দেবেন্দ্র ফডণবীস (বাঁ দিকে) ও উদ্ধব ঠাকরে। —ফাইল চিত্র
মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন নিয়ে শিবসেনা-বিজেপি সঙ্ঘাত আরও উচ্চগ্রামে পৌঁছল। মঙ্গলবার বিকেল ৪টেয় বিজেপির সঙ্গে বৈঠক ছিল শিবসেনার। সেই বৈঠক সেনা বাতিল করে। এ দিনই দেবেন্দ্র ফডণবীস ঘোষণা করেন, পাঁচ বছরের জন্য তিনিই মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন। এর পরেই বৈঠক বাতিলের ঘোষণা করে শিবসেনার মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত বলেন, এই ঘোষণার পরে বৈঠকের আর কোনও অর্থ নেই।
২০১৪ সালে আলাদা লড়াই করে যে আসন পেয়েছিল বিজেপি, এ বার বিধানসভা নির্বাচনে তার চেয়ে আসন কমেছে। অথচ এ বার ভোটের আগে থেকেই বিজেপি-শিবসেনা জোট হয়েছিল। অন্য দিকে, শিবসেনারও আসন কমেছে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতাও পায়নি পদ্ম শিবির। বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় দর কষাকষি শুরু করে সেনা। দলের নেতারা ৫০-৫০ ফর্মুলা অর্থাৎ আড়াই বছর বিজেপির এবং বাকি আড়াই বছর সেনার মুখ্যমন্ত্রী করার শর্ত দেয়। কিন্তু বিজেপি তাতে গোড়া থেকেই অনড় ছিল।
এই নিয়ে দু’দলের দড়ি টানাটানি চলছিলই। তবু সমাধান সূত্র খুঁজতে এ দিন বিকেল চারটেয় বিজেপি-শিবসেনার বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই ফডণবীস ঘোষণা করে দেন, ফিফটি-ফিফটি ফর্মুলার কোনও আলোচনাই হয়নি। তিনিই মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসছেন এবং সেটা পাঁচ বছরের জন্য, স্পষ্ট জানিয়ে দেন ফডণবীস। এর পরে দুই দলের সঙ্ঘাত আরও বাড়ে। তার কিছুক্ষণ পরেই বৈঠক বাতিল করেন শিবসেনা নেতৃত্ব।
সঞ্জয় রাউত এ দিন বিকেলে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজে ৫০-৫০ ফর্মুলার কথা বলেছেন। উদ্ধব ঠাকরেও বলেছেন। অমিত শাহের সামনেই সেটা হয়েছিল। এখন ওঁরা যদি বলেন যে, এই ধরনের কোনও কথা হয়নি, তাহলে ওঁদের প্রণাম করি। ক্যামেরার সামনে যেটা বলেছিলেন, সেটাও উনি অস্বীকার করছেন।’’ কটাক্ষের সুরে তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি জানি না মুখ্যমন্ত্রী কীবলেছেন। উনি যদি বলেন, ৫০-৫০ ফর্মুলা কখনও আলোচনা হয়নি, তাহলে আমি মনে করি, সত্যের সংজ্ঞা পাল্টে দেওয়া উচিত। মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিয়ে যে আলোচনা হয়েছিল, তা সবাই জানে। সংবাদ মাধ্যমও সেখানে ছিল।’’ অর্থাৎ বিজেপি মিথ্যে বলছে বলেই ঘুরিয়ে বলতে চেয়েছেন সঞ্জয়।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের থেকে মুক্তি চেয়ে তুমুল বিক্ষোভ অধিকৃত কাশ্মীরে, চলছে সেনা পীড়ন, বাইরে এল ভিডিয়ো
আরও পড়ুন: অর্থনীতি চাঙ্গা করতে কর সংস্কারেই আস্থা মোদীর, আগামী বাজেটেই পদক্ষেপের সম্ভাবনা
এর পরেই বৈঠক বাতিলের কথা জানিয়ে সঞ্জয় বলেন, ‘‘বিকেল চারটেয় বৈঠকের সময় নির্ধারিত হয়েছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীই যদি বলে দেন যে ৫০-৫০ ফর্মুলা আলোচনা হয়নি, তাহলে কী নিয়ে আমরা কথা বলব? কিসের ভিত্তিতে ওঁদের সঙ্গে কথা বলব? তাই উদ্ধব ঠাকরে বৈঠক বাতিল করেছেন।’’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ব্যাখ্যা, বৈঠকের আগে শিবসেনার উপর চাপ বাড়াতেই ফডণবীসের মাধ্যমে বিজেপি চাপ বাড়াতে চেয়েছিল। কিন্তু তাতে কার্যত হিতে বিপরীত হয়েছে। আড়াই বছর মুক্যমন্ত্রীর দাবিতে আরও অনড় অবস্থানে চলে গেল বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। পাশাপাশি এই ঘোষণার পরে শিবসেনা এ বার বিকল্প পথের সন্ধান করতে পারে বলেও একটি অংশের মত। অর্থাৎ শরদ এনসিপি-কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের কথাও ভাবতে পারে, যে জল্পনা ভোটের ফল ঘোষণার পর থেকেই জিইয়ে রেখেছেন শিবসেনা নেতৃত্ব।