শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হিমন্ত। নিজস্ব চিত্র।
বেলা বারোটা পাঁচ। পাঞ্জাবি-ধুতি-উত্তরীয় পরিহিত হিমন্ত অসমের পঞ্চদশ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিচ্ছেন।
মাজুলি-বিশ্বনাথে টিভির সামনে কিশলয় জটলাগুলো ফেটে পড়ল আনন্দে। জিন্দাবাদ ধ্বনি নেই। নেই স্যার, বাবু, মহাশয়ের বালাই। হাততালি দিয়ে চলছে স্লোগান ‘‘মামা, মামা, মামা।’’ মুখ্যমন্ত্রী আবার কি, এ তো আমাদের মামা! তাই মামাবাড়ির আবদার জানানোই যেতে পারে। তালিকা তৈরি করছে মাজুলির হীরক আর পবিত্র। মামার মাথায় রাজমুকুট। তাই বিহুতে মাতে বিশ্বনাথের পাপ্পু, উদ্দীপ্ত, সুরজিৎরা।
বিশ্বনাথের রাস্তায় ছাদ-খোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে যাওয়ার সময় গাড়ির সঙ্গে দৌড়োচ্ছিল পাপ্পু হাজরিকা, উদ্দীপ্ত শইকিয়া, সুরজিৎ রাজবংশী। হিমন্ত পাশে ডেকে নেন তাঁদের। বলেন, “স্কুলে যাস তো? টাইমে যাবি। এসে খাবি। রাতে আবার পড়বি। মাঝে অবশ্যই খেলতেও হবে। ভাল করে পড়াশোনা করবি।”
মাজুলির হাতিমুড়িয়া গ্রামে বালিচরে হিমন্তর সঙ্গে দৌড়োতে দৌড়োতে মোটরবাইকের আবদার জানিয়েছিল হীরকজ্যোতি শইকিয়া ও পবিত্র দত্তরা। হাত জড়িয়ে বলে, “স্যার আপনাকে খুব ভালবাসি।” হিমন্ত বলেন, “আমিও। এক দিন বাড়িতে ভাত খেতে ডাকিস।” সঙ্গীদের ডেকে বলেন, “ওরে কেউ এদের চটিজোড়া ধর। চটি ধরবে না হাত ধরবে বুঝতে পারছে না।’’
বিশ্বনাথ আর মাজুলির সেই সব ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ায় গ্রামে রীতিমতো ভিআইপি হয়ে যায় পাপ্পু, উদ্দীপ্ত, সুরজিৎ, হীরক, পবিত্রেরা। প্রার্থনা করছিল, মামাই যেন মুখ্যমন্ত্রী হন। কারণ আগে কখনও কোনও নেতাকে এমন ধরাছোঁয়ার ভিতরে পায়নি তারা।
পুরনো হয়ে যাওয়া কচকচানি নয়, নতুন প্রজন্মের ভোট টানতে হিমন্তের মঞ্চসফল অস্ত্র ছিল এই ‘মামাতন্ত্র’। দূরদর্শী হিমন্ত বুঝেছিলেন, সদ্য ১৮ বছরে পা দেওয়া নতুন ভোটার বা স্কুলের কিশোর-কিশোরীদের মন জয় করতে পারলে পরিবারের ভোটও এমনই আসবে। তাই সব জনসভা, পথসভায় ‘ব্র্যান্ড মামা’-ই ছিল তাঁর ‘ইউএসপি’।
পাপ্পু বলে, “আশা করি মামা আবার এসে আমাদের সঙ্গে গল্প করবেন।” এ বার দেখা হলে কী বলবে? ঝটিতি জবাব, “মনে যা আসে তাই বলব। মামাই তো।”
আগের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল ছিলেন মাজুলির বিধায়ক। আজ হিমন্তকে নিয়ে সেখানে চলছে ‘মামা-মামা’ হাততালি, গান। হীরক-সুরিজৎরা বলে, “মামা অনেক কাজ করেছেন। মামার কাছে আরও অনেক কিছু চাওয়ার আছে।”
‘মামা’র মিম-কার্টুন যত ভাইরাল হয়েছে, ততই বেড়েছে মামার ঘোষণা। বলেছেন, উচ্চমাধ্যমিকের পাশাপাশি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভাল ফল করা ছাত্রীদেরও স্কুটি দেবেন। ছাত্রদের দেবেন মোটরবাইক। শর্ত একটাই, পরতে হবে হেলমেট, পিছনে বান্ধবী নয় বসাতে হবে বাবা-মাকে। প্রতিদিন কলেজে গেলে ছাত্রছাত্রীরা ১০০ টাকা করে হাতখরচও পাবে।
ভোটব্যাঙ্কের আরও এক বড় নির্ণায়ক মহিলাদের ভোট টানতে হিমন্তর ‘বিনিয়োগ’ ১২,৪০০ কোটি! অসমে মাইক্রোফিনান্সের ঋণের বাজার ওই পরিমাণই। ঘোষণা করেছেন, মহিলাদের নেওয়া সব ক্ষুদ্র ঋণ অসম সরকারই শোধ করে দেবে। ঋণের ফাঁদে জর্জরিত অসমের মহিলারাও তাই ঋণমুক্তির মসিহাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পেয়ে খুশি।
এ দিকে, মাতৃদিবসেই ছেলের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার খবর পেয়েছিলেন মৃণালিনীদেবী। আজ পুত্রবধুর পাশে বসে শপথগ্রহণের সভায় বলছিলেন, “ওর জন্মকুণ্ডলীতে রাজযোগ ছিল। মাত্র ৯ বছর বয়সে ওকে মানুষের জন্য কাজ করতে পাঠিয়েছিলাম। শুভদিনে শুভলগ্নে শুভকর্মে অবতীর্ণ হচ্ছে ছেলে। কামনা করি সে যেন দেশ ও জাতির সেবা করতে পারে।”