নরেন্দ্র মোদী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সনিয়া গাঁধী। —ফাইল চিত্র।
জাতীয় রাজনীতিতে যখন বিরোধী শক্তিগুলির একজোট হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, ঠিক তখনই দিল্লি সফরের পরিকল্পনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চূড়ান্ত দিনক্ষণ এখনও না-জানালেও, লোকসভা চলাকালীনই তিনি দিল্লি যেতে চান বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন
মমতা। সূত্রের খবর, এ মাসের শেষে দিল্লি যেতে পারেন তিনি। ১৯ জুলাই শুরু হচ্ছে সংসদের বাদল অধিবেশন।
সম্ভাব্য সফরে মমতা যেমন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা করতে পারেন, তেমনই প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় পেলে তাঁর সঙ্গেও বৈঠকে বসতে পারেন। বস্তুত, সংসদ চলাকালীন দিল্লি সফরে গেলে সেখানকার সেন্ট্রাল হলে যান মুখ্যমন্ত্রী। এ বারও তার ব্যতিক্রম হবে না। ফলে সেখানে অন্য বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতের সম্ভাবনাও রয়েছে।
এ দিন দিল্লি সফর প্রসঙ্গে মমতা বলেন, “আমাদের এখানে কোভিড থাকায় ভোটের পরে আমি দিল্লি যেতে পারিনি। এখন কোভিড পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক। আমি লোকসভা চলাকালীন দিল্লিতে যাই। পুরনো-নতুন বন্ধুদের অনেকের সঙ্গে দেখা হলে ভাল লাগে। এ বার যাব। তবে কবে যাব, এখনও স্থির করিনি। বিভিন্ন নেতার সঙ্গে দেখা করব। তাঁদের সময় পেলে আমি প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির সঙ্গেও দেখা করব।”
বাংলায় বিধানসভা ভোটের পর থেকে তৃণমূল-বিজেপি বা কেন্দ্র-রাজ্য রাজনৈতিক চাপানউতোর বেড়েছে। ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগকে কেন্দ্র করে সেই উত্তাপ আরও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সাক্ষাতের সম্ভাবনাকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে রাজনৈতিক শিবির। সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, মোদী-মমতা বৈঠকে সৌজন্যের আড়ালে ভোট পরবর্তী হিংসা, বাকি থাকা উপনির্বাচন, টিকার জোগান বাড়ানোর মতো বিষয়গুলি আলোচনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
বিধানসভার ভোটে তৃণমূলের হয়ে কাজ করা ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজের মেয়াদ বাড়িয়েছেন মমতা। সম্প্রতি তিনি দিল্লিতে গিয়ে সনিয়া এবং রাহুল গাঁধীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা ধরনের গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এই আবহে সনিয়ার সঙ্গে মমতার সাক্ষাতের সম্ভাবনায় বিশেষ তাৎপর্য খুঁজে পাচ্ছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। তবে মমতা তাঁর সম্ভাব্য সূচিতে সনিয়ার সঙ্গে দেখা করার কথা জানালেও, রাহুলের বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেননি।
বাংলার ভোটে তৃণমূলের বিপুল জয়ের পর থেকে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে বিরোধী ঐক্যের সলতে পাকানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে বিরোধী নেতৃত্বের মধ্যে এক দফা আলোচনাও হয়েছে। মমতা নিজে বিরোধী দল তথা বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির ঐক্যের পক্ষে সওয়াল করেছেন বার বার। কিন্তু এ সব এত দিন হয়েছে দিল্লির অনেক দূর থেকে।
এ বার মমতা নিজে রাজধানীতে পৌঁছলে এই সমস্ত সমীকরণ কতটা পোক্ত হবে, তা নিয়ে কৌতূহলী রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।