মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন নিয়ে ধর্নায় সনিয়া গাঁধী-সহ কংগ্রেসের নেতা-নেত্রীরা। সোমবার সংসদ চত্বরে। পিটিআই
মহারাষ্ট্র পরিস্থিতির জেরে চলতি সংসদের অধিবেশনে প্রথম বার একজোট হল বিভিন্ন বিরোধী দল। আজ সংসদের ভিতরে-বাইরে বিজেপি-বিরোধী শিবিরের নেতারা দফায় দফায় কথা বললেন নিজেদের মধ্যে। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দু’বার কথা হল তৃণমূলের লোকসভা নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মহারাষ্ট্র পরিস্থিতি নিয়ে বিরোধীদের বিক্ষোভ-মঞ্চকে কাজে লাগিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সংক্রান্ত নিজেদের ক্ষোভ ও অভিযোগকে সংসদে তুলে ধরার কৌশল নিয়েছে তৃণমূল। সুদীপবাবুর কথায়, ‘‘এই অধিবেশন শুরুর থেকেই আমরা বলে এসেছি সংসদীয় গণতন্ত্রে রাজ্যপাল থাকার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিতর্ক হোক। এই নিয়ে ১৯৩ ধারায় আলোচনার জন্য নোটিসও দেওয়া হয়েছে লোকসভায়।’’
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল রাজ্য সরকারকে অন্ধকারে রেখে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, এই অভিযোগ নিয়ে তৃণমূল সরব হয়েছিল সংসদ শুরুর আগে, সর্বদলীয় বৈঠকে। এখন মহারাষ্ট্রে রাজ্যপালের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে। তাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের দাবিকে ফের প্রাসঙ্গিক করে তোলার চেষ্টা করছে তৃণমূল। সুদীপবাবুর কথায়, ‘‘বাংলা যা আজ ভাবে, গোটা ভারত তা আগামী দিনে ভাববে। রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে সংসদে আমরাই প্রথম প্রশ্ন তুলেছিলাম।’’
সংবিধান গ্রহণের সত্তর বছর উপলক্ষে সেন্ট্রাল হলে সংসদের যৌথ অধিবেশন রয়েছে আগামিকাল। তা বয়কট করার কথা ভাবছে কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে-র মতো দলগুলি। কাল এক বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে দলগুলি। আজ রাতে সনিয়ার সঙ্গে দেখা করে শিবসেনা সাংসদরা বয়কটের পক্ষে মত জানান। কাল সকালেই বি আর অম্বেডকরের মূর্তির সামনে ধর্নায় বসবেন প্রায় সব বিরোধী দলের নেতারা। তৃণমূল সূত্রের দাবি, সংবিধান গ্রহণের সত্তর বছর পূর্তির দিন বিক্ষোভ দেখাতে হলে তা গাঁধীর তুলনায় অম্বেডকরের মূর্তির সামনে দেখানোটাই বেশি প্রতীকী হবে— এই কৌশলটি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি দূতের মাধ্যমে সম্প্রতি এই বার্তা পাঠিয়েছিলেন কংগ্রেস এবং ডিএমকে সংসদীয় নেতৃত্বকে। আজ তারই ভিত্তিতে সনিয়ার সঙ্গে সুদীপ কথা বলেন বলে জানাচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের কথায়, ‘‘ধর্না সংক্রান্ত গোটা পরিকল্পনাটিই আমাদের নেত্রীর। কংগ্রেস সহমত না হলে আমরা নিজেরাই করতাম।’’
লোকসভায় আজ সকালে কংগ্রেসের ও তৃণমূল পৃথক ভাবে মহারাষ্ট্র নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব দেয়। রাজ্যসভায় একই প্রস্তাব দেয় ডিএমকে এবং বামেরা। অধিবেশন ভন্ডুল হওয়ার পর দুপুর দু’টোর সময় ফের লোকসভা চালু হলে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্লোগানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আওয়াজ তুলতে দেখা যায় গোটা কংগ্রেস বেঞ্চকে! সূত্রের খবর, সংসদ মুলতুবি হলে অধিবেশন কক্ষেই সনিয়া এসে দেখা করেন সুদীপ, কল্যাণদের সঙ্গে। কল্যাণকে স্লোগান দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান সনিয়া। সুদীপকে পরে ফোন করে ধর্নার ব্যাপারে পরিকল্পনা চূড়ান্তও করেন।
চলতি অধিবেশনে কংগ্রেস ও তৃণমূলকে এত কাছাকাছি আসতে দেখা যায়নি। রাজনৈতিক সূত্রের ব্যাখ্যা, এত দিন পশ্চিমবঙ্গে উপনির্বাচনে মুখোমুখি লড়ছিল কংগ্রেস এবং তৃণমূল। ফলে দিল্লিতে সনিয়ার দলের প্রতি সৌহার্দ্যের বার্তা দেওয়া সম্ভব ছিল না তৃণমূলের। আজ রাজ্যে ভোট শেষ হয়ে যাওয়ার পর চলতি অধিবেশনের বাকি দিনগুলিতে সংসদে দু’দলের কক্ষ সমঝোতার পরিসর তৈরি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।