নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র
পুলওয়ামা কাণ্ডের পরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘গর্জন’ করেই চলেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। তবে বিরোধী এবং রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, গা-গরম করা যাবতীয় সংলাপ আসন্ন নির্বাচনকে লক্ষ্যে রেখেই। সেগুলির বাস্তব উপযোগিতা বা মূল্য বিশেষ নেই।
যেমন কেন্দ্রীয় জলসম্পদমন্ত্রী নিতিন গডকড়ী গত কাল বলেছেন, ‘‘পাকিস্তানকে আমরা জল দেওয়া বন্ধ করে দেব।’’ কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জল বন্ধ করে দেওয়ার জিগির তুলে পঞ্জাব-সহ কিছু রাজ্যে ভোটে ফায়দা তোলার কথা ভাবতে পারে শাসক দল। কিন্তু এটি একান্তই অবাস্তব। বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে জলচুক্তি হয়েছিল। একতরফা ভাবে এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে এলে ভারতকে বিশ্বব্যাঙ্ককে জবাবদিহি করতে হবে (যা আজ পাকিস্তানও বলেছে)। তা ছাড়া, উচ্চ অববাহিকায় অবস্থিত ভারত যদি পাকিস্তানকে জল বন্ধ করে দেয়, তা হলে এর পর চিন ব্রহ্মপুত্রের জল বন্ধ করলে ভারতের বলার কিছু থাকবে না। ভারত সিন্ধু জলচুক্তি থেকে বেরিয়ে এলে জম্মু ও কাশ্মীরে বন্যার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত ধাক্কা খাবে নয়াদিল্লিই।
জলসম্পদমন্ত্রীর এই হুমকি নিয়ে প্রশ্ন করা সত্ত্বেও তাই মুখ খুলতে চায়নি বিদেশ মন্ত্রক। কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, ‘‘এ যে নেহাতই ফাঁকা আওয়াজ, তা প্রমাণিত। উরি হামলার পরেও ঠিক একই কথা বলেছিল কেন্দ্র।’’
আরও পড়ুন: রাজ্যের এক নেতার ৩৪৫ কোটির তদন্তে আয়কর দফতর
আবার পুলওয়ামা কাণ্ডের পরে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীই বলেছিলেন, দেশে সেনাদের রক্ত টগবগ করে ফুটছে। বড় মূল্য দিতে হবে পাকিস্তানকে। তার ঠিক এক সপ্তাহ পরে সৌদি যুবরাজের সঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তি আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ প্রয়োজন’। প্রশ্ন উঠছে, এক সপ্তাহের মধ্যেই ‘জোশ’ কমে এল কেন ? কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, ছ’দিন আগে আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন ফোন করেন ভারতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকে। সূত্রের খবর, ফোনেই ‘যথেষ্ট কড়া ভাবে’ সাউথ ব্লককে জানিয়ে দেওয়া হয় যে একতরফা সংঘাতের মনোভাব না নিতে। যা করার, আমেরিকার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে করতে ডোভালকে পরামর্শ দেন বোল্টন। এর পর আমেরিকায় নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শৃঙ্গলা দিল্লি এসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানিয়ে দেন, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সঙ্কটজনক সময়ে এই অঞ্চলে অশান্তি চাইছে না হোয়াইট হাউস। যা করার, কূটনৈতিক ভাবে করতে হবে।
সূত্রের মতে, কূটনৈতিক মন্থর প্রক্রিয়া ভোটের রাজনীতিতে লাভজনক নয়। তাই পাক-নীতির প্রশ্নে ‘বাহুবলী’ সংলাপ আমদানি করতে হচ্ছে বিজেপি নেতৃত্বকে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহও আজ বলেছেন, ‘‘পাকিস্তান আমাদের ভয়ে কাঁপছে। ভারতের প্রত্যাঘাতের আশঙ্কায় তারা
পাক অধিকৃত কাশ্মীরের গ্রামগুলি ফাঁকা করে দিয়েছে। আমাদের মনে আগুন জ্বলছে। শুধু সময় এবং সুযোগের অপেক্ষা।’’ কিন্তু বাস্তবে বড়জোর নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর নির্দিষ্ট জঙ্গিদের উপর কিছু অভিযান হতে পারে। তার বেশি কিছু অদূর ভবিষ্যতেও করা সম্ভব নয়। এই প্রসঙ্গে আর একবার প্রশ্ন উঠেছে বহুচর্চিত ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’এর ‘প্রমাণ’ এবং ‘কার্যকারিতা’ নিয়েও।