তৃণমূলের রাজ্যসভা ও লোকসভা সাংসদদের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: মমতার ফেসবুক পেজ থেকে।
স্থির ছিল, সংসদে যাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংসদের নিরাপত্তা বিভাগেও প্রস্তুতির নির্দেশ ছিল। কিন্তু সূত্রের খবর, এই সফরে সংসদে যাবেন না তিনি। আপাতত কোনও বড় মাপের বিরোধী বৈঠক বা অ-কংগ্রেসি রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকও হচ্ছে না। রাজনৈতিক শিবির মনে করছে, বার্তা স্পষ্ট। এই সফরে তিনি বিরোধী ঐক্যের সলতে পাকাতে দিল্লি আসেননি।
যদিও মমতা দিল্লিতে থাকছেন লম্বা সময়। সোমবার দুপুরে তাঁর ফেরার কথা। রবিবার গোটা দিনই নীতি আয়োগের বৈঠকে কাটবে। কাল প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ। তৃণমূলের এক শীর্ষ পর্যায়ের সাংসদের বক্তব্য, “দু’টি বৈঠকই হেভিওয়েট। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তার প্রস্তুতি নেওয়ার আছে। ফলে ওই দিন অন্য কিছু রাখা যাবে না।” কিন্তু শনিবার দিল্লিতে তাঁর কর্মসূচি কী, তার ইঙ্গিত এখনও পাওয়া যায়নি দলের কাছ থেকে। একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন কোনও কোনও বিরোধী নেতার সঙ্গে আলাদা দেখা করতে পারেন মমতা। তবে তার সূচি এখনও তৈরি হয়নি। পূর্বাভাস ছিল, টিআরএস নেতা তথা তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী
চন্দ্রশেখর রাওয়ের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে মমতার। কিন্তু টিআরএস সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সময় দিল্লি আসার পরিকল্পনা নেই রাওয়ের। এখনও পর্যন্ত কোনও সাংবাদিক বৈঠকও রাখেননি তৃণমূল নেত্রী।
রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, শনিবার উপরাষ্ট্রপতি পদে ভোট। যে ভোট থেকে সরে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল। সম্মিলিত বিরোধী প্রার্থী মার্গারেট আলভা মমতাকে ফোনে না পেয়ে তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলে ভোট চেয়েছেন। কিন্তু মমতা তাঁর আগের সিদ্ধান্ত— ভোটে বিরত থাকার বিষয়ে অটল। এ দিকে, আলভা আজ ভিডিয়ো বার্তা টুইট করে বলেছেন, ‘উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কোনও দলীয় নির্দেশ চলে না। গোপন ব্যালটে ভোট হয়। ফলে উপরাষ্ট্রপতি ভোটে সাংসদেরা রাজনৈতিক চাপ, ভয় ছাড়াই যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেবেন ধরে নেওয়া যায়।’
আলভার এই বার্তার লক্ষ্য যাঁরা, তৃণমূল সাংসদেরা অবশ্যই তাঁদের মধ্যে আছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে কাল, ভোটের ঠিক আগের দিন সংসদভবনে যাওয়া মমতার জন্য অস্বস্তিকর বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। আলভা এখন প্রতি দিনই সংসদে যাচ্ছেন। তাই সেখানে মমতার সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে, বা মমতা এসেছেন শুনে তিনি ছুটে এলে, বিষয়টি অস্বস্তিকর হয়ে যাবে তৃণমূল নেত্রীর জন্য। কারণ, আলভার সঙ্গে মমতার ব্যক্তিগত সম্পর্ক বহু পুরনো। একই সঙ্গে তিনি এই ভোটে সামিল না হয়ে বিরোধীদের ঐক্যে জল ঢাললেন, এমন অভিযোগ, কংগ্রেস, এনসিপি, বামেদের শিবির থেকে আসছে। ফলে সংসদে গিয়েও যে মমতা অন্যান্য বিরোধী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারবেন—পরিবেশ ঠিক সে রকম নেই। তা ছাড়া, বিরোধী দলগুলি ব্যস্ত থাকবে উপনির্বাচন নিয়ে। আজ মমতার সঙ্গে বৈঠকের পর তৃণমূল সাংসদেরা বলছেন, “আমাদের সঙ্গে তো দেখা হয়ে গেল। ফলে সংসদে যাওয়ার আর প্রয়োজন থাকছে না।”
দলীয় সূত্রের খবর, আজ সাংসদদেরসঙ্গে বৈঠকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়, সুখেন্দুশেখর রায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো একাধিকবারের সাংসদেরা বিজেপি-কে রুখতে বিরোধীদের সম্মিলিত ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার কথা নেত্রীর সামনে তুলেছেন। তাঁদের বক্তব্যের নির্যাস, বিরোধীরা যাতে একজোট হতে না-পারেন, সে জন্য বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থাকে বিভিন্ন বিরোধী দলনেতার পিছনে ‘লেলিয়ে দেওয়া’ হচ্ছে। এই অঘোষিত জরুরি অবস্থার মোকাবিলায় সব বিরোধী রাজনৈতিক দলকে এক ছাতার তলায় আনার কথাও মমতাকে বলেছেন প্রবীণ সাংসদরা।সূত্রের খবর, মমতা মন দিয়ে সাংসদদের মতামত শুনেছেন, এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেননি।