দেখতে দেখতে বছর ঘুরে গেল। কাশ্মীরে উরির সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হামলার বদলা নিতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের অন্দরে সেই অভিযানে সে দিন অন্যতম নেতা ছিলেন মেজর ‘মাইক ট্যাঙ্গো’। প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ না করে সেনার সাঙ্কেতিক নাম ব্যবহার করেই তাঁর অভিজ্ঞতার কথা লেখা হয়েছে সদ্য প্রকাশিত একটি বইয়ে। সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের বিশদ বিবরণ রয়েছে শিব আরুর এবং রাহুল সিংহের লেখা বইটিতে। সেই অভিযানের ১৪টি আলাদা আলাদা ঘটনা বর্ণনা করে তুলে ধরা হয়েছে ভারতীয় সেনার দুঃসাহসিক অভিযানের আখ্যান।
মেজর ‘মাইক ট্যাঙ্গো’ জানিয়েছেন, রাতের অন্ধকারে ওই অভিযান সেরে ফেরার সময় পদে পদে বাধা দিয়েছিল পাকিস্তানি সেনা। জঙ্গিদের যে চারটি লঞ্চপ্যাড বাছা হয়েছিল, সেগুলি পাক গুপ্তচর বাহিনী আইএসআই পরিচালনা করে। আর রক্ষা করে খোদ পাক সেনা। ফলে পাক বাহিনী যখন টের পায় শত্রুপক্ষ হামলা চালিয়ে ফিরে যাচ্ছে, তারা পাল্টা হামলা চালায়। ওই এলাকায় পাক বাহিনীর সবক’টি সীমান্ত চৌকি থেকে ভয়াবহ গোলা বর্ষণ শুরু হয়। সীমান্ত চৌকিগুলিতে যতরকমের অস্ত্র ছিল সেই সবরকমের অস্ত্র ব্যবহার করে পাক বাহিনী হামলা চালায় বলে ‘মাইক ট্যাঙ্গো’কে উদ্ধৃত করে বইটিতে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: চিন, পাকিস্তান বিপদ নয়, সুর বদলে ফেললেন বিপিন
মেজর ট্যাঙ্গোর কথায়, ‘‘আমাদের কাজ ছিল, হামলাস্থলে পৌঁছে শত্রুপক্ষের গতিবিধি নজর করা। আর সামনে যাকে পাবো, তাকে মেরে ফেলা।’’ কিন্তু মূল সমস্যা হয় ফেরার সময়। মেজরের কথায়, ‘‘ওরা যেন ঘুমের ঘোর কাটিয়ে উঠে পড়েছিল। আমরা যখন ফিরছি, গোটা বাহিনীর দিকে ধেয়ে আসে গুলির বৃষ্টি। অনেক সময় মাটিতে শুয়ে পড়তে হচ্ছিল আমাদের।’’ ট্যাঙ্গো জানিয়েছেন, এক এক সময় পিছন দিক থেকে ছুটে আসা গুলি একেবারে কান ঘেঁষে বেরিয়ে যাচ্ছিল, আক্ষরিক অর্থেই কানের পাশ দিয়ে গুলি বেরিয়ে যাওয়ার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। তবে আলো ফোটার আগেই ভারতের মাটিতে ঢুকে পড়তে সক্ষম হন তাঁরা।
আরও পড়ুন: সতর্ক ভারত, চিন সীমান্ত জুড়ে দ্রুত রাস্তা তৈরি শুরু
পাক অধিকৃত কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির যে চারটি লঞ্চ প্যাডকে টার্গেট করা হয়েছিল, সেই লঞ্চ প্যাডগুলির বিষয়ে বিশদে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছিল পাক অধিকৃত কাশ্মীরের দুই বাসিন্দার কাছ থেকে এবং দুই জইশ জঙ্গির কাছ থেকে। এই চারজনই ভারতের গুপ্তচর হিসেবে কাজ করছিলেন বলে বইটিতে জানানো হয়েছে। তবে সার্জিক্যাল স্ট্রাইট চালানোর জন্য যে পথে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকেছিল ভারতীয় বাহিনী, সেই পথে বাহিনী ফেরেনি। একটু ঘুরপথে এবং বেশ দুর্গম এলাকা দিয়ে ফেরার পথ ধরা হয়েছিল। মেজর ট্যাঙ্গো জানিয়েছেন, এই পথে ফিরতে সময় বেশি লেগেছিল। কিন্তু এই পথ অপেক্ষাকৃত নিরাপদ ছিল।