সাক্ষাতে সৌজন্যের রাজনীতি

রাজনীতির কারবারিদের অনেকেরই বক্তব্য, রাজ্যে বিজেপি-বিরোধিতার সুর চড়ানো এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো মেনে কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা— এই নরম-গরম রণকৌশল নিয়েই এখন এগোতে চাইছেন মমতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৭ ০৫:৫৮
Share:

—ফাইল চিত্র।

চার দিন আগেই ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে নরেন্দ্র মোদীর ‘দাদাগিরি’র বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদীর দলকে ‘ভারত ছাড়া’ করার ডাকও দিয়েছিলেন। আজ সেন্ট্রাল হলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মুখোমুখি সাক্ষাতে কিন্তু সেই তিক্ততার ছায়া পড়ল না। বরং দেখা গেল শিষ্টতা আর সৌজন্য। পাহাড় ও বন্যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মমতা খোঁজ নিলেন গুজরাতের বন্যা পরিস্থিতির। রাজনীতির কারবারিদের অনেকেরই বক্তব্য, রাজ্যে বিজেপি-বিরোধিতার সুর চড়ানো এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো মেনে কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা— এই নরম-গরম রণকৌশল নিয়েই এখন এগোতে চাইছেন মমতা।

Advertisement

আজ রাষ্ট্রপতি পদে রামনাথ কোবিন্দের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের পরে নিজের ঘর থেকে বেরোনোর সময় মমতাকে দেখতে পেয়ে ডাক দেন মোদী। নমস্কার বিনিময়ের পর ‘দিদি’ সম্বোধন করে মোদী জানতে চান, মমতা কবে দিল্লি এলেন। মমতা জানান, তিনি সোমবার এসেছেন। রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির জন্য বুধবারই ফিরে যাবেন। সূত্রের খবর, এর পরই মমতা বলেন, ‘‘এসেছি যখন, আপনাকে দার্জিলিং নিয়ে রিপোর্ট জানিয়ে যেতে চাই।’’ তখন মোদী জানান, তাঁকে বন্যার কারণেই গুজরাতে যেতে হচ্ছে। মমতাকে তাঁর পরামর্শ, ‘‘আপনি বরং রাজনাথ সিংহের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে বিশদে সব কিছু জানান।’’ পা ভাঙার কারণে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে ঘরবন্দি, তা-ও মমতাকে জানান মোদী। তার পরে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে দু’জনের কথা হয়। সূত্রের দাবি, মোদীকে মমতা বলেন, ‘‘আপনার রাজ্যেও তো বন্যা পরিস্থিতি খারাপ। অনেক লোক মারা গিয়েছেন। আমাদের রাজ্যেও অবস্থা খুব ভাল নয়।’’ তখন মোদী তাঁকে বলেন, ‘‘আপনি দার্জিলিং নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কেও রাজনাথজিকে জানিয়ে রাখুন।’’

আরও পড়ুন:বায়ুসেনার নিশানায় ছিলেন মুশারফরা

Advertisement

গুজরাতে গিয়ে এ দিনই বন্যায় নিহতদের পরিবারবর্গকে দু’ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মোদী। এর আগে রাজ্যের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কেন্দ্র ফিরেও তাকায় না বলে অভিযোগ করলেও এ দিন কিন্তু বিন্দুমাত্র বেসুরে গাননি মমতা। উল্টে রাজনাথের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘‘গুজরাতের বন্যা পরিস্থিতি খারাপ। কেন্দ্রকে বলেছি, যে রাজ্যের অবস্থা বেশি খারাপ তাকেই আগে সাহায্য দিতে। আমাদের অবস্থা খারপ হলেও আমরা সামলে নেব।’’

চার দিনের মধ্যে মমতার এ হেন সুর বদলে অনেকেই বিস্মিত। সম্প্রতি সারদা এবং নারদ তদন্তের গতি বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি। একে একে ডাকা হচ্ছে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে মমতা অভিযোগ করেছেন, তৃণমূল বিজেপি বিরোধী রাজনীতি করায় তাঁদের সম্মানহানির জন্যই এ সব করা হচ্ছে। মোদীর নাম না করে সে দিন ‘বড়দা বিদায়ের’ ডাক দিয়েছিলেন তিনি।

তৃণমূল সূত্রের খবর, তাঁর এ বারের আরও একটি উদ্দেশ্য উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে ঘিরে বিরোধী জোট আরও শক্ত করা। কার্যত মমতার নেতৃত্বেই সেই ভোটে জোট বেঁধেছে ১৮টি বিরোধী দল। আজও সকালে সংসদে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে বিরোধীদের বিক্ষোভ সভায় যোগ দিয়েছে তৃণমূল। সংসদের চলতি অধিবেশন শেষ হওয়ার আগে রামলীলা ময়দানে কৃষক দুর্দশার প্রতিবাদে বিরোধী দলগুলির সমাবেশেও হাজির থাকবেন মমতা।

এই পরিস্থিতিতে মমতার এ দিনের অবস্থানকে যুক্তরাষ্ট্রীয় শিষ্টাচার বলেই ব্যাখ্যা দিচ্ছে তৃণমূল শিবিরের একাংশ। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও বলেছেন, পাহাড়ের উত্তপ্ত পরিস্থিতি বা বন্যা পরিস্থিতি কেন্দ্রকে জানানো তাঁর সাংবিধানিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।

কোবিন্দের শপথ অনুষ্ঠানে হাজির থাকা নিয়েও মমতার গলায় শিষ্টতার সুরই শোনা গিয়েছে। কোবিন্দের বিরুদ্ধে তৃণমূলের ভোটদান এবং এ দিনের শপথে আসা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মমতা বলেন, ‘‘তখন কোবিন্দ ছিলেন রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী। আজ তিনি দেশের রাষ্ট্রপতি। সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আজকের অনুষ্ঠানে হাজির থাকাটা জরুরি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement