বিহার নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে। কিন্তু রাজ্যের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে নাটকীয় ভাবে তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিহারে শোচনীয় পরাজয়ের পরেও নীতীশের ডাকে সাড়া দিয়ে পটনায় যাওয়ার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আসলে একটি মোক্ষম রাজনৈতিক চাল দিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী।
ভোটে জয়ের পরেই নীতীশ কুমার তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করেন। সামনের সপ্তাহে ২৯ তারিখ তাঁর শপথ নেওয়ার কথা। গোড়া থেকেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রীয় ধর্মের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন কেন্দ্রকে। প্রথম থেকেই কেন্দ্র-রাজ্যের সুসম্পর্ক বজায় রাখার সদিচ্ছা প্রকাশ করে এসেছেন। ভোট প্রচারের সময় প্রধানমন্ত্রী বিহারের জন্য প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন, সেটি যাতে বিজেপি-র হারের পরেও বলবৎ থাকে, তার জন্য আবেদন করেছিলেন। সেই সময়েই মোদী সরকারের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানিয়ে দিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকার বিহারের উন্নয়নের জন্য যে ঘোষণা করেছে, সেটি পূরণ করার ব্যাপারে কেন্দ্র দায়বদ্ধ। এ বারে প্রধানমন্ত্রীও নীতীশ কুমারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বার্তা দিতে চাইছেন, ভোটে দলের পরাজয় হলেও রাজ্যের উন্নয়নের ব্যাপারে তিনি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সে ব্যাপারে তিনি বলিপ্রদত্ত। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ধর্ম মেনে চলেছেন। এ বারেও তার অন্যথা হবে না।
লন্ডন সফর শেষে তুরস্কে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে দেশে ফিরছেন ১৭ তারিখে। তার পরদিন বিজ্ঞান ভবনে সিবিআই-এর একটি সম্মেলন রয়েছে। সেখানে তিনি বক্তৃতা দেবেন। পর দিন ১৯ নভেম্বর রাজস্থানে একটি বিনিয়োগ সম্মেলনে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া। ২০ তারিখ দিল্লিতে কাটিয়ে ২১ তারিখেই মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর সফরে বেরিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। ২৬ নভেম্বর থেকে শুরু সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। তার আগেই দিল্লিতে ফিরে আসবেন তিনি। ফলে ২০ তারিখ নীতীশের শপথের দিনে তিনি দেশেই রয়েছেন। শেষ মুহূর্তে কোনও রাজনৈতিক পটপরিবর্তন না হলে নীতীশের শপথে হাজির থাকছেন তিনি।
সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ধর্ম মেনে নীতীশ তাঁর শপথে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বটে, কিন্তু ভাবেননি প্রধানমন্ত্রী সত্যি সত্যি চলে যাবেন। বড়জোর বিহারের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদীকে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠানোর কথা ভেবেছিলেন। নীতীশের মন্ত্রিসভায় কংগ্রেসের বিধায়করাও যোগ দিচ্ছেন। খোদ সনিয়া ও রাহুল গাঁধীও সেটি চেয়েছেন। এ বারে নীতীশের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে সনিয়া ও রাহুল গাঁধীও উপস্থিত থাকছেন। সে ক্ষেত্রে নীতীশের শপথগ্রহণকে ঘিরে নরেন্দ্র মোদী ও সনিয়া গাঁধী একই মঞ্চে হাজির হতে চলেছেন। কংগ্রেসের কিছু মুখ্যমন্ত্রীও সেখানে যেতে পারেন। সিপিএমের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এখন অপেক্ষা করছেন, কে যান, কে না যান— সেটি দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির অবশ্য সেখানে যাওয়ার কথা। তাঁর দল জোটে যোগ দেয়নি। তাতে লালুরা ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। সেই ক্ষোভ নিরসনের জন্যই ইয়েচুরিরা আরও বেশি করে যাওয়ার পক্ষপাতী। যাতে বার্তা দেওয়া যায়, আগামী দিনে মোদী-বিরোধী রাজনীতিতেও তাঁরাও রয়েছেন।
কিন্তু নরেন্দ্র মোদী এই শপথে যেতে পারেন বলে যাচ্ছেন না পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নরেন্দ্র মোদী থাকলে তিনি এক মঞ্চে থাকতে চাইছেন না। কিন্তু তৃণমূলেরই অনেক নেতা মনে করেন, অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীরা যদি না যান, তা হলে বিজেপি-রই হাত শক্ত হবে। বরং সেখানে গিয়ে অ-বিজেপি, অ-কংগ্রেসি জোটের শক্তি দেখানোই ভাল। শপথে যাওয়া একটি সাংবিধানিক বিষয়। তবে এর মধ্যে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার একটি সুযোগও থাকে। তবে মমতা নিজে না গেলেও তিনি তাঁর কোনও এক প্রতিনিধিকে পাঠাতে পারেন। অতীতে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের শপথ হোক মায় পঞ্জাবের প্রকাশ সিংহ বাদল— মমতা তাঁর প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন। তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য, মমতার শপথেও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এসেছিলেন। কিন্তু মমতা মনে করেন, সেখানে না গিয়ে বরং কংগ্রেস ও বিজেপি-র মধ্যে ঘনিষ্ঠতার বার্তা দেওয়ার সু