মরাণের স্কুলে তরুণ গগৈ। শুক্রবার। — নিজস্ব চিত্র।
একই দিনে অসমে দুই মুখ্যমন্ত্রীর দুই ব্যতিক্রমী সফর!
সাধারণত অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ভিন্জেলায় সফরে গেলে হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন। গুয়াহাটি বা অন্য জেলাসদরে ঘোরার সময় তাঁর কনভয়ে থাকে গাড়ির লম্বা সারি, জ্যামার, দমকল, অ্যাম্বুলেন্স। কিন্তু, আজ গুয়াহাটি থেকে ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসে যোরহাট আসা ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে দেখে অবাক গগৈয়ের রাজ্যের মানুষ।
এসএফআইয়ের অধিবেশন উপলক্ষ্যে এ দিন সাধারণ যাত্রীর মতোই ট্রেনে যোরহাট পৌঁছন মানিকবাবু। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁকে চিনতেই পারেনি আম জনতা। রাস্তায় লালবাতির গাড়ি বা কনভয় ব্যবহার করেননি তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর জন্য রাস্তা যেমন খালি করা হয়নি, তেমন স্টেশনের প্ল্যাটফর্মেও কোনও নিরাপত্তা ছিল না। কম্যান্ডোহীন ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্ল্যাটফর্মে একটি নেড়ি কুকুর তাঁর পা শুঁকতে যায়। হোঁচট খেয়ে পড়তে পড়তে বাঁচেন মানিকবাবু। অবাক সাংবাদিকরা তাঁর কনভয়হীন গতিবিধিতে বিস্ময় প্রকাশ করলে মানিকবাবু জানান— তিনি লালবাতি, পাইলট কার, রাস্তা খালি করা পছন্দ করেন না। তাঁর মন্তব্য, ‘‘দরকারে ২ মিনিট আগে বাড়ি থেকে বের হলেই হল। মানুষের অসুবিধা করে রাস্তা বন্ধ করার কী প্রয়োজন! না হয়, মিনিট কয়েক দেরিই হবে. তাতে ক্ষতি তো হবে না।’’
এ দিকে, মুখ্যমন্ত্রী গগৈয়ের কনভয় গেলে রাস্তা দীর্ঘক্ষণ বন্ধ থাকা নিয়ে প্রচুর ক্ষোভ। তাঁর কনভয়ের জন্য অ্যাম্বুলেন্স আটকে থাকা নিয়ে বিক্ষোভও হয়েছে। তাঁকে মানিক-দর্শন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ক্ষিপ্ত হন গগৈ। এ দিকে কাকতালীয় ভাবে, গগৈও এ দিন যোরহাটে ছিলেন। হেলিকপ্টারে অভ্যস্ত গগৈয়ের সেখান থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে মরাণে জনমঙ্গল অন্ধ আদর্শ বিদ্যালয়ের নামঘর উদ্বোধনে যাওয়ার কথা ছিল। ওই স্কুলটি তৈরি করেছিলেন চলচ্চিত্র অভিনেতা ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাবা এস এন বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, খারাপ আবহাওয়ায় চপার না ওড়ায় ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়কে মরাণে রওনা হন তিনি। ফলও হাতেনাতে। খানাখন্দে ভরা জাতীয় সড়কের দুদর্শা এতদিনে টের পেলেন গগৈ। অর্ধেক পথ যেতেই শিবসাগরে কোমরের ব্যথায় কাতর মুখ্যমন্ত্রীকে খানিক বিশ্রাম নিতে হয়। মরাণ পৌঁছে রাস্তার হাল নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তিনি শুধু বলেন— ‘‘খুব বাজে রাস্তা’’।
এ দিনের ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভিক্টরবাবুও।