সাংবাদিকদের মুখোমুখি মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার টাউন হলে। ছবি: সুদীপ আচার্য।
নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে ঘিরে বিজেপি-র অন্দরে মতান্তর নিয়ে এর আগেও নরেন্দ্র মোদীকে খোঁচা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছেন, মোদীকে সরিয়ে দিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হোক। এ বার আর এক কদম এগোলেন তৃণমূল নেত্রী। শুক্রবার ফের প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে মমতা বললেন, মোদীকে সরিয়ে লালকৃষ্ণ আডবাণী, অরুণ জেটলি বা রাজনাথ সিংহের মধ্যে কোনও এক জনকে যদি প্রধানমন্ত্রী করা হয়, তা হলে সেই সরকারকে সমর্থন দিতে তাঁর আপত্তি নেই। কারণ, মোদীর মতো বিপজ্জনক ব্যক্তিকে দেশের প্রশাসনিক প্রধানের পদ থেকে সরানো জাতীয় স্বার্থেই আবশ্যক হয়ে উঠেছে।
মমতার এ হেন প্রস্তাব অবশ্য ‘আজগুবি কথা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি। এবং প্রস্তাবের অন্য অর্থ বের করে তৃণমূল নেত্রীকে পাল্টা খোঁচা দিতে চেয়েছেন বাংলায় তাঁর বিরোধীরা। সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী মমতাকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘‘ঝুলি থেকে বিড়াল বেরিয়ে পড়ল! এর মানে এক জন ব্যক্তিকে নিয়ে কিছু ইগো থাকলেও বিজেপি বা সঙ্ঘের মতাদর্শ নিয়ে মমতার আপত্তি নেই।’’ তাঁদের অভিযোগ, আসলে বিভিন্ন কেলেঙ্কারির তদন্ত বন্ধ করাতেই এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন মমতা!
শুক্রবার টাউন হলে প্রশাসনিক বৈঠক ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিকেলে ওই বৈঠক শেষ হওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রীকে পরোক্ষে কালিদাসের সঙ্গে তুলনা করে মমতা সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতির কাছে বারবার অনুরোধ করছি, রাজ্যগুলিকে বাঁচান। দেশকে বাঁচান। প্রয়োজনে জাতীয় সরকার তৈরি হোক। প্রধানমন্ত্রী পদে যিনি রয়েছেন, তিনি কিছুই পারবেন না। যে ডালে বসে রয়েছেন, সেটাই কেটে ফেলছেন।’’ এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি-র মধ্যে থেকেই লালকৃষ্ণ আডবাণী, রাজনাথ সিংহ বা অরুণ জেটলির মতো কোনও প্রবীণ নেতা জাতীয় সরকারের দায়িত্ব নিলে আমার আপত্তি নেই।’’ মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির অপব্যবহার করা হচ্ছে। যে ভাবে দেশের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হচ্ছে তা সন্ত্রাসের থেকেও ভয়ঙ্কর!
প্রশ্ন হল, এর নেপথ্যে মমতার রাজনৈতিক কৌশলটা কী?
রাজনীতিকদের অনেকের মতে, জাতীয় সরকার গঠনের বিষয়টি কাঁঠালের আমসত্ত্বের মতো! তা হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এবং সেটা মমতাও ভাল মতোই জানেন। বাস্তব হল, রাহুল গাঁধী এবং মমতা দু’জনেই চাইছেন মোদীর গায়ে ‘স্বৈরাচারী শাসক’ তকমা সেঁটে দিতে। সেই কারণেই রাহুল যেমন বার বার বলছেন, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত মোদী একাই নিয়েছেন। এমনকী অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গেও আলোচনা করেননি। তেমনই মমতা বোঝাতে চাইছেন, মোদীর সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহমত নন আডবাণী, রাজনাথ, জেটলিরা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বিজেপি-র এই তিন নেতাই মমতা সম্পর্কে নরম মনোভাব পোষণ করেন। এমনকী জেটলি-রাজনাথরা এ-ও মনে করেন যে, মমতার সঙ্গে বিজেপি-র সম্পর্ক ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’ যাওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। অর্থাৎ, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি এখন যে ভাবে আদা জল খেয়ে তৃণমূলের পিছনে লেগেছে তা ঠিক হচ্ছে না বলে দলের এই অংশের মত। তা ছাড়া সংসদীয় এথিক্স (নীতি) কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে নারদ-তদন্ত নিয়ে প্রতিহিংসার রাজনীতি করার পক্ষপাতী নন আডবাণীও।
সাংবাদিকদের সামনে মমতা অবশ্য তাঁর এই দাবির কারণ অন্য ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে অব্যবস্থা হলে যেমন রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি ওঠে, আমি চাই, তেমন ভাবে কেন্দ্রীয় স্তরেও রাষ্ট্রপতির শাসন জারি হোক। এই সম্ভাবনা এখন বিচার করার সময় এসেছে।’’ মমতা বুঝিয়ে দেন, তাঁর এই মন্তব্যের জন্য কেন্দ্রের সরকার যদি আরও প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে, তা হলেও তিনি ভয় পান না। তৃণমূল নেত্রীর কথায়, ‘‘আমার গলা কেটে দিলেও আমার কিছু যায় আসে না। নোটবন্দির বিরুদ্ধে আমি বলে যাব। বলব না তো কি! ফুল-বেলপাতা দিয়ে মোদী-পুজো করব!’’