গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
ফুড ডেলিভারি অ্যাপে খাবারের অর্ডার দিলে সাধারণত কিসের অপেক্ষায় থাকেন? অনেকেই বলবেন, কখন খাবার আসবে, সেই অপেক্ষাতেই হাপিত্যেশ করে বসে থাকেন তাঁরা। তবে মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরের বাসিন্দা অমিত শুক্লের কাছে বোধহয় খাবারের থেকেও তার অর্ডারের ডেলিভারি এগ্জিকিউটিভ কোন ধর্মের, তা জরুরি। এবং তিনি হিন্দু ধর্মের না হলে অমিত সেই খাবারের অর্ডারও বাতিল করে দেন।
মঙ্গলবার ঠিক এমনটাই করেছেন অমিত। জোম্যাটো নামে একটি ফুড ডেলিভারি অ্যাপে খাবারের অর্ডার দিয়েছিলেন তিনি। তবে ওই অর্ডার দেওয়ার পর অমিত জানতে পারেন, তাঁর খাবার নিয়ে আসছেন ফৈয়াজ নামের এক অ-হিন্দু ব্যক্তি। সঙ্গে সঙ্গে সেই অর্ডার বাতিল করে দেন অমিত। কারণ? অমিত জানিয়েছেন, কোনও অ-হিন্দুর কাছ থেকে খাবারের ডেলিভারি নেবেন না। ফৈয়াজের বদলে অন্য কাউকে দিয়ে ডেলিভারি করানোর অনুরোধ জানালেও তা খারিজ করে দেয় জোম্যাটো।
অর্ডার বাতিলের সেই কারণ দেখিয়েই জোম্যাটোর কাছ থেকে টাকা ফেরত চান অমিত। তবে তা করার পর ওই অ্যাপ মালিকের কাছ থেকে যে প্রত্যুত্তর পেয়েছেন অমিত, তা বাহবা কুড়োচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
গত কাল অর্ডার বাতিল করলেও তার টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করেন জোম্যাটোর কাস্টমার কেয়ার এগ্জিকিউটিভ। সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক টুইট করতে শুরু করেন অমিত। টাকা ফেরত না পেলে আদালতে যাবেন বলেও হুমকি দেন তিনি। টুইটার হ্যান্ডলে ‘নামো_সরকার’ নামধারী অমিত লেখেন, ‘এইমাত্র জোম্যাটোর অর্ডার বাতিল করলাম। আমার খাবার নিয়ে আসছেন এক জন অ-হিন্দু রাইডার। ওরা জানাচ্ছে, আমার রাইডার বদল করবেন না আর অর্ডার বাতিল করলেও টাকা ফেরত দেবে না। আমি বলেছি, ওই ডেলিভারি নিতে আমার উপর জোর খাটানো যাবে না।’
তবে অমিতের রণং দেহী মনোভাবেও দমে যাননি ওই অ্যাপ কর্তৃপক্ষ। জোম্যাটোর তরফে অমিতকে টুইটারে পাল্টা জানানো হয়, ‘খাবারের কোনও ধর্ম নেই। খাদ্যই ধর্ম।’
জোম্যাটোর তরফে এই প্রত্যুত্তরের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশংসার ঝড় উঠেছে।ধর্মান্ধতা ও হিংসার এই উদাহরণকে সমর্থন না করায় সদর্থক ভাবে সাড়া দিয়েছেন বহু নেটিজেন। এক জন লিখেছেন, ‘দারুণ বলেছেন। কর্পোরেট জগৎ যে ক্রমবর্ধমান ধর্মান্ধতার ও হিংসাকে বর্জন করছে, তা সত্যিই বিরল।’
এখানেই থেমে থাকেননি ওই অ্যাপ কর্তৃপক্ষ।বুধবার সকালে বিষয়টি নিয়ে নিজেই আসরে নামেন জোম্যাটোরপ্রতিষ্ঠাতা দীপিন্দ্র গয়াল। এ দিন টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের ক্রেতা, ব্যবসায়িক সহযোগী তথা ভারতের বিবিধতায় ভাবাদর্শে আমরা গর্বিত।আমাদের এই মূল্যবোধের অন্তরায় হবে এমন কোনও কিছুর ফলে ব্যবসায়িক ক্ষতি হলেও দুঃখিত নই।’
আরও পড়ুন: সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন ফেলে ১৪০ বছরের প্রাচীন পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরেই কফি-ব্যারন
আরও পড়ুন: উন্নাও নির্যাতিতার চিঠি কেন পাননি, জবাব তলব প্রধান বিচারপতির, কাল শুনানি সুপ্রিম কোর্টে
দীপিন্দ্রর এই জবাবেও মুগ্ধ অনেকে। এক জন নেটিজেন লিখেছেন, ‘একটা স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠাতার কাছ থেকে এমন জবাবই প্রয়োজন।’ অনেকে আবার পরের খাবারের অর্ডারগুলিও যে ওই অ্যাপ থেকেই করবেন, সে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর এক নেটিজেন বলেন, ‘এই দুঃসময়ে ভারতের ভাবাদর্শকে তুলে ধরার জন্য অনেক ভালবাসা।’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।