চন্দ্রশেখর রাওয়ের কন্যা কে কবিতা।
খেতের ফসল হলুদ আর জোয়ারের দাম মিলছে না। তাঁর বিরুদ্ধে লড়তে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ১৭৮ জন চাষি। ভোটের মুখে তেলঙ্গানার কৃষকদের এই অভিনব প্রতিবাদকে অবশ্য অন্য ভাবে সামলাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখর রাওয়ের কন্যা কে কবিতা।
হায়দরাবাদ থেকে ১৭৫ কিলোমিটার দূরে, নিজামাবাদের মারুতিনগরে বাড়ির বিশাল ড্রইং রুমে বসে ব্রেকফাস্ট সারতে সারতে বললেন, ‘‘আমি খুশি! যা-ই হোক, ব্যাপারটা তো সবার সামনে এল! হলুদ, জোয়ারের দাম পেতে শুধু ওই ১৭৮ জন নয়, আমাকে ধরে ভোটে লড়ছে ১৭৯ জন!’’
সাতসকালে বাড়ির গেটের বাইরে তখন মুখ্যমন্ত্রী-কন্যার নামে জয়ধ্বনি শুরু হয়ে গিয়েছে। সামনেই দলের প্রচার দফতর। সেখানেও ভিড় কয়েকশো কর্মীর। বিশাল প্যান্ডেলে দলের কর্মী-সমর্থকের খাওয়াদাওয়াও চলছে। এসে গিয়েছে বেশ কয়েকটি সাজানো গাড়ি। ভোট প্রচারে বেরোনোর জন্য প্রস্তুত কবিতাও। বললেন, ‘‘দেখুন, এখানকার কৃষকদের আন্দোলন নতুন কিছু নয়। ২০১৪-য় নিজামাবাদ থেকে জেতার পরে আমিও লড়ছি চাষিদের দাবি নিয়ে। লোকসভায় বেসরকারি বিলও এনেছিলাম। কিন্তু হলুদের জন্য জাতীয় বোর্ড গড়া কিংবা জোয়ারের নূন্যতম সহায়ক মূল্যের ব্যবস্থা, সবই তো কেন্দ্রের হাতে। বিজেপির বড় নেতারা নিজামাবাদে এসে এ সব করবেন বলে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। কিছুই হয়নি। তাই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লড়তে চাষিদের সঙ্গে সব সময়েই আছি।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা সেরে আসা, ৪১ বছর বয়সি সফটঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ার কবিতা তেলঙ্গানা আন্দোলনের সময় থেকেই বাবার পাশে পাশে। গত লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্র থেকে জিতে তেলঙ্গানার প্রথম মহিলা সাংসদ তিনিই। চাষিদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে এ বারও যে তাঁর জয়ের সম্ভাবনা প্রবল, আশপাশে একটু ঘুরলেই তা বোঝা যাচ্ছে। সবই কি তা হলে মেয়ের জন্য বাবার দান! সেই পরিবারতন্ত্র? রাহুল গাঁধীকে যা নিয়ে সব সময়েই খোঁচা দেয় বিজেপি। প্রশ্ন শুনে নরেন্দ্র মোদীর দলকে পাল্টা আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রীর মেয়ে— ‘‘ওঁদের কথা কী বলব! বিজেপির অন্তত ৭০ জন নেতার ছেলেমেয়েরা রয়েছেন রাজনীতিতে। রাজনাথ সিংহ, যশবন্ত সিনহা— কত নাম বলব? আর আমি তো ভোটে লড়ব বলে রাজনীতিতে আসিনি। তেলঙ্গানার আন্দোলনের সময় থেকেই আছি।’’
সেই বিজেপিকেই তো সমর্থন করেন। নোটবন্দি, জিএসটি, রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতির ভোট— টিআরএস সব সময়েই তো নরেন্দ্র মোদীর পাশে? কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে থমকালেন কেসিআর-কন্যা। তবে মুহূর্তে জবাব দিলেন চতুর রাজনীতিকের মতো— ‘‘কী করার ছিল বলুন! নোটবন্দি আমরা আটকাতে পারতাম না। সমর্থন করেছিলাম বলেই হয়তো সেই সময়ে তেলঙ্গানায় কোনও সমস্যা হয়নি। আর জিএসটি? আমরা বিরোধিতা করলে অসুবিধার মধ্যে পড়তেন ব্যববসায়ীরা।’’
ভোটের প্রচারে কী বলছেন? বিজেপি-কংগ্রেসের বিরোধিতা? ভোটের পরে আবার তো যোগ দেবেন এদেরই কারও সঙ্গে! কবিতা বলেন, ‘‘সবটাই অঙ্কের খেলা। বিজেপি ২০০-র কাছাকাছি জিতলে এক রকম পরিস্থিতি। দেড়শো জিতলে অন্য রকম। তবে একজোট হয়ে থাকলে আঞ্চলিক দলগুলির সম্ভাবনা রয়েছে। রাজ্যগুলির অধিকার খর্ব করতে চায় কংগ্রেস-বিজেপি। সে জন্যই আঞ্চলিক দলগুলির একজোট হওয়া জরুরি।’’
কেমন লাগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে? ফেডারেল ফ্রন্টের সম্ভাবনা নিয়ে যতই টানাপড়েন থাক, তৃণমূল নেত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রীর কন্যা। বললেন, ‘‘বামেদের সঙ্গে লড়াই করে রাজনীতির জমি তৈরি করাটা সহজ কাজ নয়। অনেক লড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেটা করেছেন। উনি মানুষের পাশে আছেন। তাই ওঁকে শ্রদ্ধা করি।’’
প্রচারের জন্য তাড়া। সকালেই প্রবল রোদের তাপ। নিজামাবাদে পরপর সভা কবিতার। উঠতে উঠতে বললেন, ‘‘জানেন, অনেক লড়াইয়ের পরে আমরা তেলঙ্গানা পেয়েছি। বিজেপি, কংগ্রেস— পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই। এর মধ্যেই রাজ্যটাকে গড়ে তুলতে চাইছেন বাবা। তাই শুধু ভোট চাইছি না, মানুষকেও পাশে চাইছি।’’