আসলে সরকার বৈদ্যুতিক গাড়ি সংস্থাগুলির সঙ্গে আঁতাত করে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বাড়াচ্ছে। তারা সরকারের থেকে ভর্তুকিও পাচ্ছে। আবার পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বেশি হওয়ার সুবিধাও তুলছে।
ফাইল চিত্র।
দেশে তেলের চড়া হারে দাম বৃদ্ধি নিয়ে ফের বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়ল মোদী সরকার। সোমবার লোকসভা ও রাজ্যসভায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান বিরোধীরা। শেষে রাজ্যসভার অধিবেশন সারা দিনের মতো মুলতুবি করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি আমজনতার ঘাড়ে বিপুল আর্থিক বোঝা চাপানোর অভিযোগে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ফের তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, আমজনতার ভোগান্তি থেকে নজর ঘোরাতে ইডি, সিবিআইকে বিরোধীদের বিরুদ্ধে নামাচ্ছে মোদী সরকার। ‘মিথ্যা খবর’ ছড়িয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চলছে। দেশের আর্থিক পরিস্থিতি শোধরাতে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার দাবি তুলেছেন তিনি।
গত সপ্তাহে মমতা দার্জিলিঙে তেলের দাম নিয়ে সরব হন। তার আগে অবশ্য বিজেপি নেতা অমিত মালব্য তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-সহ মূলত বিরোধী রাজ্যগুলিকে ভ্যাট (যুক্ত মূল্য কর) কমানোর দাবি তোলেন। তেলের দাম বাড়লে ভ্যাট একই রেখেও রাজ্যের আয় বাড়ে, দাবি বিজেপির। তবে পশ্চিমবঙ্গে ভ্যাটে ১ টাকা ছাড়ের মেয়াদ ফের বাড়ানো হয়েছে বলে রাজ্য প্রশাসনের দাবি।
তেলের চড়া দামের জেরে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, সে কথা মনে করিয়ে এ দিন মমতার দাবি, তা থেকে নজর ঘোরাতে বিরোধী রাজ্যে হিংসা ছড়াচ্ছে বিজেপি। তাঁর কথায়, ‘‘জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে দ্রুত। এটা কেন্দ্রের বিষয়। কিন্তু তারা তোয়াক্কা করছে না।’’
পরিস্থিতি কতটা খারাপ, তা বোঝাতে শ্রীলঙ্কার উদাহরণও টেনে আনেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় শ্রীলঙ্কায় মানুষ বিদ্রোহের পথে নেমেছেন। কিন্তু ভারতের পরিস্থিতি আরও খারাপ। তুলনা করছি না, কিন্তু কোনও পরিকল্পনাই নেই। ১৩ দিনে ১১ বার তেল-গ্যাসের দাম বেড়েছে। উত্তরপ্রদেশে জয়ের সাত দিন বাদে উপহার তেল-জিনিসের দর বৃদ্ধি। পিএফের সুদ কমেছে। রেল-ব্যাঙ্ক, বিমা, সব বিক্রি হচ্ছে।’’ দেশের প্রয়োজনে বৃহত্তর সহযোগিতার বদলে বরং যে ডালে বসে আছে, সেটাকেই রাজনৈতিক লাভের আশায় কেন্দ্র ও বিজেপি কাটছে বলে তাঁর অভিযোগ। কিন্তু দেশের সর্বনাশ হলে কেউই বাঁচবে না, হুঁশিয়ারি দেন মমতা।
মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আজ ফের উত্তাল হয় সংসদও। লোকসভায় কংগ্রেস, তৃণমূল, শিবসেনা-সহ বিরোধী দলগুলি ওয়াক-আউট করে। কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘মোদী হ্যায় তো মেহঙ্গাই হ্যায়’। রাজ্যসভায় তৃণমূলের আবীররঞ্জন বিশ্বাস-সহ একাধিক বিরোধী সাংসদ মুলতুবি প্রস্তাব এনে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনার দাবি তুললেও রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু তা না মানায় বিরোধীরা রাজ্যসভার ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান। দু’বার অধিবেশন মুলতুবি হওয়ার পরে বেলা ২টোয় ফের অধিবেশন বসে। আবার বিরোধীরা ওয়েলে নামেন। এর পরে রাজ্যসভার অধিবেশন সারা দিনের মতো মুলতুবি করে দেওয়া হয়। চলতি সপ্তাহে সংসদের অধিবেশনে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কংগ্রেসের রণকৌশল ঠিক করতে সনিয়া গান্ধী মঙ্গলবার সংসদীয় দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
জ্বালানি, রান্নার গ্যাসের দাম-সহ মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মোদী সরকার বারবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও অশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধিকে দায়ী করলেও রাজ্যসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক সুখেন্দুশেখর রায়ের দাবি, অশোধিত তেলের দাম এখন কমছে। আর রাশিয়ার থেকেও সস্তায় অশোধিত তেল কেনা হচ্ছে। আসলে সরকার বৈদ্যুতিক গাড়ি সংস্থাগুলির সঙ্গে আঁতাত করে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বাড়াচ্ছে। তারা সরকারের থেকে ভর্তুকিও পাচ্ছে। আবার পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বেশি হওয়ার সুবিধাও তুলছে।