হাসপাতাল থেকে বের করে বাইরে রাখা হয়েছে রোগীদের। ছবি: রয়টার্স
ভিতরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। ব্যালকনি, জানালায় দাঁড়িয়ে সাহায্যের আর্তনাদ করছেন রোগীরা। কারও আবার ওঠারও ক্ষমতা নেই। মই লাগিয়ে জানালা ভেঙে দড়ি বেঁধে নামিয়ে আনছেন বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা।
সাত বছর আগে কলকাতার আমরি হাসপাতালের ভয়াল অগ্নিকাণ্ডের স্মৃতি ফিরল মুম্বইয়ে। অন্ধেরির একটি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হল আট জনের। আহতের সংখ্যা ১৪৬। মৃতদের মধ্যে পাঁচ মাসের একটি শিশুকন্যাও রয়েছে। আহতদের মধ্যে যে ২১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, তার মধ্যেও ৫ জন শিশু। অন্য হাসপাতালে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দেড় শতাধিক রোগীকে। তবে কী কারণে আগুন, তা এখনও স্পষ্ট নয় দমকলের কাছে।
দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার বিকেল চারটে নাগাদ অন্ধেরির সরকারি ইএসআইসি হাসপাতালে আগুন লাগার খবর পান কর্মীরা। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ছ’টি ইঞ্জিন পাঠানো হয়। পরে আরও চারটি ইঞ্জিন সহ দমকল কর্মীরা গিয়ে আগুন নেভানোর কাজে হাত লাগান দমকল কর্মীরা। খবর পেয়ে হাসপাতালে যান বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরাও। এক দিকে চলতে থাকে আগুন নেভানোর কাজ, অন্য দিকে চলে উদ্ধার কাজ।
আরও পড়ুন: বোলপুরে এক ঘরে একসঙ্গে আত্মঘাতী দুই ছাত্রী
বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা জানিয়েছেন ১৫০ জনেরও বেশি রোগীকে হাসপাতাল থেকে নিরাপদে বার করে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁদের সংলগ্ন কুপার, হোলি স্পিরিট, হীরানন্দানি, সিদ্ধার্থ, সেভেন হিলস এবং পি ঠাকরে ট্রমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতলের ভিতর থেকে উদ্ধার করে বাইরে ট্রলিতেই রাখা হয়েছে বৃদ্ধা রোগীকে। ছবি: রয়টার্
দমকল সূত্রে খবর, আট তলা হাসপাতালটির সবচেয়ে নীচের তলায় প্রথমে আগুন লাগে। একটি জায়গায় অনেক রাবারের জিনিসপত্র ডাঁই করে রাখা ছিল। সেখান থেকেই আগুন ছড়ায় বলে প্রাথমিক অনুমান। আগুন ধীরে ধীরে উপরের তলাগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে। যেসব রোগী হাঁটা চলা করার মতো পরিস্থিতিতে ছিলেন, রোগীরাও বাঁচার আশায় উপেরর তলাগুলিতে উঠতে শুরু করেন। আবার অনেকে আতঙ্কে দোতলা, তিনতলা থেকে নীচে ঝাঁপ দেন বাঁচার আশায়।
আরও পড়ুন: ‘আসসালাম আলাইকুম’-এর বদলে ‘গুড মর্নিং’! ছাত্রদের বেধড়ক পেটালেন প্রিন্সিপাল!
অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার দেখভাল বা নজরদারির দায়িত্ব মহারাষ্ট্র ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন (এমএসডিসি)। তাদের কোনও গাফিলিত আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন মুম্বইয়ের মেয়র ভি মহাদেবেশ্বর। তিনি বলেন, আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি। এমএসডিসি ঠিকঠাক আগাম পরিদর্শন করেছিল কিনা, তা তদন্ত করে দেখা হবে।
হাসপাতালের কাচ ভেঙে উদ্ধারের চেষ্টা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীদের। ছবি: এএফপি
তবে এমএসডিসি-র ডেপুটি চিফ ফায়ার অফিসার এম ডি ওগলে জানিয়েছেন, ১৫ দিন আগেই এই হাসপাতালে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা পরীক্ষা করা হয়েছিল। তাতে পাশ করতে পারেনি হাসপাতাল। আগুনের উৎস খুঁজে সাইরেন বাজানো এবং তার পর স্বয়ংক্রিয় জল ছেটানোর ব্যবস্থা (স্প্রিঙ্কলার) ঠিকমতো কাজ করেনি।
২০১১ সালে ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে আগুন লেগে মৃত্যু হয় ৮৯ জনের। বহু রোগীকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। অন্ধেরি হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ড ফের উস্কে দিয়েছে সেই ভয়াবহ ঘটনার স্মৃতি।