দুর্ঘটনাস্থলে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনাস্থলে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের পাশে দাঁড়িয়েই রেলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুনির্দিষ্ট ভাবে রেলের সমন্বয়ের দিকে আঙুল তুলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা দেশের প্রাক্তন রেলমন্ত্রী। বললেন, ‘‘রেলে মনে হয় সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। আরও যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। আরও গুরুত্ব দিতে হবে।’’ রেলকে অবহেলা করা হচ্ছে বলেও আঙুল তুলেছেন মমতা। পাশাপাশি, রেলমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি কী কী ব্যবস্থা করেছিলেন, সেই প্রসঙ্গও টেনেছেন তিনি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ওড়িশায় বালেশ্বরের কাছে বাহানগা বাজারে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস এবং বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। একই সঙ্গে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয় একটি মালগাড়িও। শনিবার হাওড়ার ডুমুরজলা থেকে হেলিকপ্টারে করে বাহানগার উদ্দেশে রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী। পৌঁছন দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ। তার আগে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী। রেলমন্ত্রীর সঙ্গে কিছু ক্ষণ কথা বলেন মমতা। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে থাকেন দুর্ঘটনা সম্পর্কিত তথ্য। অশ্বিনীর পাশে দাঁড়িয়েই রেলে সমন্বয়ের অভাব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁর পূর্বসূরি মমতা। বিকেল ৪টের পর রাজ্যে ফেরেন মুখ্যমন্ত্রী।
অটল বিহারী বাজপেয়ীর জমানা এবং দ্বিতীয় মনমোহন সিংহ সরকারের আমলে রেলমন্ত্রী ছিলেন মমতা। তাঁর সময়ের সঙ্গে বর্তমান রেল মন্ত্রকের তুলনা টানেন মুখ্যমন্ত্রী। জানান, তিনি যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন, তখন রেলের সুরক্ষায় অনেক পদক্ষেপ করেছিলেন। কিন্তু সেই সব ব্যবস্থা নরেন্দ্র মোদীর সরকার তুলে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমি যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম, তখন অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস (ট্রেনে-ট্রেন সংঘর্ষ রোধক যন্ত্র) চালু করেছিলাম। কিন্তু এই ট্রেনে (করমণ্ডল) সংঘর্ষ এড়ানোর যন্ত্র ছিল না। থাকলে দুর্ঘটনা ঘটত না।’’ রেলও জানিয়েছে, দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনে ‘কবচ’ পদ্ধতি ছিল না। একই সঙ্গে রেল জানিয়েছে, মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়নি। পাশাপাশি ধাক্কা খেয়েছে দু’টি ট্রেন। মমতার কথায়, ‘‘আমি যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম, তখন এই মন্ত্রককে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হত। রেল বাজেট আলাদা হত। এখন তো সেটা হয় না।’’
দুর্ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবি জানিয়েছেন মমতা। বলেছেন, ‘‘কিছু একটা নিশ্চয়ই হয়েছে। সঠিক তদন্ত করা হোক।’’ রেলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র সাকেত গোখলেও। রেলমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন সিপিআই (এমএল) লিবারেশন নেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। এই আবহে বালেশ্বরে গিয়ে মমতা বলেন, ‘‘বিপর্যয় নিয়ে রাজনীতি করি না। সাহায্য করতে এসেছি।’’ রেল দুর্ঘটনায় বাংলার বাসিন্দাদের বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দুর্ঘটনায় বাংলায় মৃতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা, গুরুতর আহতদের ১ লক্ষ টাকা এবং কম আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি।
শনিবার বালেশ্বরে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। তার আগে অবশ্য ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন মমতা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন কি না, এই নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মমতা বলেছেন, ‘‘সাক্ষাৎ হলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।’’