National- Lok Sabha Election 2019

অন্তিম দফায় নিজের কেন্দ্রে পরীক্ষা মোদীর

আজ ষষ্ঠ দফার ভোটের পরে শুধু উত্তরপ্রদেশ নিয়েই বিরোধী শিবিরের দাবি, ১৪টির মধ্যে অন্তত ১০টি পাবে এসপি-বিএসপি জোট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও পটনা শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৯ ০১:৫৬
Share:

—ফাইল চিত্র।

সন্ধ্যার পরে ঝড় উঠেছে নবাবের শহর লখনউয়ে। সঙ্গে দু’-এক পশলা বৃষ্টিও। প্রশ্ন হল, উত্তরপ্রদেশের পশ্চিম থেকে আসা সেই ঝড় কি আছড়ে পড়বে পূর্বাঞ্চলেও?

Advertisement

ঝড় তো রূপক মাত্র। গত বার ছিল ‘মোদী-ঝড়’। এ বারও কি তা-ই, নাকি বিরোধী ঝড়? আজই উত্তরপ্রদেশে ১৪টি কেন্দ্রে ভোট হওয়ার পরে গো-বলয়ের সব থেকে বড় রাজ্যে বাকি রইল ১৩টি আসনে ভোট। সবই পূর্বাঞ্চলে। আর ওই এলাকাতেই রয়েছে নরেন্দ্র মোদীর বারাণসী। আছে যোগী আদিত্যনাথের গোরক্ষপুরও। কিন্তু তার জন্য অপেক্ষা আরও এক সপ্তাহ। চূড়ান্ত ফল প্রায় দেড় সপ্তাহ পরে। বারাণসী জয় এক রকম নিশ্চিত হলেও শেষ দফায় ছক্কা হাঁকিয়ে কুর্সি কি ধরে রাখতে পারবেন মোদী?

আজ ষষ্ঠ দফার ভোটের পরে শুধু উত্তরপ্রদেশ নিয়েই বিরোধী শিবিরের দাবি, ১৪টির মধ্যে অন্তত ১০টি পাবে এসপি-বিএসপি জোট। চারটি আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বিজেপির সঙ্গে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যোগীর রাজ্যে ভোট পড়েছে ৫৪.৫৩ শতাংশ। যে হার দেখে খুশি নন মোদী-অমিত শাহ। সংলগ্ন দিল্লির ভোটও চিন্তায় রেখেছে বিজেপিকে। বিশেষ করে আজ শেষ বেলায় রাজধানীর বিভিন্ন কেন্দ্রে যে ভাবে লাইন পড়েছে, সেই ভোটারদের ভোট আপের ঝুলিতে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে তারা। ঝাড়খণ্ডের ভোট দেখে স্বস্তিতে ছিল বিজেপি। কেন্দ্রীয় নেতারা ভেবেছিলেন, বিহারে বিরোধী মহাজোটকে সাফ করে দেবে এনডিএ। কিন্তু এখন ব্যাপারটা ঠিক তেমন হবে না বলেই মনে করছেন তাঁরা। হরিয়ানায় আবার বিজেপিকে চিন্তায় রেখেছে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

হাওয়া বুঝে আগামী ২১ মে দিল্লিতে বিরোধী দলগুলির একটি বৈঠক করার প্রস্তাব উঠেছে বিভিন্ন মহলে। যদিও ফল বেরোনোর আগে সেই বৈঠকে যেতে বিশেষ আগ্রহী নন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই কারণে উৎসাহ নেই অখিলেশ-মায়াবতীর। আবার মোদী-অমিত শাহরা প্রকাশ্যে দাবি করছেন, সরকার গঠন নিয়ে বিরোধীদের কোনও বৈঠকের প্রয়োজনই হবে না। কারণ, বর্তমান সরকারকেই ফিরিয়ে আনার জন্য ঝড় উঠেছে।

তলে-তলে কিন্তু বিজেপি নেতাদেরই একাংশ কবুল করছেন, উত্তরপ্রদেশে ৩০টি আসন হাতছাড়া হতে পারে বলে ধরেই রেখেছেন তাঁরা। যদি তা-ই হয়, সে ক্ষেত্রে বিজেপির দাবি অনুযায়ী আসন বাড়বে কোথা থেকে? গত ভোটে গুজরাত, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়ের মতো রাজ্যগুলিতে নিজেদের রেকর্ড সংখ্যক আসন পেয়েছিল বিজেপি। বর্তমানে কংগ্রেস শাসিত তিনটি-সহ ওই রাজ্যগুলিতে এ বার আর তত আসন পাওয়া যাবে না বলে ধরেই নিচ্ছে তারা। ভরসা তাই পূর্ব ও উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি। কারণ দক্ষিণে এখনও সে ভাবে দাঁত ফোটাতে পারেনি বিজেপি।

আজকের পরে হিমাচল প্রদেশ, পঞ্জাব, চণ্ডীগড়ের পাশাপাশি বিহারের ৮টি, ঝাড়খণ্ডের ৩টি, মধ্যপ্রদেশের ৮টি, উত্তরপ্রদেশের ১৩টি এবং পশ্চিমবঙ্গের ৯টি আসনে ভোট বাকি। আটটি রাজ্যের ৫৯টি আসনে ভাল ফল করতে এখন মরণ কামড় দেবে সব দল। রাহুল গাঁধী অবশ্য বলছেন, ‘‘ভোটের নির্ঘণ্ট এমন ভাবে ঠিক করা হয়েছে, যাতে বিজেপিরই ফায়দা হয়।’’ নির্বাচন কমিশনের দিকেই তাঁর ইঙ্গিত।

শেষ পর্বে মূলত পরীক্ষায় বসতে চলেছেন সাংসদ নরেন্দ্র মোদী। শুরু থেকে দু’টি আসনে লড়ার জল্পনা চললেও শেষ পর্যন্ত শুধু বারাণসীকেই বেছে নিয়েছেন মোদী। প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা সরে আসায় কাশী জয় এক রকম নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে মোদীর। কিন্তু তাঁর পরীক্ষাটা তো মোটেই নিজের আসন ধরে রাখা নয়।

আসল কথা হল, ‘হাওয়া’। গত বার বারাণসী থেকে মোদীকে আচমকাই প্রার্থী করে উত্তরপ্রদেশের পূর্বাঞ্চলে হাওয়া ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছিল বিজেপি। লোকসভা ভোটের আগেও মোদী নিজেও বারবার বলতেন, ‘‘পাটিগণিত নয়, রসায়নই ভোটের ফল নির্ধারণ করবে।’’ কিন্তু এ বার মায়াবতী-অখিলেশের জোট হয়ে যাওয়ার পরে পাটিগণিত অনেকটাই বিজেপির বিপক্ষে। কাশী-লাগোয়া গাজিপুর, মির্জাপুর, চন্দৌলির মতো কেন্দ্রগুলিতে এ বার জোটের হাওয়া প্রবল। তবু অমিত শাহের দাবি, ‘‘পাটিগণিত এবারও পরাস্ত হবে।’’

বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া আজ মোটের উপর শান্তিতে ভোট মিটেছে বিহারে। আজ সেই রাজ্যের আটটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ ছিল। বিকেল ছ’টা পর্যন্ত রাজ্যে গড় ভোট পড়েছে ৫৯.৩৮ শতাংশ। এ দিন সকালে শিওহরের ২৭৫ নম্বর বুথে হোমগার্ডের রাইফেল থেকে আচমকা গুলি ছুটে যায়। তাতে বুথের দায়িত্বপ্রাপ্ত পোলিং অফিসার জখম হন। মুজফ্‌ফরপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি মারা যান। পুলিশ জানিয়েছে মৃতের নাম শিবেন্দ্র কুমার। তিনি পেশায় স্কুল শিক্ষক। পুলিশ হোমগার্ডকে গ্রেফতার করেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement