মণীশ তিওয়ারি ও ভি কে সিংহ
চার বছর আগে ‘সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা’র এক খবর নতুন করে রক্তচাপ বাড়াল নয়াদিল্লির। পুরনো প্রসঙ্গ টেনে এনে বিতর্কটা বাধিয়েছেন কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারি। অবস্থা এমনই যে কংগ্রেস ও বিজেপি দুই দলই আজ তড়িঘড়ি এক সুরে মণীশের বক্তব্য নস্যাৎ করতে ময়দানে নেমে পড়েছে।
বিষয়টি সামনে এসেছিল ২০১২-র অগস্টে। খবর বেরিয়েছিল, সে বছরই জানুয়ারির এক রাতে সেনাবাহিনীর দু’টি দল রাইসিনা হিলের দিকে এগোচ্ছিল। তখনই এই খবরের সত্যতা খারিজ করেছিল মনমোহন সিংহের সরকার। কিন্তু এত দিন পরে এই প্রথম কোনও রাজনীতিক সেই খবরকে সত্য বলে দাবি করায় নতুন করে প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি ২০১২-তে ক্ষমতা দখল করতেই দিল্লির দিকে হানা দিয়েছিল সেনাবাহিনী?
যাঁর নেতৃত্বে ওই ‘সেনা অভিযান’ হয়েছিল বলে খবরে দাবি করা হয়েছিল, তিনি হলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান ভি কে সিংহ। এখন তিনি নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিদেশ প্রতিমন্ত্রী। ফলে মণীশের দাবি শাসক দলের পক্ষে যথেষ্ট অস্বস্তির। তবে বিড়ম্বনা বেশি কংগ্রেসেরই। কারণ, কেন্দ্রে তখন কংগ্রেসেরই সরকার। আর মণীশ ছিলেন মনমোহন মন্ত্রিসভারই সদস্য। যে কারণে কংগ্রেস ও বিজেপি উভয়েই আজ এই ঘটনার সত্যতা খারিজ করতে আসরে নামিয়েছে দলের নেতা-মুখপাত্রদের।
একটি বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে মণীশ দাবি করেন, ‘‘সেই সময় আমি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলাম। ২০১২ সালের খবরটা দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য।’’ সে সময় সেনাপ্রধান ভি কে সিংহের বয়স বিবাদ নিয়ে সরকারের সঙ্গে তীব্র সংঘাত চলছিল। আর ঠিক ওই সময়ই প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ও সরকারকে না জানিয়ে জানুয়ারির এক রাতে হরিয়ানার হিসার ও আগরা থেকে সেনার দু’টি শক্তিশালী দল দিল্লির দিকে ‘অভিযান’ শুরু করেছিল বলে খবর বেরোয়। তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি তখনই সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টার কথা উড়িয়ে দেন।
কিন্তু সেনা যে দিল্লির অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছিল, সে কথা পরে কবুল করেছিলেন সেই সময়ের ডিজিএমও অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ কে চৌধুরি। তিনি স্বীকার করেন, প্রতিরক্ষাসচিব তাঁকে ডেকে সেনাকে মাঝপথে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
ভি কে সিংহ অবশ্য অবসরের পর সেনা অভ্যুত্থানের সম্ভাবনার কথা পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন, এটি ছিল সাধারণ সেনা মহড়া। কুয়াশায় মহড়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল মাত্র। আর আজ ভি কে সিংহ বলেন, ‘‘বোঝাই যাচ্ছে মণীশ তিওয়ারির কোনও কাজকর্ম নেই। আমি একটা বই লিখেছি। মণীশ সেটি পড়ুন। তাতেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।’’ সরকারের আর এক মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি বলেন, ‘‘আমিও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলাম। এ ধরনের আলোচনার কথা আমার মনে পড়ছে না। তা ছাড়া, মণীশ এ কথা বলার জন্য এত দিন সময় নিলেন কেন?’’
মণীশের বিরুদ্ধে সবচেয়ে তীক্ষ্ণ আক্রমণ এসেছে তাঁর দলের থেকেই। কারণ, এই ঘটনার সত্যতা কোনও ভাবে স্বীকার করলে তৎকালীন মনমোহন সরকার ও দলের নেতৃত্বের উপরেই আঁচ এসে পড়বে। তাই কম কথার মানুষ এ কে অ্যান্টনিও আজ মুখ খুলেছেন এই প্রসঙ্গে। জানিয়েছেন, সেই সময়ে তিনি যে বিবৃতি দিয়েছিলেন তা থেকে তিনি এতটুকু সরছেন না। আর দলের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘মণীশ দলের মুখপাত্র নন। সরকারের সিদ্ধান্ত নির্ধারণের কমিটিতেও তিনি ছিলেন না। এ বিষয়ে তাঁর কোনও মন্তব্য করাই উচিত নয়। খবরটা যখন বেরিয়েছিল, তখনই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, এর কোনও সত্যতা নেই।’’ দলেরই প্রাক্তন মন্ত্রীর বক্তব্য খারিজ করতে গিয়ে কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক এমনও দাবি করেন যে, ‘‘মণীশ সে সময় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের স্থায়ী কমিটিতেও ছিলেন না।’’ যদিও তথ্য সে কথা বলছে না। মণীশ অবশ্য হাল ছাড়েননি। তাঁর সর্বশেষ বক্তব্য, ‘‘যা বলেছি, তাতে আর কিছু যোগ বা বিয়োগ করছি না।’’