স্বচ্ছ শহর হয়ে ওঠার প্রতিযোগিতায় নেমেছে শিলচর। চলছে প্রচার, সভা-সমিতি। একে তুঙ্গে তুলতে রবিবার ম্যারাথনের আয়োজন করেছে জেলা দুর্যোগ মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ ও শিলচর পুরসভা। ওই উদ্যোগ সফল করতে জেলাশাসক এস বিশ্বনাথন নিজে মাঠে নেমেছেন।
সুরাটের মতো মহামারী দেখা দেবে না তো? কিছু দিন আগে এমনই আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল শিলচরে। সুরাট এখন দেশের স্বচ্ছ, ঝকঝকে শহরগুলির একটি। শিলচরও ওই পথে এগোতে চায়। তবে গুজরাতের শহরটিকে সে জন্য কম প্রাণ দিতে হয়নি। ঘরে ঘরে মারণব্যধি ছড়ানোর পর প্রশাসন কড়া ভূমিকা গ্রহণ করে। সেই জায়গায় শিলচর ব্যতিক্রমী। জঞ্জালে মহামারী ছড়ানোর আগেই বরাক উপত্যকার প্রধান শহর স্বচ্ছ হয়ে ওঠার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। স্লোগান লিখেছে— ‘মাই সিটি মাই রেসপনসিবিলিটি।’
ওই পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে ‘স্বচ্ছ সর্বেক্ষণ’ প্রতিযোগিতা। কেন্দ্র ২০১৭ সালে যে ৫০০ শহরে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে, শিলচরও তাতে সামিল। অসম থেকে মাত্র ৪টি শহরকে এ বার বেছে নেওয়া হয়— গুয়াহাটি, শিলচর, ডিব্রুগড় ও নগাঁও।
বিভিন্ন পর্বে সে জন্য নম্বর বরাদ্দ রয়েছে। কতটা স্বচ্ছ এই শহর, তা দেখার আগে মানুষের সচেতনতার মাত্রাও দেখা হচ্ছে। স্বচ্ছতা অ্যাপ মোবাইলে ডাউনলোড করে জঞ্জাল নিয়ে অভিযোগ জানানো যায়, এ ব্যাপারে শহরের মানুষ কতটা অবগত, নম্বর রয়েছে তাতেও। অ্যাপের ব্যবহারও প্রতিযোগিতায় বিচার্য বিষয়। তাই জেলাশাসক, পুরপ্রধানরা এত দিন জঞ্জাল নিয়ে কারও অভিযোগ প্রত্যাশা না করলেও এখন প্রচার করে বেড়াচ্ছেন, অ্যাপ ডাউনলোড করে কোথাও জঞ্জাল দেখলেই ছবি তুলে অভিযোগ জানান।
তাতে ফলও মিলছে। জেলাশাসক বিশ্বনাথন জানিয়েছেন, অভিযোগ পেলেই দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এর প্রভাব পরবর্তীতেও থেকে যায়। আগামী তিন মাসে শিলচরের চেহারা বদলে যাবে, এমনই দাবি জেলাশাসকের। তাতে যে চ্যালেঞ্জও কম নয়, সে কথার উল্লেখ করেন পুরপ্রধান নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর। তিনি বলেন, ‘‘স্বচ্ছতার প্রধান শর্ত, যেখানে-সেখানে আবর্জনা ফেলা যাবে না। এমনকী নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় জমিয়ে রেখেও শহরকে সুন্দর করে তোলা যায় না।’’ তিনি জানান, একটিই উপায় রয়েছে। প্রতিটি বাড়ি-দোকান থেকে পুরসভা জঞ্জাল সংগ্রহ করবে। সেই হিসেবে শহরকে চারটি জোনে ভাগ করে টেন্ডার ডাকা হয়। চারটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু শুরুতেই পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের বরাতপ্রাপ্ত আদর্শ সংস্থা তাদের অক্ষমতা প্রকাশ করে। কিছু দিন কাজ করার আজ একই কথা জানিয়ে দেয় সূর্যোদয় সংস্থাও।
জেলাশাসক, পুরপ্রধান অবশ্য জানিয়ে দেন— ওই সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই তাঁরা এগিয়ে যাবেন। কয়েক দিনের মধ্যেই নতুন করে ওই দুই জোনের জন্য টেন্ডার ডাকা হবে। শহরের শৌচাগারগুলিকে মেরামত করা হচ্ছে। প্রতিটি শৌচাগারের সামনে প্রয়োজনীয় তথ্য-সহ বোর্ড টাঙানো হবে।
স্বচ্ছতা সচেতনতার জন্য আজ গোলদীঘি মলে শিশুদের আঁকা প্রতিযোগিতা হয়। শতাধিক ছাত্রছাত্রী তাতে অংশ নেয়। নীহারবাবুর দাবি, শিশুদের মনে স্বচ্ছতার ভাব জাগিয়ে তোলা গেলে এক দিকে সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। অন্যদিকে, তাদের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়বে অভিভাবকদেরও।
সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য চলছে পথনাটক। ফেসবুকে ঝড় তোলার আশায় রয়েছেন জেলা দুর্যোগ মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের প্রোজেক্ট অফিসার শামিম আহমেদ লস্কর। প্রতি দিন এ নিয়ে কথা বলছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে কথা বলতে যাচ্ছেন কলেজে-কলেজে।
ট্র্যাঞ্চিং গ্রাউন্ড নিয়ে যে সমস্যা ছিল, তাও মিটতে চলেছে বলে দাবি করেন নীহারবাবু। তিনি জানান, রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট করা গেলে কোথায় এত আবর্জনা ফেলা হবে, সে প্রশ্ন মিটে যাবে। প্ল্যান্ট তৈরির জন্যও টেন্ডার ডাকা হয়েছে। দু’টি দরপত্র জমা পড়েছে। এখন বিভিন্ন বিষয় তুলনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পুরসভার এ নিয়ে কথা হচ্ছে ওএনজিসি-র সঙ্গেও। নীহারবাবুর দাবি, ওই সংস্থা শহরে কিছু শৌচালয় তৈরিতে রাজি হয়েছেন। শ্মশানে একটি বৈদ্যুতিক চুল্লিও তারা করে দেবে। ‘ইন্ডিভিজুয়াল হাউসহোল্ড ল্যাট্রিন’ তৈরিতেও তাদের রাজি করানোর চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া, পাঁচটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জঞ্জাল নিষ্কাশনে গাড়ি দিতে সম্মত হয়েছে।
বীথিকা দেব পুরপ্রধান থাকার সময় মানুষের ‘সিভিক সেন্স’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। নীহারবাবু কিছু দিন আগেও একই সুরে বলেছিলেন, ‘‘মানুষের অভ্যাস বদলানো না গেলে শত সাফাইয়েও লাভ হবে না।’’ এ দিন অবশ্য তিনিই জানিয়েছেন, শিলচরের মানুষের অভ্যাস দ্রুত বদলাচ্ছে।