ছবি: সংগৃহীত।
কেন্দ্রে তাঁর সরকার ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন প্রকাশ কারাট। আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু (১২৩) চুক্তিকে ঘিরে। সেই তিক্ততার পর্বের ঊর্ধ্বে উঠেই বিজেপি-বিরোধিতায় বামেদের সমর্থন চাইলেন মনমোহন সিংহ। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর এমন আহ্বান সিপিএমের অন্দরে চলতি বিতর্কে আরও ইন্ধন জোগাল!
বাম-শাসিত কেরলে গিয়ে মনমোহন প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘বামেরা কী চায়? জাতীয় স্তরে তারা কি কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে পথ চলবে? নাকি কংগ্রেস এবং বিজেপি থেকে সমদূরত্বের রাস্তাই ধরে থাকবে?’’ ঠিক এই প্রশ্নেই এখন সিপিএমের অন্দরে বিতর্ক তীব্র। গত পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক লাইন উদ্ধৃত করে সমদূরত্বের পথের পন্থী কারাটেরা। আর সীতারাম ইয়েচুরির নেতৃত্বে দলের অন্য অংশ মনে করে, বিজেপি-ই এখন বড় বিপদ। তার মোকাবিলায় কংগ্রেস-সহ সব ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে একজোট হয়েই লড়াই করতে হবে। হায়দরাবাদে আগামী এপ্রিলে দলের পরবর্তী পার্টি কংগ্রেসের আয়োজন এই বিতর্ককে সঙ্গী করেই এগোচ্ছে।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অবশ্য প্রশ্ন তুলেই শুধু থামেননি। তিনি বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয়, বিজেপি এবং তাদের জনস্বার্থ-বিরোধী নীতির প্রতিবাদে বামেরা যদি আন্তরিক হয়, তা হলে কংগ্রেস নেতৃত্বের পাশে তাদের থাকা উচিত। বিজেপি-র বিভাজনমূলক রাজনীতিকে পরাস্ত করতে জাতীয় স্তরে কংগ্রেস ও বামের লড়াই হওয়া উচিত একযোগে।’’ কেরলের বাম এবং কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নানা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা রমেশ চেন্নিথালা যে ‘পদয়োরুক্কম’ কর্মসূচি নিয়েছেন, কোচিতে তার সূচনা করতে গিয়েই এমন আহ্বান জানিয়েছেন মনমোহন। সেই সঙ্গেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যওয়াড়ি পরিস্থিতির ফেরে দু’দলে লড়াই হতেই পারে। কিন্তু বিজেপি নামক প্রতিপক্ষের মোকাবিলায় সর্বভারতীয় স্তরে কংগ্রেস-বামের এক ছাতার নীচে আসা উচিত।
মনমোহনের আহ্বান শুনে ইয়েচুরি শিবির প্রত্যাশিত ভাবেই উৎসাহিত। দলের সাধারণ সম্পাদকের ঘনিষ্ঠ এক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যের কথায়, ‘‘ইউপিএ-১ সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে আমরা অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলাম। তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী কিন্তু এখন বৃহত্তর বিপদের সময়ে সেই বিরোধের কথা মনে না রেখে উদারতা দেখিয়েছেন। ওঁর বাস্তবোচিত আহ্বানে সাড়া দেব কি না, সেটা পার্টি কংগ্রেসে আমাদেরই ঠিক করতে হবে।’’
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, যে কেরলে গিয়ে মনমোহন বামেদের কাছে সমর্থন চেয়েছেন, সেই রাজ্যের সিপিএমের ভিতরেও এখন ধীরে ধীরে কংগ্রেসের প্রতি সুর নরম হচ্ছে। সিপিএম এবং বিজেপি কাউন্সিলরদের মধ্যে সংঘর্ষে ঘাড়ে ভাল রকম চোট পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিরুঅনন্তপুরমের মেয়র ভি কে প্রশান্ত। এই পুরসভা রয়েছে বামেদের হাতেই। আহত প্রশান্তকে রবিবার হাসপাতালে দেখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেছেন, আরএসএসের হিংসার রাজনীতি মেনে নেওয়া হবে না। দোষীরা কড়া শাস্তি পাবে। এই ঘটনার উদাহরণ দিয়েই রাজ্য সিপিএম নেতৃত্বের একাংশ বলছেন, আরএসএস-বিজেপি যে কংগ্রেসের চেয়ে অনেক বড় বিপদ, প্রতিদিন তা টের পাওয়া যাচ্ছে।
গৃহযুদ্ধ উস্কে আসলে কারাটকেই চাপে ফেলেছেন মনমোহন!