সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি মার্কন্ডেয় কাটজু। ছবি: সংগৃহীত।
জগৎ বাঙালিময়। কখনও তোপ দাগা হচ্ছে বাঙালি মেয়ের বিরুদ্ধে। কখনও বা সার্বিক বঙ্গীয় সুধীজনই নিশানায়। সমাজমাধ্যমের আপাত নিরীহ ঠাট্টা বা তর্কাতর্কির মোড়কেও ঘুরেফিরে বাংলা ও বাঙালির নাম।
এর পিছনেও কি কাজ করছে বাঙালির মন ও মননে বসত গড়তে উন্মুখ কোনও নির্দিষ্ট রাজনীতি বা মতাদর্শ? এই সন্দেহে ইন্ধন জোগাচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতির ফেসবুক পেজের তরজাও। সুশান্ত সিংহ রাজপুতের অকালমৃত্যুর নেপথ্যে বাঙালি মেয়ের ‘কালা জাদু’র তত্ত্বের অবতারণায় স্বাধীনচেতা বাঙালি মেয়েকে ধ্বস্ত করাই হয়ে ওঠে ফেসবুক-টুইটারের বিনোদন। এ বার অন্য আলোচনা প্রাক্তন বিচারপতি মার্কন্ডেয় কাটজুর ফেসবুক পেজে— শুধু বাঙালিরাই জল খায়। পান করে না। বাঙালিরা আ বলতে পারে না। অ বলে। জ-অ-ল। রাতদিন রসগোল্লা খেয়ে খেয়েই হাঁ করতে পারে না।
নেটিজেনদের অভিজ্ঞতা, ইতিমধ্যে নানা রক্ষণশীল ও বেফাঁস মন্তব্য করে ফেসবুকে বাঙালিদের কাছেই সব থেকে প্রতিরোধের মুখে পড়েন কাটজু। কখনও সমকামীদের প্রতি বিষোদ্গার করে পিছু হটেছেন। এমনকি, হাথরসের ধর্ষকদের সাজার দাবি করেও পুরুষমানুষ এমন ভুল করতে পারে বলে কাটজুর প্রোফাইল থেকে পোস্ট হয়েছিল বলে অভিযোগ। সে পোস্ট মুছলেও স্ক্রিনশট রয়েছে। তখনই কাটজুর সমালোচনার পুরোভাগে নামেন বহু বাঙালি। যা দেখা যাচ্ছে, কয়েক মিনিট অন্তর বাংলা ও বাঙালি বিষয়ক কিছু পোস্ট ছাড়া কাটজুর পেজ কার্যত অচল। বাঙালিদের নিয়ে চুটকি লিখছেন, মুছছেন। আবার তাঁর ঠাকুরদা কৈলাসনাথ কাটজু পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল থাকার সময়ের নানা ছবিও তিনি পোস্ট করে চলেছেন।
আরও পড়ুন: নির্ভয়ার ধর্ষকদের আইনজীবীই সওয়াল করবেন হাথরসের অভিযুক্তদের হয়ে
আরও পড়ুন: লিঙ্গ-নিরপেক্ষ শৌচালয়ের ভাবনা সমস্ত বিমানবন্দরে
কাটজুর বাঙালি বিষয়ক পোস্টে পাল্টা রসিকতা বা কটু কথাও দেখা যাচ্ছে। ‘‘এই ধরনের রসিকতার ফাঁদে পা না-দেওয়াই ভাল,’’ বলছেন সমাজতত্ত্বের শিক্ষক উপল চক্রবর্তী। ‘‘কারণ, ফেসবুক অ্যালগরিদমের খেলা। কী বলা হল, তার থেকেও কোন শব্দটা বার বার বলা হল তার হিসেবেও একটা নির্দিষ্ট ছকের প্রচার সুকৌশলে বাড়ানো সম্ভব।’’ সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন খুবই সক্রিয় বিজেপির ঘনিষ্ঠ-শিবির। উপলবাবুর মতে, ‘‘তাই ফেসবুকে সক্রিয় বামমনস্ক, অসাম্প্রদায়িক বা হিন্দুত্ববাদ বিরোধী বাঙালিকে আক্রমণ করাও একটা গোষ্ঠীর লক্ষ্য হতে পারে। এর জন্য কাটজু বা কারও প্রোফাইলে ঘাপটি মেরে উসকানির চেষ্টাও অসম্ভব নয়।’’