ফাইল চিত্র।
‘বহেনজি’ মায়াবতী অন্যান্য রাজ্যে বিজেপিকে সাহায্য করছেন বলে বেশ কিছু দিন ধরেই জল্পনা চলছে রাজনীতির আঙিনায়। এ বার খাস উত্তরপ্রদেশেই বিজেপির সঙ্গে বহেনজির নির্বাচনী বোঝাপড়ার ইঙ্গিত মিলল।
উত্তরপ্রদেশ থেকে রাজ্যসভার ১০টি আসনে নির্বাচন। এসপি একটি আসন জিততে পারবে জেনে একটি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে। কিন্তু একার ক্ষমতায় কোনও আসন জেতার শক্তি না থাকা সত্ত্বেও সোমবার মায়াবতী একটি আসনে প্রার্থী দিয়েছেন। কার্যত বিএসপি-র প্রার্থীর জয় সুনিশ্চিত করতে ৮টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিজেপি। অথচ দু’বছর আগে উত্তরপ্রদেশ থেকে একই পরিস্থিতিতে রাজ্যসভার ১০টি আসনের নির্বাচনে ৯টিতে প্রার্থী দিয়ে বিএসপি-র প্রার্থীকে বিজেপি আটকে দিয়েছিল।
কংগ্রেসের অভিযোগ, রাজ্যসভায় একটি আসনের বিনিময়ে মায়াবতী উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার উপনির্বাচনে বিজেপিকে সাহায্য করবেন। এ হল বিজেপি-বিএসপির মধ্যে ‘চুপি চুপি’ আঁতাত। এর পরেই সমাজবাদী পার্টির সমর্থন নিয়ে বারাণসীর আইনজীবী প্রকাশ বজাজ রাজ্যসভার ভোটে মনোনয়ন জমা দেন। ফলে এ বার ১০টি আসনের জন্য ১১ জন প্রার্থী হওয়ায় ভোটাভুটি হবে। কংগ্রেস, এসপি-র নেতারা মনে করছেন, বিজেপি নিজেদের অতিরিক্ত ভোট দিয়ে বিএসপিকে সাহায্য করলেই দুই শিবিরের আঁতাঁত স্পষ্ট হয়ে যাবে। এ দিকে মায়ার প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করা ১০ জন বিএসপি বিধায়কের মধ্যে ৪ জন আজ তাঁদের সমর্থন প্রত্যাহার করেছেন। আরও দু’জন একই পথে হাঁটবেন বলে তাঁদের দাবি। এই ছ’জন ইতিমধ্যে এসপি শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলেও খবর।
আরও পড়ুন: মোদীর মন্দির তাস, রাহুলের পকোড়া কটাক্ষ
বিজেপি নিজে ন’জনের বদলে ৮ জন প্রার্থী দিয়ে বিএসপিকে একটি আসন ছেড়ে দিতে পারে বলে সোমবারই জল্পনা শুরু হয়েছিল। সোমবার বিএসপি-র হয়ে রামজি গৌতম মনোনয়ন জমা দেন। তখনই প্রশ্ন ওঠে, মায়াবতী কার ভরসায় প্রার্থী দিচ্ছেন? কারণ উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার অঙ্ক অনুযায়ী, নিজেদের ৮ জন প্রার্থীকে জেতানোর পরেও বিজেপির হাতে অতিরিক্ত ভোট থাকবে। শরিক আপনা দলকে সঙ্গে নিয়ে বিজেপি মায়াবতীকে সাহায্য করতে পারে। বিএসপি-র একার জোরে প্রার্থী জেতানোর ক্ষমতা নেই। এসপি শুধু মাত্র রামগোপাল যাদবকেই প্রার্থী করেছে।
আগামী ৩ নভেম্বর উত্তরপ্রদেশের সাতটি বিধানসভা আসনেরও উপনির্বাচন। ২০১৭-র বিধানসভা নির্বাচনে এর মধ্যে ছ’টিই বিজেপি জিতেছিল। কিন্তু হাথরসের ঘটনার পরে বিজেপি দলিত ভোট নিয়ে চিন্তায়। সামগ্রিক ভাবে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়েও কাঠগড়ায় যোগী আদিত্যনাথ। উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের ভারপ্রাপ্ত নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা আগেই মায়াবতীকে ‘বিজেপির অঘোষিত মুখপাত্র’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। এ বার উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস নেতাদের দাবি, বিজেপির হাল খারাপ। বিএসপি উপনির্বাচনে নিজের ভোট বিজেপির ঝুলিতে পাঠাবে। তার জন্য বিএসপি-বিজেপি চুপি চুপি জোটের ঘোষণা করে দিল।
আরও পড়ুন: ভোটে বিহার: মোদীর নাম নিতেও নারাজ পরিযায়ীরা
এ দিকে রাজ্যের রাজনৈতিক সূত্র জানাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ উপনির্বাচনগুলিতে প্রচারের জন্য মরিয়া হয়ে নিজেই মাঠে নেমে পড়েছেন। কিন্তু প্রতিপক্ষ কাউকেই এখনও পর্যন্ত সে ভাবে দেখা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, বিরোধী দলগুলি যে ভাবে অনলাইন প্রচারের উপর নির্ভর করছে, তাতে বিজেপি-র কার্যত সুবিধাই হচ্ছে। জানা গিয়েছে অখিলেশ যাদব ওই সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের কর্মীদের সঙ্গে ভিডিয়ো মাধ্যমে যোগাযোগ করছেন। তাঁর জনসভা কবে কোথায়, এখনও স্থির হয়নি। কংগ্রেসের প্রিয়ঙ্কাকেও উপনির্বাচনের প্রচারে দেখা যাচ্ছে না। তিনি কবে জনসভা করবেন, স্পষ্ট খবর দিতে পারছেন না কংগ্রেস সূত্র। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ৭টি কেন্দ্রেই প্রার্থী দিয়েও মায়াবতী সম্পূর্ণ নীরব। তিনি কোনও প্রচারে নেই। তাঁর হয়ে বিএসপি-র রাজ্যসভার সাংসদ সতীশ মিশ্র প্রচারের দায়িত্ব নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
বিজেপি উত্তরপ্রদেশের ব্রাহ্মণদের ক্ষোভ প্রশমিত করতে রাজ্যসভা নির্বাচনে দুই ব্রাহ্মণ নেতানেত্রীকে প্রার্থী করেছে। ঠাকুর মুখ্যমন্ত্রী যোগীর জমানায় ব্রাহ্মণরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বলে উত্তরপ্রদেশে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। এ ছাড়া দুই ওবিসি-র সঙ্গে এক জন দলিতকেও প্রার্থী করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রের মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী, প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখরের পুত্র নীরজ শেখর, দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অরুণ সিংহ, রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজি ব্রিজ লালকেও জিতিয়ে আনছে বিজেপি।