মল্লিকার্জুন খড়্গে। ফাইল চিত্র।
পি ভি নরসিংহ রাও এবং সীতারাম কেশরীর পথেই হাঁটতে চাইছেন মল্লিকার্জুন খড়্গে। প্রায় আড়াই দশক পরে গান্ধী পরিবারের বাইরে থেকে কংগ্রেস সভাপতি পদে নির্বাচনে জিতে আসার পরে মল্লিকার্জুন এ বার কংগ্রেস কার্যকরী সমিতিতে নির্বাচন করাতে চাইছেন। তাঁর আমলেও হাইকমান্ডের ‘আস্থাভাজন’, ‘অনুগত’ ও ‘তাঁবেদার’ নেতারাই দলে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন, এমন কোনও বার্তা তিনি দিতে চাইছেন না।
১৯৯৮ থেকে সনিয়া গান্ধী যত দিন কংগ্রেস সভানেত্রী ছিলেন, সেই সময় কালে এবং মাঝে রাহুল গান্ধীর জমানাতেও কংগ্রেস কার্যকরী সমিতিতে কোনও নির্বাচন হয়নি। কংগ্রেস সভানেত্রীই দলের কার্যকরী সমিতির সদস্যদের মনোনীত করেছেন। কিন্তু সনিয়ার জমানার শেষ পর্বেই দলের বিক্ষুব্ধ নেতারা দাবি তুলেছিলেন, সভাপতি থেকে কার্যকরী সমিতি-সহ সংগঠনের সব স্তরেই নির্বাচন হোক। সনিয়া সেই দাবি মেনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সভাপতি পদে নির্বাচন হবে। রাহুলও তেমনটাই চেয়েছিলেন। এ বার মল্লিকার্জুন চাইছেন, কংগ্রেস কার্যকরী সমিতিতে নির্বাচন হোক। সত্যিই তা হলে ১৯৯৭ সালের আড়াই দশক পরে এই প্রথম কার্যকরী সমিতিতে নির্বাচন হবে।
আগামী ২৪ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি ছত্তীসগঢ়ের রায়পুরে কংগ্রেসের প্লেনারি অধিবেশন বসবে। এত দিন কংগ্রেস নেতাদের অবস্থান ছিল, সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটি বা এআইসিসি-র প্রতিনিধিরা চাইলে কার্যকরী সমিতিতে নির্বাচন হবে। কংগ্রেস সূত্রের খবর, খোদ দলের সভাপতিই নির্বাচন চাইছেন। সেই অনুযায়ী দলের নির্বাচন কর্তৃপক্ষ ১৫ জানুয়ারির মধ্যে রাজ্যগুলিতে সাংগঠনিক নির্বাচনের ভারপ্রাপ্ত নেতাদের এআইসিসি-র প্রতিনিধিদের তালিকা জমা করতে বলেছে। দলীয় সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই বেশ কিছু প্রবীণ কংগ্রেস নেতা কার্যকরী সমিতিতে জায়গা পাওয়ার জন্য নির্বাচনে লড়ার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন।
কংগ্রেসের দলীয় সংবিধান অনুযায়ী, কার্যকরী সমিতিতে সভাপতি, সংসদীয় দলের নেতা ছাড়া আরও ২৩ জন সদস্য থাকবেন। এই ২৩ জনের মধ্যে ১১ জনকে দলের সভাপতি মনোনীত করবেন। বাকি ১২টি পদে নির্বাচন হবে। এআইসিসি-র প্রতিনিধিরা সে জন্য ভোট দেবেন। সাম্প্রতিক অতীতে মাত্র দু’বার এই নির্বাচন হয়েছে। ১৯৯২-এ নরসিংহ রাও সভাপতি থাকাকালীন তিরুপতি অধিবেশনে এবং সীতারাম কেশরী সভাপতি হওয়ার পরে ১৯৯৭-এ কলকাতা অধিবেশনে। দু’বারই গান্ধী পরিবারের বাইরের নেতাদের সভাপতিত্বে। সনিয়া ১৯৯৮-এ সভানেত্রী হওয়ার পরে বরাবরই কার্যকরী সমিতির সব পদেই তাঁর মনোনীত সদস্যদের বসানো হয়েছে।
আড়াই দশক পরে ফের কার্যকরী সমিতিতে নির্বাচন হবে শুনে কংগ্রেসের অনেকেই খুশি। তাঁদের মতে, এতে কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের বার্তা দেওয়া যাবে। আবার অনেকের আশঙ্কা, এই ভোটাভুটি হলে এমন বার্তা যাবে না তো যে, গান্ধী পরিবারের বাইরের কেউ সভাপতি থাকলেই কংগ্রেসের কার্যকরী সমিতিতে নির্বাচন হয়, দলে গণতন্ত্র থাকে?