শরদ পওয়ার, সনিয়া গাঁধী এবং উদ্ধব ঠাকরে (বাঁ দিক থেকে)।
শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের কোর্টেই বল। মহারাষ্ট্রে শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস সরকার গঠনের সূত্র প্রায় পাকা। এখন শুধু কংগ্রেস হাইকমান্ড ‘হ্যাঁ’ করলেই আপাতত সরকার গঠন নিশ্চিত হবে।
উদ্ধব ঠাকরে-শরদ পওয়ার দু’জনই এখন তাকিয়ে সনিয়া গাঁধীর দিকে। কংগ্রেসও ইতিমধ্যে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক করেছে। বিকেলে মহারাষ্ট্রের দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর চূড়ান্ত মতামত জানাবে দল। শিবসেনার একটি সূত্র জানাচ্ছে, উদ্ধব ঠাকরে সনিয়াকে ফোন করেছেন। অন্য দিকে, দলের হাত শিবসেনা-এনসিপিকে সমর্থনের দিকেই ঝুঁকে বলেই কংগ্রেস সূত্রে খবর।
সোমবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে শিবসনার একমাত্র সদস্য ইস্তফা দেওয়ার পরেই মহারাষ্ট্রে এনসিপি-র সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা জোরদার হয়। এনসিপি নীতিগত ভাবে সরকার গঠনে সম্মত হলেও শরদ পওয়ার বল ঠেলে দেন কংগ্রেসর কোর্টে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কংগ্রেসও অবস্থান অনেকটাই নরম করেছে। সকালের দিকেই দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হয়েছে দিল্লিতে। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতার ইঙ্গিত, তাঁরাও মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনে শিবসেনা-বিজেপি জোটকে সমর্থনের পক্ষেই মত প্রকাশ করেছেন। যদিও সেটা সর্বসম্মত নয়। বিরুদ্ধ মতামতও রয়েছে। বৈঠকের পরে ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, ‘‘মহারাষ্ট্রের নেতারা কী চাইছেন, সেটা নিয়ে আমরা আলোচনা করব।’’
আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্রে সেনা-বিজেপি দ্বন্দ্বে নয়া মোড়, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে শিবসেনার ইস্তফা
এ দিন বিকেলে মহারাষ্ট্রের নেতাদের বৈঠকে ডেকেছেন সনিয়া গাঁধী। সূত্রের খবর, মহারাষ্টের তিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বণ, অশোক চহ্বণ এবং সুশীল কুমার শিন্ডে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বালাসাহেব থোরাট-সহ দলের ছয় নেতা সেই বৈঠকে হাজির থাকবেন। তাঁদের মতামত জানার পরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন সনিয়া। অশোক চহ্বণ বলেছেন, ‘‘যা যা বিকল্প আছে, সব নিয়েই আমরা আলোচনা করছি। এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’’ তবে সমর্থনের পক্ষে ইঙ্গিত করে তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘কংগ্রেস মহারাষ্ট্রে স্থায়ী সরকারের পক্ষে এবং রাষ্ট্রপতি শাসনের বিপক্ষে।’’
কিন্তু কংগ্রেসের একটি সূত্রের ইঙ্গিত, সেনা-এনসিপি জোটকে সমর্থনের প্রশ্নে মহারাষ্ট্রের নেতারাও দু’ভাগ। এক পক্ষ সরকারে যেতে চাইলেও শিবসেনার সঙ্গে সরকার গঠনে আপত্তি রয়েছে তাঁদের একাংশের। মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস বিধায়ক সঞ্জয় নিরুপম যেমন টুইটারে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, যে সমীকরণই হোক, শিবসেনাকে সমর্থন করা কংগ্রেসের জন্য বিপজ্জনক হবে। ফলে এ নিয়ে দিল্লির নেতারাও চাপে। অথচ শরদ পওয়ার এ দিন দলের কোর কমিটির বৈঠকের পর সেই কংগ্রেস নেতৃত্বের উপরেই সিদ্ধান্তের ভার ছেড়েছেন। কার্যত ইঙ্গিত দিয়েছেন, কংগ্রেসের সবুজ সঙ্কেত পেলে শিবসেনার সঙ্গে সরকার গঠনে তাঁর কোনও আপত্তি নেই।
আরও পডু়ন: ‘সর্বনাশা পদক্ষেপ’, সেনার সঙ্গে হাত মেলানো নিয়ে দলকে সতর্কবার্তা কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় নিরুপমের
২৪ অক্টোবর ফল বেরনোর পর থেকেই ৫০:৫০ ফর্মুলা নিয়ে বিজেপি-শিবসেনা সঙ্ঘাত। সেই আবহেই বিকল্প হিসেবে শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোটের সরকার গঠনের জল্পনা চলছিল। সেনা নেতৃত্বও প্রথম থেকে সেই জল্পনা ভাসিয়ে রেখেছিলেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা এমনও বলছিলেন যে, শেষ পর্যন্ত বিজেপি-সেনা সমঝোতা না হলে এনসিপি-শিবসেনা জোট মিলে সরকার গঠন হতে পারে। এনসিপি আবার কংগ্রেসের শরিক। কিন্তু কংগ্রেস নীতিগত ভাবে শিবেসনার সঙ্গে সরকার গঠন করতে পারবে না। তাই বাইরে থেকে সেনা-এনসিপি সরকারকে সমর্থন করতে পারে। কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি সনিয়া গাঁধী আগে জানিয়েছিলেন, শিবসেনাকে সমর্থন করবে তাঁদের দল। কিন্তু বিজেপি সরকার গঠনের দাবি করবে না, এই ঘোষণার পরেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। সরকার গঠনের দাবি জানানোর তোড়জোড় শুরু করে শিবসেনা। পওয়ার আগেই শিবসেনাকে শর্ত দিয়েছিলেন, এনসিপির সঙ্গে সরকার গঠন করতে হলে এনডিএ জোট থেকে বেরিয়ে আসতে হবে তাদের। সেই শর্ত মেনেই আজ সোমবার সকালে কেন্দ্রে শিবসেনার একমাত্র মন্ত্রী ইস্তফা দিয়ে এনডিএ থেকে বেরিয়ে আসার বার্তা দিয়েছেন। পাশাপাশি উদ্ধব ঠাকরে নিজে শরদ পওয়ারের সঙ্গে বৈঠক করেন। দু’দল নীতিগত ভাবে সরকার গঠনে ঐকমত্যে পৌঁছয়।