মরাঠা বিক্ষোভে উত্তাল মুম্বই। বুধবার।
শেষমেশ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার আশ্বাস দিলেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস। আর শিক্ষা ও সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণের দাবিতে টানা দু’দিনের আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত ইতি টানল মরাঠা ক্রান্তি মোর্চা। বুধবার বিকেলে বন্ধ প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করা হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে। ফলে আপাতত স্বস্তি ফিরেছে মহারাষ্ট্রের পুলিশ-প্রশাসনে। তবে এ দিনও মরাঠা বিক্ষোভে অগ্নিগর্ভ ছিল প্রায় গোটা রাজ্য। বাস ভাঙচুর, বাস ও ট্রেনে পাথর ছোড়া ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টার ঘটনা ঘটল রায়গড়ে। মুম্বইয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর লাঠি চালাল পুলিশ। ছুড়ল কাঁদানে গ্যাসের শেল। আত্মঘাতী হলেন আরও এক বিক্ষোভকারী। চলতি মরাঠা বিক্ষোভে এই নিয়ে আত্মঘাতী হলেন ৩ জন।
তবে বিক্ষোভকারীদের চাপে যে তিনি তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসার আশ্বাস দিচ্ছেন না, সম্ভবত তা বোঝাতে এ দিন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা (মহারাষ্ট্র সরকার) তো মরাঠা সম্প্রদায়ের সংরক্ষণের জন্য আইন প্রণয়ন করেছি ইতিমধ্যেই। কিন্তু বম্বে হাইকোর্ট তার ওপর স্থগিতাদেশ দিয়ে রেখেছে।’’
‘মরাঠা ক্রান্তি মোর্চা’র বিক্ষোভকারীরা বুধবার সকাল থেকেই মুম্বইয়ে দোকানপাট খুলতে বাধা দেন। রায়গড়ে জোর করে দোকানপাট বন্ধ করে দেন বিক্ষোভকারীরা। অবরোধ করা হয় মুম্বইয়ের সঙ্গে মহারাষ্ট্রের বাকি অংশের সংযোগরক্ষাকারী ইস্টার্ন এক্সপ্রেসওয়ে। নবি মুম্বই ও পানভেলে বন্ধের ডাক দিয়েছে বিক্ষোভকারীদের আরেকটি গোষ্ঠী ‘সকাল মরাঠা সমাজ’। বাস ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘঠনা ঘটে পুণে-মুম্বই এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন জায়গায়। অবরোধ করা হয় সায়ন-পানভেল জাতীয় সড়কও। অওরঙ্গাবাদের দেওগাঁও রঙ্গারিতে বিষ খেয়ে যে বিক্ষোভকারী মঙ্গলবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন, বুধবার হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর নাম জগন্নাথ সোনাভনে।
বিক্ষোভকারীরা এ দিন সকালে নবি মুম্বইয়ে সরকারি বাস লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়েন। বাস থামিয়ে ভাঙচুর করা হয়। রায়গড় জেলার কামোথেতে জোর করে দোকানপাট বন্ধ করিয়ে দিয়ে বাইক মিছিল করেন বিক্ষোভকারীরা।
কৃষকদের মিছিলে থমকে গিয়েছিল গোটা মুম্বই। এ বার শিক্ষা ও সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণের দাবিতে মরাঠাদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে অওরঙ্গাবাদ, কোলাপুর, বুলধানা, আকোলা, পারালি, ওয়াসিম ও মুম্বই-সহ প্রায় গোটা মহারাষ্ট্রই। যত সময় গড়াচ্ছে, বিক্ষোভ ততই ছড়িয়ে পড়ছে মহারাষ্ট্রের এক জেলা থেকে অন্য জেলায়।
মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীদের হাতে নিগৃহীত হন শিবসেনা সাংসদ চন্দ্রকান্ত খৈরে ও কংগ্রেসের বিধান পরিষদ সদস্য সুভাষ জামবার। তাঁদের গাড়ি ভাঙচুর করা হল। দীর্ঘ ক্ষণ অবরোধ করা হল অহমদনগর-অওরঙ্গাবাদ জাতীয় সড়ক ও অওরঙ্গাবাদ-পুণে জাতীয় সড়ক। পোড়ানো হল ট্রাক, সরকারি বাস, গাড়ি-সহ গোটা ১২ যানবাহন। মরাঠাদের জন্য সংরক্ষণের দাবিতে সোমবার গোদাবরী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হন এক জন। এ দিন আত্মহত্যার চেষ্টা করেন আরও দুই বিক্ষোভকারী।
আরও পড়ুন- সংরক্ষণের আঁচে নাকাল বিজেপি
আরও পড়ুন- মরাঠা সংরক্ষণের দাবিতে জ্বলছে মহারাষ্ট্র, সাংসদ-বিধায়ককে মার, অবরোধ
শিক্ষা ও সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণের দাবিতে মরাঠা ক্রান্তি মঞ্চের ‘জলসমাধি (সলিলসমাধি) অভিযান’-এ সোমবার কোলাপুরের কাইগাঁও টোকায় গোদাবরী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হন ২৮ বছর বয়সী কাকাসাহেব দত্তাত্রেয় শিন্ডে। যোগেশ শিরকে নামে এক বিক্ষোভকারী জানিয়েছেন, কাকাসাহেবের আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনায় প্ররোচনা দিয়েছিল পুলিশই।
কাকাসাহেবের অন্ত্যেষ্টিতে আসার পথেই আক্রান্ত হন শিবসেনা সাংসদ চন্দ্রকান্ত খৈরে ও কংগ্রেসের বিধান পরিষদ সদস্য সুভাষ জামবার। তাঁদের গাড়ি রুখে তা ভাঙচুর করা হয়। দু’জনেই পরে বিক্ষোভকারীদের হাতে নিগৃহীত হন। কোলাপুরের দশেরা চকে এ দিন সকাল থেকেই ধর্নায় বসেন বিক্ষোভকারীরা। অবরোধ করা হয় অহমদনগর-অওরঙ্গাবাদ জাতীয় সড়ক। জাতীয় সড়কে পুলিশের গাড়ি, বাস-সহ প্রায় গোটা ১২ গাড়ি ভাঙচুর করা ও পোড়ানো হয়।