মধ্যে যে দল ১৩৮টি ভোট পাবে, সেই দলের প্রার্থীই মেয়র পদে জয়ী হবেন।
অঙ্কের হিসাবে ১৩৪ জন কাউন্সিলর, রাজ্যসভার ৩ জন সাংসদ এবং ১৩ জন বিধায়কের ভোট আপের পক্ষে রয়েছে। অর্থাৎ, সকলে ভোট দিলে ১৫০টি ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচনে আপের প্রার্থীরই জেতা উচিত। অন্য দিকে, বিজেপি পুরভোটে জেতে ১০৪টি আসনে। পরে এক জন নির্দল কাউন্সিলর বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এ ছাড়া লোকসভার ৭ সাংসদ এবং ১ জন বিধায়কের ভোট বিজেপির পক্ষে ছিল। সে ক্ষেত্রে সব মিলিয়ে পুরসভায় এই মুহূর্তে নরেন্দ্র মোদীর দলের শক্তি ১১৩।
কিন্তু অঙ্কের হিসাবে জয় অসম্ভব হলেও পদ্ম শিবির মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ায় নতুন করে অশান্তি তৈরি হয় দিল্লিতে। এই পরিস্থিতিতে গত ৬ জানুয়ারি এবং ২৪ জানুয়ারি পর পর দু’বার পুরসভার অধিবেশনে লেফটেন্যান্ট গভর্নর নিযুক্ত রিটার্নিং অফিসার তথা বিজেপি কাউন্সিলর সত্য শর্মা ১০ অল্ডারম্যানের শপথে উদ্যোগী হলে বাধা দেন আপ কাউন্সিলররা। গন্ডগোলের জেরে ভেস্তে যায় মেয়র নির্বাচন। এই পরিস্থিতিতে নয়া পুরবোর্ড গঠন না হলে দিল্লিতে নাগরিক পরিষেবায় সমস্যা দেখা দেবে বলে অভিযোগ আপ নেতৃত্বের।