মায়াবতী।—ফাইল চিত্র।
কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে যাওয়ার প্রশ্নই নেই। আগে এমনটা জানিয়ে দিয়েছিলেন মায়াবতী। এ বার কংগ্রেসের বিরুদ্ধে জোর করে ঘাড়ে চেপে বসার অভিযোগ তুললেন তিনি।
মায়া-অখিলেশ জুটিকে ছাড় দিতে উত্তরপ্রদেশে ৭ আসনে প্রার্থী দেবে না বলে রবিবার জানিয়েছিল কংগ্রেস। তাতেই ফুঁসে উঠেছেন বিএসপি নেত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘এসপি-বিএসপি মিলেই বিজেপিকে হারাতে পারে। কংগ্রেসের দয়ার প্রয়োজন নেই আমাদের।’’
প্রয়াগরাজ থেকে নরেন্দ্র মোদীর কেন্দ্র বারাণসী পর্যন্ত গঙ্গাবক্ষে প্রচার উপলক্ষে রবিবারই লখনউয়ে পৌঁছন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। সেখানে উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি রাজ বব্বর জানান, মায়াবতী, মুলায়ম সিংহ যাদব, অখিলেশ যাদব, তাঁর স্ত্রী ডিম্পল, অজিত সিংহ ও জয়ন্ত চৌধরী যে যে আসনে প্রার্থী হবেন, সেখানে প্রার্থী দেবে না কংগ্রেস। মুলায়ম মইনপুরী, তাঁর ভাইপো অক্ষয় যাদব ফিরোজাবাদ থেকে লড়বেন। আজমগড় বা অন্য আসন থেকে যদি অখিলেশ লড়েন, সে ক্ষেত্রে সেখানেও প্রার্থী দেবে না কংগ্রেস।
আরও পড়ুন: আজ বিজেপির প্রার্থীতালিকা প্রকাশ, রাজ্যে কে কোথায় প্রার্থী, জল্পনা তুঙ্গে
এই ঘোষণার পর আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে মায়া-অখিলেশের সঙ্গে কংগ্রেসের সমঝোতা নিয়ে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়। তা জানতে পেরেই সোমবার সকালে টুইটারে কংগ্রেসকে তুলোধোনা করেন মায়াবতী। তিনি লেখেন, ‘‘ফের একবার নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছে বিএসপি। উত্তরপ্রদেশ এমনকি গোটা দেশের কোথাও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নেই আমাদের। ইচ্ছাকৃত ভাবে এমন পরিস্থিতি তৈরি করছে কংগ্রেস, যাতে মানুষের মনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। ওদের ফাঁদে পা দেবেন না।’’
মায়াবতী আরও লেখেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে একাই লড়ছে কংগ্রেস। চাইলে ৮০টি আসনেই প্রার্থী দাঁড় করাতে পারে। আমরা যে জোট তৈরি করেছি, তা বিজেপিকে পরাজিত করতে সক্ষম। ইচ্ছাকৃতভাবে মানুষকে ভুল না বোঝালেই পারে কংগ্রেস। জোটসঙ্গী হিসাবে আমাদের ৭টি আসন ছেড়ে দিচ্ছে, এমন বিভ্রান্তি যেন ওরা না ছড়ায়।’’
মায়াবতীর টুইট।
এর আগে, ২০১৭-য় উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছিল অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি। তাতে পরাজিত হলেও এতদিন কংগ্রেসের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন অখিলেশ যাদব। কিন্তু এ দিন মায়াবতীর মন্তব্য তুলে ধরে টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে বিজেপিকে হারাতে সক্ষম এসপি-বিএসপি এবং রাষ্ট্রীয় লোকদলের (আরএলডি) জোট। এ নিয়ে কংগ্রেস যেন বিভ্রান্তি তৈরি না করে।’’
অখিলেশ যাদবের টুইট।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচন উপলক্ষে দীর্ঘ তিক্ততা ভুলে সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে জোট বাঁধে মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি। শুরুতে ওই ‘মহাজোটে’ যোগ দেওয়ার কথা ছিল কংগ্রেসেরও। কিন্তু গত বছর পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের সময় আসন সমঝোতা নিয়ে মায়াবতীর সঙ্গে ঝামেলার সূত্রপাত। উত্তরপ্রদেশের ক্ষেত্রেও তা নিয়ে সমস্যা দেখা দিলে কংগ্রেসকে বাদ দিয়েই রাষ্ট্রীয় লোকদলকে সঙ্গে নিয়ে জোট গড়েন মায়াবতী-অখিলেশ। তবে গাঁধী পরিবারের গড় হিসাবে পরিচিত অমেঠী এবং রায়বরেলীকে বাদ দিয়েই প্রার্থী ঘোষণা করেন তাঁরা। এর পর রবিবার তাঁদের জন্য ৭টি আসন ছেড়ে দেওয়ার কথা জানায় কংগ্রেস। তাতেই ফুঁসে উঠেছেন মায়াবতী।
আরও পড়ুন: অভিষেকের নিরাপত্তায় বাড়াবাড়ির অভিযোগ তুলে দড়ির ব্যারিকেড খুলে দিলেন বাবুল সুপ্রিয়
এর আগে, বুধবার রবিবার কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে দেখা গিয়েছিল ভীম আর্মি সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বকেও। সম্প্রতি বিরোধী জোটের হয়ে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বারাণসী থেকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে চেয়েছিলেন তাদের নেতা চন্দ্রশেখর আজাদ। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে বুধবার হাসপাতালে তাঁকে দেখতে চান প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। কিন্তু তাঁর এই পদক্ষেপ মনে ধরেনি ভীম আর্মি সংগঠন নেতৃত্বের। ক্ষমতায় থাকাকালীন কংগ্রেস দলিতদের জন্য কিছু করেনি। বরং বিজেপি এবং আরএসএস-এর উত্থানে তাদের মদত ছিল বলে অভিযোগ তোলেন সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব। নির্বাচনের আগে দলিতদের কাছে টানার চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও রাহুল-প্রিয়ঙ্কার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন কেউ কেউ। তাতেই মায়াবতী চটেছেন বলে জল্পনা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের দাবি, উত্তরপ্রদেশে বিজেপির উচ্চবর্ণের ভোট ভাঙানোই লক্ষ্য ছিল কংগ্রেসের। নতুন করে দলিতদের কাছে টানার তাদের এই চেষ্টায় অসন্তুষ্ট হয়েছেন বিএসপি নেত্রী।
(কী বললেন প্রধানমন্ত্রী, কী বলছে সংসদ- দেশের রাজধানীর খবর, রাজনীতির খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)