পিনারাই বিজয়ন।—ফাইল চিত্র।
এক না হলে দুই। দুই না হলে তিন। শেষ পর্যন্ত তিনের একটাও হল না!
ভূমিপুত্রদের প্রাধান্য দিয়ে লোকসভা ভোটের জন্য প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে ফেললেন পিনারাই বিজয়ন, কোডিয়ারি বালকৃষ্ণনেরা। ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার আগে সেই তালিকা ঘোষণাও হয়ে গেল। সিপিএমে প্রবল প্রভাবশালী, দলের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের শিবিরের তিন অনুরোধ শেষ পর্যন্ত উপেক্ষিত থেকে গেল খাস কেরলেই!
কেরলের ২০টি লোকসভা আসনের মধ্যে ১৬টিতে লড়ছে সিপিএম। তার মধ্যে তিন কেন্দ্রে সিপিএম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী। চারটি আসনে লড়ছে বাম শরিক সিপিআই। দলীয় সূত্রের খবর, পলিটব্যুরোর এক মহিলা সদস্যকে এ বার কেরল থেকে লোকসভায় প্রার্থী করার জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছিল কারাট শিবির থেকে। দলের ওই অংশের পরিকল্পনা ছিল, সিপিএমের সংগঠন যেখানে শক্তিশালী, সেই কান্নুরের মতো জেলায় নিয়ে গিয়ে প্রার্থী করা হোক ওই নেত্রীকে। কিন্তু শুধুই কেরলের ‘ঘরের লোক’দের উপরে ভরসা রাখতে চেয়েছেন বিজয়নেরা। কান্নুরের বর্তমান সাংসদ পি কে শ্রীমতি ছাড়া প্রার্থী তালিকায় দ্বিতীয় মহিলা মুখ শুধু বীণা জর্জ। শবরীমালা-খ্যাত পাতানামতিট্টা লোকসভা কেন্দ্রে সিপিএম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী হচ্ছেন বিধায়ক বীণা।
বাংলা ও ত্রিপুরায় দলের হাল নড়বড়ে হয়ে যাওয়ার পরে কেরলই এখন সিপিএমের জন্য ভরসা করার এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোরও একমাত্র ঘাঁটি। সেখানে নতুন মুখ হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যকে সুযোগ দেওয়া হোক, আর্জি ছিল দলের একাংশের। কিন্তু কারাট-ঘনিষ্ঠ সেই নেতারও শিকে ছেঁড়েনি! এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সভাপতি ভি পি শানু বরং নতুন মুখ হিসেবে সুযোগ পেয়েছেন। কেরল সিপিএমের রেওয়াজ ভেঙে লোকসভায় লড়তে পাঠানো হচ্ছে চার বিধায়ককে। প্রার্থী হচ্ছেন দুই জেলা সম্পাদক পি জয়রাজন এবং ভি এন বাসুদেবন এবং রাজ্যসভার দুই প্রাক্তন সাংসদ পি রাজীব ও কে এন বালাগোপালও।
রাজ্যে এ বার সঙ্ঘ-বিজেপির উত্থান দেখে চিন্তিত কেরল সিপিএম লোকসভার প্রার্থী তালিকায় পুরনো ও নতুন মুখের ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করেছে। পুরনোদের ছেঁটে ফেলা হচ্ছে না ইঙ্গিত পেয়ে কারাট শিবিরের ইচ্ছা ছিল, বিদায়ী লোকসভায় সিপিএমের দলনেতা পি কে করুণাকরনকে ফের টিকিট দেওয়া হোক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যা দাঁড়িয়েছে, ওই রাজ্যে দলের বর্তমান ৮ সাংসদের (নির্দল ধরে) মধ্যে করুণাকরনই শুধু টিকিট পাননি! বাকি ৭ জন বহাল! দলের রাজ্য সম্পাদক বালকৃষ্ণন অবশ্য বলছেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে সেরা যে তালিকা করা যেত, তা-ই হয়েছে।’’
বিজয়ন, বালকৃষ্ণনেরা সিপিএমের অন্দরে কারাট শিবিরের সেনাপতি বলেই পরিচিত। তাঁদের এমন পদক্ষেপে স্বভাবতই চর্চা শুরু হয়েছে সিপিএমে! দলের সাম্প্রতিক কেন্দ্রীয় কমিটিতে যে ভাবে সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির পক্ষে দাঁড়িয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার দরজা খুলে রাখার জন্য সওয়াল করেছেন সিংহভাগ সদস্য, সেই ঘটনাকেও কেরলের সিদ্ধান্তের সঙ্গে পাশাপাশি রেখে দেখছেন দলের অনেকে।