কবিতা খন্না
মন্ত্রীর বয়স ৫৯। বলিউডের নায়কের বয়স ৬২। সেই নায়কই যখন মন্ত্রীর দলে যোগ দিলেন, তখন তাঁকে বিশেষণের দীর্ঘ তালিকায় ভরিয়ে দিতে দিতে মন্ত্রী বললেন, ‘‘ইয়ং।’’ যা নিয়ে রসিকতায় ফেটে পড়ল টুইটার।
মন্ত্রীটি হলেন নির্মলা সীতারামন। নায়ক— গত কালই বিজেপিতে যোগ দেওয়া সানি দেওল। ধর্মেন্দ্র-পুত্রকে দলে স্বাগত জানাতে গিয়ে গত কাল প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘আগুনে জনপ্রিয়, নিজের শিল্পের প্রতি একনিষ্ঠ, বলিউডের তরুণ, মহান শিল্পী শ্রী সানি দেওলকে স্বাগত জানাতে পেরে আমি সত্যিই খুব খুশি।’’
একটু পরেই সংবাদ চ্যানেল থেকে নির্মলার মন্তব্যের ক্লিপিং তুলে টুইট করে দু’এক জনকে লিখতে দেখা যায়, ‘‘তরুণ! উনি তো আপনার থেকেও বয়সে বড়।’’
প্রতিরক্ষামন্ত্রী অবশ্য একই সঙ্গে ‘বর্ডার’-এর কথা তুলে বলেছেন, ওই ছবিতে সাধারণ মানুষের মনে জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের তার ছুঁয়ে গিয়েছিলেন সানি। রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালও বলছিলেন, সানি কী ভাবে তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। একটু পরেই ঘোষণা হয়ে যায়, পঞ্জাবের গুরুদাসপুরে পদ্মফুল চিহ্নে প্রার্থী হয়ে গিয়েছেন ববি দেওলের অগ্রজ।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
মন্ত্রীরা গদগদ, কিন্তু এক জন নন। তিনি গুরদাসপুরের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ তথা বলিউডের অতীতের আর এক নায়ক, প্রয়াত বিনোদ খন্নার স্ত্রী কবিতা। টিকিট না-পেয়ে কবিতা বলেছেন, ‘‘নিজেকে প্রতারিত মনে হচ্ছে। যাঁরা আমাকে নিজেদের সাংসদ হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন, তাঁদের ইচ্ছেটাকে উপেক্ষা করা হল।’’ তা হলে তিনি কি নির্দল হিসেবে লড়বেন গুরুদাসপুরে? কবিতা বলছেন, ‘‘আমি কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি। কিছু ঠিক করিনি। সব সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছি।’’
১৯৯৮, ১৯৯৯, ২০০৪, ২০১৪— চার বার এই আসন থেকে জিতেছিলেন বিনোদ। অটলবিহারী বাজপেয়ীর সরকারে মন্ত্রী হয়েছিলেন। নিজের কেন্দ্রের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোকে জুড়তে এতগুলো সেতু বানিয়েছিলেন যে, ‘সর্দার অব ব্রিজেস’ ডাকনামও পেয়ে গিয়েছিলেন। গত জানুয়ারিতে এখানে এসে জনসভায় খোদ নরেন্দ্র মোদী বলে গিয়েছিলেন, ‘‘বিনোদ খন্না আধুনিক ও উন্নত গুরুদাসপুরকে দেখতে চেয়েছিলেন। তাঁর স্বপ্নটা দেখতে হবে আমাদের।’’
বিনোদের মৃত্যুর পরে ২০১৭-র উপনির্বাচনেও কবিতার প্রার্থী হওয়া নিয়ে জল্পনা চলেছিল। শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ী স্বর্ণ সালারিয়াকে টিকিট দেয় বিজেপি। কংগ্রেসের সুনীল জাখরের কাছে বিশাল ব্যবধানে হারেন তিনি। কিন্তু সে ছিল উপনির্বাচন। পূর্ণ মেয়াদের সাংসদ হিসেবে লোকসভা ভোটে বিজেপি তাঁকে প্রার্থী করবেই বলে ধরে নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহে গুরুদাসপুরের দলীয় কর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ বাড়াচ্ছিলেন কবিতা। আজ তিনি বলছেন, ‘‘আমি এখানে ২০ বছর ধরে কাজ করছি। বিনোদজি যখন অসুস্থ ছিলেন, তখন ওঁর নির্বাচনী কেন্দ্রের মানুষদের সঙ্গে আমিই দেখা করতাম। মানুষ আমাকেই সাংসদ হিসেবে দেখতে চাইছিল। জীবন একটা যাত্রা। ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখি।’’