পাঁচ বছর আগে দেশকে কংগ্রেস-মুক্ত করতে চেয়েছিলেন। পাঁচ বছর পর দেশকে বিজেপি-মুক্ত করে দিয়েছেন খোদ নরেন্দ্র মোদী!
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিরোধী শিবিরে এমন একটি রসিকতা মুখে মুখে ঘুরছে রাজধানীতে। আর এই রসিকতা শুনলে রেগেও যাচ্ছেন না বিজেপি নেতারা। বরং একগাল হেসে বলছেন, এ আর এমন কী!
কিন্তু খোদ নরেন্দ্র মোদী দেশকে ‘বিজেপি-মুক্ত’ করে দিয়েছেন, সে কথায় কেন রে-রে করে উঠছে না বিজেপি? কারণ, এই রসিকতার উৎস লোকসভার ভোটে বিজেপির কৌশল। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, কচ্ছ থেকে কোহিমা— বিজেপি ভোট চাইছে শুধু মোদীর নামে। পোস্টার, ব্যানার, বিজ্ঞাপন— সবেতেই মোদী। বিজেপির ছোট-বড় নেতাদের মুখেও মোদী। অমিত শাহের মুখেও মোদী। এমনকি খোদ নরেন্দ্র মোদীর মুখেও মোদী! কখনও-সখনও মুখ ফস্কে অবশ্য বিজেপির নাম বেরোচ্ছে। আর যখন পদ্মফুলে ছাপ দেওয়ার কথা বলছেন, তখন। বঙ্গে গিয়ে যখন ভাঙা ভাঙা বাংলায় মোদী বলছেন, ‘‘চুপে চাপ, কমল ছাপ।’’ যার ফলে সব মিলিয়ে এখন বিজেপিকেই অনেক পিছনে ফেলে দিয়ে গোটা ভোট হচ্ছে মোদীর নামে। মোদী নামের ঢক্কানিনাদে অটলবিহারী বাজপেয়ী-লালকৃষ্ণ আডবাণীদের হাতে গড়া বিজেপিকেও ছাপিয়ে গিয়েছেন এক ব্যক্তি। যে কারণে এক সংবাদমাধ্যমের সাম্প্রতিক সমীক্ষাতেও দেখা যাচ্ছে, খোদ প্রধানমন্ত্রী নিজেই ‘মোদী’ নাম নিচ্ছেন সবথেকে বেশি!
যে স্বভাবকে কংগ্রেসের নেতা পি চিদম্বরম অ্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘ইলিইজ়ম’। যার অর্থ, কথা বলতে গিয়ে নিজেকেই ‘তিনি’ বলে সম্বোধন করা। নিজেকেই ‘তৃতীয় পুরুষ’ বলে উল্লেখ করা। কিন্তু বিজেপি বলছে, ‘‘ভোট তো মোদীর নামেই হচ্ছে। এটি শুধু বিজেপির একার কৌশল বললে ভুল হবে। বিরোধীরাও তেড়েফুঁড়ে মোদীকেই হঠানোর কথা বলছে। ফলে এ বারের ভোটটি স্বাভাবিক কারণেই মোদী ও মোদী-বিরোধিতা কেন্দ্রিক। যে কারণে ভোটের জমিতেও ভোটারদের মনে একটিই প্রশ্ন, মোদীকে ফের আনা হবে না কি হবে না?’’
জনসভায় ঠিক এই কথাটিও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। অমিত শাহও যে কারণে বিরোধী শিবিরের নেতৃত্বের প্রসঙ্গটি বারবার টেনে আনেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘আমাদের নেতা তো নরেন্দ্র মোদী। আপনাদের কে?’’ নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে আরও শান দিতে বারবার প্রচার করা হয়, কেন্দ্রের যাবতীয় প্রকল্প যেন শুধু মোদীই দিয়েছেন। তা সে রান্নার গ্যাস হোক, বা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। কিন্তু কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ‘‘এই ব্যক্তি ভজনা করতে গিয়ে বিজেপি নামক একটি দল যে আছে, সেটিই তো মানুষ ভুলতে বসেছে। যে কারণে মোদীকেও এখন বুকে পদ্মফুল নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে।’’