পাত্থলগড়ি আন্দোলনের সেই পাথর। ঘাঘরা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
অদ্ভুত এক নিস্তব্ধতায় মোড়া পুরো গ্রাম। কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করলে তিনি কোনও উত্তর না দিয়ে চলে যাচ্ছেন। গাড়ির চালক বললেন, ‘‘ওঁরা মুন্ডারি ছাড়া অন্য কোনও ভাষা বোঝেন না।’’
খুঁটি শহর থেকে পনেরো কিলোমিটার দূরে ‘ঘাঘরা’। গত জুনে ‘পাত্থলগড়ি’ নিয়ে বিতর্কে শিরোনামে উঠে আসে ‘ঘাঘরা’। গন্ডগোলের জেরে পুলিশের গুলিতে মারা যান এক গ্রামবাসী। পরে স্থানীয় সাংসদ করিয়া মুন্ডার চার দেহরক্ষীকে অপহরণ করেন গ্রামবাসীরা। পাত্থলগড়ি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েক জন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়।
এখন সেই আন্দোলন স্তিমিত। তবু পরিবেশ থমথমে। গ্রামে ঢোকার মুখে পোঁতা আছে বড় একটি পাথর। তাতে আদিবাসী মানুষদের ‘অধিকার’ সম্পর্কে নানা কথা খোদাই করা। লেখা আছে, গ্রামের মানুষদের অনুমতি ছাড়া এই গ্রামে ‘প্রবেশ নিষেধ’। খুঁটির স্থানীয় মানুষ সতর্ক করেন, একা একা ওই গ্রামে যাওয়া ঠিক নয়। অতএব স্থানীয় সৌরভ কুমারকে নিয়ে প্রবেশ। সৌরভ বলেন, ‘‘আদিবাসী মানুষদের অধিকার নিয়ে খোদাই করা এই পাথর ভেঙে ফেলার সাহস প্রশাসন দেখায়নি।’’ তবে গ্রামে প্রবেশ অবাধ করতে তৈরি হচ্ছে রাস্তা। পাত্থলগড়ির পাশ দিয়েই চলে যাবে পিচ বাঁধানো সড়ক। মাটি ফেলার কাজ প্রায় শেষ। জল যাওয়া আসার জায়গায় জায়গায় বসানো হচ্ছে বড় বড় পাইপ।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
পাত্থলগড়ি আন্দোলন স্তিমিত হয়ে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু এই ঘটনা খুঁটি লোকসভা আসনের ভোটের সমীকরণ পাল্টে দিতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। এ বার এখানে বিজেপির ওজনদার নেতা তথা ঝাড়খণ্ডের তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা প্রার্থী। তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন কংগ্রেস ও ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা জোটের প্রার্থী, কংগ্রেসের কালীচরণ মুন্ডা। তৃতীয় পক্ষ ‘ঝাড়খণ্ড পার্টি’-র অজয় টোকনো।
খুঁটির আটবারের সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করিয়া মুন্ডার বয়স সত্তর পেরিয়ে যাওয়ায় এ বার প্রার্থী পদ পাননি। করিয়া ছিলেন খুঁটির ভূমিপুত্র। তাঁর না দাঁড়ানো, পাত্থলগড়ি কাণ্ডে আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিজেপির প্রতি ক্ষোভ, খ্রিস্টানদের অসন্তোষ— সব মিলিয়ে এ বার অর্জুন মুন্ডার মতো প্রার্থীকেও চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী কালীচরণ।
পাত্থলগড়ির ঘটনা যে ঠিক মতো সামলানো যায়নি তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন অর্জুন, তাঁর মতে, ‘‘পুলিশ দিয়ে নয়, আলোচনার মাধ্যমে ওই আন্দোলন থামাতে পারলে ভাল হতো। তবে পাত্থলগড়ি আন্দোলনের নেতারা বেশির ভাগই ছিলেন বহিরাগত। তাঁরা যে আদিবাসীদের ভুল বুঝিয়েছিলেন, সেটা আদিবাসীরা এখন বুঝতে পারছেন।’’ অর্জুনের দাবি, ‘‘ভোটে পাত্থলগড়ি প্রভাব ফেলবে না। আমরাই জিতছি।’’
কালীচরণের সঙ্গে অবশ্য খুঁটি শহরে দেখা মিলল না। তিনি ভোট প্রচারে গ্রামে। কালীচরণের সমর্থকদের দাবি, ‘‘যে সব গ্রামে পাত্থলগড়ি আন্দোলনের জেরে আদিবাসী ভোট বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে। সেটাই আমাদের প্লাস পয়েন্ট।’’ এ ছাড়াও তাঁদের দাবি, অর্জুন বহিরাগত। কালীচরণ স্থানীয় মানুষ। অর্জুন অবশ্য বলেন, ‘‘আমি মোটেই বহিরাগত নই। খুঁটি শহরের বাসিন্দা না হলেও খুঁটি লোকসভার সরাইকেলায় আমার আদি বাড়ি। আমার পাশে এখানকারই ভূমিপুত্র করিয়া মুন্ডা রয়েছেন। সর্বোপরি আমার সহায় মোদীজি।’’ করিয়া মুন্ডাও মনে করেন, ‘‘লড়াইটা হয়তো শক্ত হবে। তবে শেষ হাসি অর্জুনই হাসবেন।’’