প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যদের কঠিন প্রশ্নবাণের মুখে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেলের রক্ষাকর্তা হয়ে দাঁড়ালেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
কী ভাবে নোট বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, কবে নেওয়া হয়েছিল আর তা কী ভাবে কার্যকর করা হয়েছে, সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা বুধবার এমন একের পর এক প্রশ্নে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরকে জেরা করতে শুরু করে দিলে তাঁদের প্রশ্নোত্তরের মধ্যেই ঢুকে পড়েন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী।
মনমোহন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘এ সব প্রশ্নের উত্তর দিতে যাবেন না।’’ প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী হওয়ার আগে দীর্ঘ দিন ধরে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দায়িত্বে থাকা মনমোহন এ দিন উর্জিতকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘ওই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে না। ওতে সমস্যা আরও বাড়বে। পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাজকর্মও তাতে ব্যাহত হবে। নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের যে ‘গুরুত্বহীন ভূমিকা’ সকলের সামনে এসে গিয়েছে, তা আরও প্রকট হয়ে উঠবে।’’
অর্থ সংক্রান্ত সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে এ দিন কংগ্রেস সাংসদ দিগ্বীজয় সিংহ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরকে প্রশ্ন করেন, ‘‘এখন টাকা তোলার ক্ষেত্রে যে কড়াকড়ি চলছে বা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তুলে নেওয়া হলে কি পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে উঠবে?’’ এই প্রশ্নের পর যখন আরবিআই গভর্নর উর্জিত পটেল তার উত্তর দিতে যাচ্ছেন, তখনই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ তাঁকে থামিয়ে দেন। বলেন, ‘‘এই প্রশ্নটার জবাব দেবেন না।’’
ও দিকে, এ দিন আরবিআই গভর্নরকে সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যদের একের পর এক প্রশ্নে এমন অনেক তথ্য উঠে আসে, যার থেকে বোঝা যায়, নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভূমিকাটা ঠিল একেবারেই গৌণ।
জানা যায়, কালো টাকার বিরুদ্ধে সরকারি অভিযানের কথা অনেক আগেই জানতেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (আরবিআই) গভর্নর উর্জিত পটেল। গত বছরের জানুয়ারিতেই। এও জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর ‘যুদ্ধঘোষণা’র পর পুরনো ৫০০ আর ১০০০ টাকার নোট বাবদ মোট কত টাকা ব্যাঙ্কে ঢুকল, সেটাও নাকি তেমন জানা নেই আরবিআইয়ের গভর্নরের!
বুধবার অর্থ সংক্রান্ত সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির সামনে এমনটাই জানালেন আরবিআইয়ের গভর্নর। সূত্রের খবর, এ দিন সংসদীয় প্যানেলকে আরবিআইয়ের গভর্নর উর্জিত পটেল জানিয়েছেন, নোট-বাতিল প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে জানুয়ারিতে। এর আগে উর্জিতই বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর ‘যুদ্ধঘোষণা’র (৮ নভেম্বর) ঠিক এক দিন আগে বাজার-চলতি ৫০০ আর ১০০০ টাকার নোট বাতিলের সরকারি ‘পরামর্শ’ এসেছিল তাঁর কাছে!
আরও পড়ুন- বড় পদক্ষেপ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের, এ বার সেনার সব হেলমেট বুলেটপ্রুফ
আরবিআইয়ের গভর্নর এ দিন কংগ্রেসের বীরাপ্পা মইলির নেতৃত্বাধীন সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির প্যানেলের সামনে এও বলেছেন, ‘‘প্রায় একই রকম ভাবে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসেও তদানীন্তন কেন্দ্রীয় সরকার বাজার থেকে আচমকাই চালু ১০০০ টাকার নোট তুলে নিয়েছিল।’’
শুধু আরবিআইয়ের গভর্নরই নন, সূত্রের খবর, অর্থ মন্ত্রকের পদস্থ কর্তারাও এ দিন সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যদের জানিয়েছেন, নোট-বাতিলের সিদ্ধান্তের পর ঠিক কত টাকা ব্যাঙ্কে ফিরে এসেছে, সে ব্যাপারে তাঁরা অন্ধকারেই রয়েছেন। পুরনো ৫০০ আর ১০০০ টাকার যে নোটগুলি বাতিল করা হয়েছে, তার মোট মূল্য ১৫ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা। তার কতটা ব্যাঙ্কে ফিরে এসেছে গত ৮ নভেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত, তা এখনও সরকারি ভাবে জানায়নি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। সংবাদমাধ্যমের খবর, তা ৯৭ শতাংশ হতে পারে।
কী পরিমাণ নতুন ৫০০ আর ১০০০ টাকার নোট বাজারে ছাড়া হয়েছে, এ দিন সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির সামনে তা অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন আরবিআইয়ের গভর্নর। বলেছেন, ‘‘৯ কোটি ২০ লক্ষ টাকার নতুন ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট এখনও পর্যন্ত বাজারে ছাড়া হয়েছে।’’ তবে ব্যাঙ্কের গ্রাহক পরিষেবা কত দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হবে, তা খোলসা করে বলতে পারেননি উর্জিত পটেল। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার হাল-হকিকৎ জানাতে আরবিআইয়ের গভর্নর পরশু, শুক্রবার হাজির হবেন কংগ্রেসের কেভি থমাসের নেতৃত্বাধীন আরও একটি সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যদের সামনে।