লালুপ্রসাদ যাদব, তেজপ্রতাপ সিংহ ও মুলায়ম সিংহ
দীর্ঘ দিনের শৈত্য ভেঙে অবশেষে গো-বলয়ের দুই যাদব কুলপতির মধ্যে স্থায়ী সন্ধি হতে চলেছে। মাধ্যম বৈবাহিক কূটনীতি।
লালুপ্রসাদের সাত কন্যার মধ্যে কনিষ্ঠ রাজলক্ষ্মী। তাঁর সঙ্গেই বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হতে চলেছেন মুলায়ম সিংহ যাদবের ভ্রাতুষ্পুত্র স্বর্গীয় রণবীর সিংহ যাদব ও মৃদুলা যাদবের একমাত্র পুত্র তেজপ্রতাপ সিংহ যাদব। ২৭ বছরের তেজপ্রতাপ সদ্য তাঁদের ‘পারিবারিক আসন’, উত্তর প্রদেশের মৈনপুরী থেকে সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন। লোকসভা ভোটে দু’টি আসন থেকে বিজয়ী হওয়ার পর মৈনপুরী আসনটি মুলায়ম ছেড়ে দেন। সেই আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী করেন নিজের নাতি তেজপ্রতাপকে। রাজনৈতিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি প্রাক্-বিবাহ ‘সাগাই’ অনুষ্ঠানটি হবে। আর বিবাহপর্ব সম্পন্ন হবে ফেব্রুয়ারিতে।
সাবেক জনতা দল পরিবারের সদস্যরা যখন নতুন করে একত্র হওয়ার ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছেন, ঠিক সেই সময়ে বিহার ও উত্তর প্রদেশের দুই যাদব পরিবারের মধ্যে বৈবাহিক গাঁটছড়া সার্বিক ‘জনতা’ রাজনীতিকে নতুন অভিমুখ দেবে বলেই মনে করছেন অনেকে। তাঁদের মতে, নব্বইয়ের দশকে এমনই এক বিবাহ প্রস্তাব নিয়ে এক পিতা এসেছিলেন আর এক পিতার কাছে। মেয়ে মিসা ভারতীর জন্য মুলায়ম-পুত্র অখিলেশের হাত ‘ভিক্ষা’ করেছিলেন লালুপ্রসাদ। তখন স্রেফ বংশ-কৌলীন্যের দোহাই দিয়ে সেই সম্বন্ধ ফিরিয়ে দেন মুলায়ম।
ক’মাসের মধ্যেই প্রতিশোধ নেন লালু। ১৯৯৭ সালে দেবগৌড়া সরকার গদিচ্যুত হওয়ার পরে পরেই নতুন নেতা হিসেবে উঠে আসে মুলায়মের নাম। সকলের সমর্থন পেলেও লালু বলেন, মুলায়ম বাদে যে কাউকে তিনি সমর্থন করতে রাজি। লোকসভায় সংখ্যার বিচারে লালুকে উপেক্ষা করার তখন উপায় ছিল না। ফলে প্রধানমন্ত্রী হন ইন্দ্রকুমার গুজরাল। শুধু লালুর জন্য দিল্লির মসনদ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ক্ষোভ মুলায়ম ভুলতে পারেননি। বাড়া ভাতে ভেটো দেওয়ার জন্য প্রকাশ্যেই লালুর সমালোচনা করেন তিনি। সেই থেকেই দুই যাদবকুলপতির মধ্যে ঠান্ডা যুদ্ধ শুরু হয়।
সম্প্রতি মোদী-ঝড়ের তাণ্ডবে সেই শৈত্য কাটতে শুরু করে। রাজনীতির বাধ্যবাধকতা ফের দু’জনকে কাছাকাছি নিয়ে আসে। কেন্দ্রে এবং রাজ্যে রাজ্যে বিজেপি-র স্টিম রোলারের মুখে পড়ে ছত্রখান বিরোধীরা এক মঞ্চে আসতে শুরু করেছেন। রাজনীতির চলতি পরিস্থিতিতে বিহারেই জোটবদ্ধ হতে বাধ্য হন লালু-নীতীশ। এর পরেই দিল্লিতে মিলিত হন সাবেক জনতা পরিবার। মুলায়ম-লালু-নীতীশরা ঠিক করেন, আপাতত জোট বেঁধে সংসদে বিজেপিকে আটকানো হবে। পরে একটি দলে সকলে সামিল হওয়া যায় কিনা তাও বিবেচনা করা হবে।
আর এই সময়ে দুই যাদব নেতার রাজনৈতিক সম্পর্ক বৈবাহিক সম্পর্কে বদলে যাওয়াকে নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। অনকেই বলছেন, তেজপ্রতাপ-রাজলক্ষ্মীর বিবাহ শুধু যাদব দম্পতিকে নতুন জীবনই দেবে না, বিজেপি-বিরোধী রাজনীতিকেও দেবে এক নয়া অভিমুখ।