ফাইল চিত্র।
এ যাত্রায় রাজ্যসভার শিকে ছিঁড়ল না কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় বিজেপির একমাত্র সংখ্যালঘু মুখ মুখতার অব্বাস নকভির। ফলে আগামী দিনে তিনি কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রক, এমনকি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাতে থাকবেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। সাধারণত রাজ্যসভার সদস্য, কোনও মন্ত্রীর সাংসদ পদের মেয়াদ শেষ হলে তাঁকে ছয় মাসের মধ্যে সংসদের কোনও একটি কক্ষ থেকে জিতিয়ে আনতে হয়। এ যাত্রায় নকভি রাজ্যসভার টিকিট না পাওয়াতেই বেশ কয়েকটি সম্ভাবনা সামনে চলে এল।
আগামী ১০ জুন ১৫ রাজ্যের ৫৭টি আসনে রাজ্যসভার ভোট হতে যাচ্ছে। আজই ছিল সেই নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব আজ কোনও তালিকা প্রকাশ না করায় স্পষ্ট হয়ে যায়, এ যাত্রায় রাজ্যসভায় ফিরে আসা হচ্ছে না নকভির। তবে বিজেপির একাংশের মতে, পরিবর্তে নকভি-কে আরও বড় কোনও দায়িত্ব দেওয়ার কথা ভাবছে দল। সামনেই উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন। দলের একটি সূত্রের মতে, নকভির মতো সংখ্যালঘু মুখকে ওই পদে বসানোর কথা ভাবা হয়েছে। অথবা, আগামী দিনে রাজনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ কোনও রাজ্যের রাজ্যপালও করা হতে পারে তাঁকে।
আবার বিজেপির একটি অংশের মতে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার একমাত্র সংখ্যালঘু মুখকে এখনই সাংবিধানিক পদে ঠেলে দেওয়ার পরিবর্তে তাঁকে লোকসভার উপনির্বাচন থেকে জিতিয়ে আনার কথা ভাবতে পারে দল। আগামী ২৩ জুন উত্তরপ্রদেশের দু’টি লোকসভা আসনে উপনির্বাচন রয়েছে। যার মধ্যে একটি রামপুর আসন। সমাজবাদী পার্টির বাহুবলী নেতা আজম খান এ বছরের বিধানসভা নির্বাচনে জেতায় রামপুর লোকসভা আসন থেকে পদত্যাগ করেন। বিজেপি সূত্রের মতে, সেই আসন থেকেই নকভিকে জিতিয়ে আনার জন্য যোগী আদিত্যনাথকে দায়িত্ব দিয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সূত্রের মতে, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত রামপুরে আজম খানের মৌরসিপাট্টা ভাঙতে বিজেপির তুরুপের তাস হতে পারেন মুসলিম মুখ নকভি।
নকভির ভবিষ্যত কী হবে— তা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও, একটি বিষয় আজ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে এখন সংসদের উভয় কক্ষে বিজেপির কোনও সংখ্যালঘু সাংসদ রইলেন না। অথচ সদ্য সমাপ্ত বাজেট অধিবেশনে নকভি ছাড়াও এম জে আকবর ও বিজেপি মুখপাত্র সৈয়দ জাফর ইসলাম- মোট তিন জন সাংসদ ছিলেন। তিন জনের কাউকেই রাজ্যসভায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হয়নি। তাঁদের পরিবর্তে অন্য কোনও সংখ্যালঘু মুখকেও বেছে নেওয়া হয়নি।পরিস্থিতি যা তাতে বর্তমানে গোটা এনডিএ শিবিরে একজন মাত্র মুসলিম সাংসদ রয়ে গেলেন। তিনি হলেন, লোক জনশক্তি পার্টির নেতা ও বিহারের খাগাড়িয়া আসনের সাংসদ মেহবুব আলি কাইজ়ার। ওই তিন মুসলিম প্রার্থীদের মতোই রাজ্যসভায় ফিরিয়ে আনা হয়নি বিনয় সহস্রবুদ্ধে ও দলের সম্পাদক দুষ্মন্ত গৌতমকেও।
রবিবার প্রথম তালিকায় ১৮ জনের পর গতকাল প্রায় মাঝরাতে আরও চার প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করে বিজেপি নেতৃত্ব। তাতে মধ্যপ্রদেশ থেকে টিকিট দেওয়া হয়েছে সুমিত্রা বাল্মীকিকে।তিনি পিছিয়ে পড়া শ্রেণির প্রতিনিধি। এ ছাড়া, কর্নাটক থেকে লহর সিংহ সোরিয়া ও উত্তরপ্রদেশ থেকে মিথিলেশ কুমার ও আর কে লক্ষণকে টিকিট দিয়েছে দল। এর মধ্যে লক্ষণ বিজেপির ওবিসি শাখার জাতীয় সভাপতি। মূলত উত্তরপ্রদেশের ওবিসি ভোটব্যাঙ্কের কথা ভেবেই লক্ষণকে প্রার্থী করা হয়েছে। পাশাপাশি, যোগী-রাজ্যের দলিত জনসংখ্যার কথা মাথায় রেখে দলিত সমাজের প্রতিনিধি মিথিলেশ কুমারকে প্রার্থী করেছে দল। বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, আগের ছ’জন প্রার্থীর মধ্যে একজনও দলিত ছিলেন না। তাই সমাজবাদী পার্টির প্রাক্তন সাংসদ মিথিলেশকে বেছে নিয়েছে দল।
উত্তরপ্রদেশে এ যাত্রায় এগারোটি রাজ্যসভার আসনে ভোট হতে চলেছে। বিধানসভার অঙ্কে বিজেপির সাত ও সমাজবাদী পার্টির তিন জন প্রার্থীর জয় নিশ্চিত। একাদশ আসনটি কে জিতবে, তা অনেকাংশেই নিশ্চিত হবে নির্দলদের সমর্থনের ভিত্তিতে। বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, দলিত প্রার্থী মিথিলেশকে দাঁড় করানোয় অন্য দলগুলির সমর্থন পাওয়ার প্রশ্নে তুলনামূলক ভাবে এগিয়ে থাকবেন তিনি। অন্যদিকে, কর্নাটকের লহর সিংহ সোরিয়া ঘোষিত লালকৃষ্ণ আডবাণী বিরোধী ও নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ। কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মধ্যে দীর্ঘ সময় যোগসূত্রের কাজ করেছেন সোরিয়া। তাঁকে প্রার্থী করে ইয়েদুরাপ্পা শিবিরকে ইতিবাচক বার্তা দেওয়া সম্ভব হল বলেই মনে করছে দল।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।