গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রাহুল গাঁধীর নাটক কটাক্ষের জবাব দিলেন নরেন্দ্র মোদী। শব্দের সামান্য কারিকুরি করে কংগ্রেস সভাপতির নাম না করেও প্রধানমন্ত্রীর খোঁচা, ‘‘সেট আর স্যাট-এর পার্থক্য বোঝার বুদ্ধিমত্তাও নেই।’’ জবাবে কংগ্রেসের পাল্টা খোঁচা, উত্তরপ্রদেশে গিয়ে আর এক প্রস্থ নাটক করে এলেন প্রধানমন্ত্রী। এর পাশাপাশি গরিবদের আর্থিক সাহায্যে কংগ্রেসের ন্যায় প্রকল্প থেকে উত্তরপ্রদেশে এসপি-বিএসপির জোটকেও নিশানা করেছেন মোদী। সমাজবাদী পার্টির ‘স’, রাষ্ট্রীয় লোকদলের ‘রা’ এবং বহুজন সমাজ পার্টির ‘ব’ জুড়ে তিন দলের জোটকে ‘সরাব’ (মদ) বলতেও ছাড়েননি মোদী।
বুধবার ‘অ্যান্টি স্যাটেলাইট মিসাইল’ (এস্যাট)-এর সফল পরীক্ষা করে ভারত। ওই দিন দুপুরে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, ভারতের অস্ত্রভাণ্ডারে যুক্ত হল উপগ্রহ ধ্বংসকারী ক্ষেপণাস্ত্র। যে প্রকল্পের নাম ছিল ‘মিশন শক্তি’। অন্য দিকে বুধবারই ছিল বিশ্বনাট্য দিবস। মোদীর ঘোষণার পরই রাহুল গাঁধী এই প্রসঙ্গ টেনে কটাক্ষ করে টুইট করে নাট্য দিবসের শুভেচ্ছা জানান। ইঙ্গিতটা ছিল, এস্যাট নিয়ে নয়া নাটক করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এই প্রেক্ষিতেই বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশের মেরঠে ছিল মোদীর নির্বাচনী প্রচার সভা। রাহুলের সেই কটাক্ষের জবাব প্রধানমন্ত্রী ফিরিয়ে দিলেন নিজস্ব স্টাইলে। শব্দ প্রয়োগের কারিকুরিতে মোদী বরাবরই সিদ্ধহস্ত। রাহুলের কটাক্ষের জবাব দিতেও সেই শব্দেরই আশ্রয় নিলেন মোদীর। ‘সেট’ এবং ‘স্যাট’-এর প্রয়োগ করে। মোদী বলেন, ‘‘থিয়েটারে সেট কথাটা বহুল প্রচলিত। থিয়েটারে গেলে এই শব্দটি হামেশাই শোনা যায়। কিন্তু কিছু বুদ্ধিমান ব্যক্তি সেই সেট-এর সঙ্গে স্যাট গুলিয়ে ফেলেছেন। সেট এবং স্যাট-এর পার্থক্যই যিনি বোঝেন না, তাঁর কথায় কাঁদব না হাসব সেটাই বুঝতে পারছি না।’’
দারিদ্রসীমার নীচে থাকা গরিব মানুষের জন্য ন্যূনতম আয়ের প্রকল্প বেশ কিছুদিন আগেই ঘোষণা করেছিলেন রাহুল গাঁধী। সম্প্রতি তার রূপরেখাও স্পষ্ট করেছেন। প্রিয়ঙ্কা গাঁধী এই প্রকল্পের নাম দিয়েছেন ‘ন্যায়’বা ‘ন্যূনতম আয় যোজনা’। এই প্রকল্পে গরিবদের মাসে ৬ হাজার টাকা আয়ের সংস্থানের কথা বলা হয়েছে। মেরঠের সভায় মোদীর নিশানায় ছিল এই ‘গরিবি’ প্রসঙ্গও। তিনি বলেন, ‘‘কয়েক দশকের শাসনে কংগ্রেস শুধু গরিবদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। ইন্দিরা গাঁধী বলেছিলেন গরিবি হঠাও। তিনি চলে গিয়েছেন। দেশে গরিবের সংখ্যা এবং গরিবি বাড়তে থেকেছে। তাই এখন নতুন স্লোগান উঠেছে, কংগ্রেস হঠাও, গরিবি আপনা থেকেই পালিয়ে যাবে। কংগ্রেস আর কারও কথা ভাবে না, শুধু একটি পরিবারের সুবিধার কথা ভাবে।’’
আরও পড়ুন: মহাকাশে সাফল্য ভারতের, মোদীকে ‘নাট্য দিবসে’র শুভেচ্ছা জানিয়ে খোঁচা রাহুলের
রাহুল গাঁধী যেখানেই যান, রাফাল নিয়ে মোদীকে আক্রমণ করতে ছাড়েন না। তার পাল্টা এ দিন মোদী বলেন, ‘‘দেশের সুরক্ষার কথা ভাবে না কংগ্রেস। তাই নিজেদের সরকারের সময় ভারতীয় বায়ুসেনা অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান চেয়েছে, কিন্তু অনুমতি দেওয়া হয়নি। সেনাবাহিনী বুলেট প্রুফ জ্যাকেট চেয়েছে, ওঁরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। আর এখন যখন দেশকে সুরক্ষার জন্য রাফাল যুদ্ধবিমান কেনা হচ্ছে, তখন আজেবাজে কথা বলে বেড়াচ্ছে কংগ্রেস।’’
এ দিন মেরঠে নির্বাচনী জনসভায় জাতীয় প্রেক্ষাপট ছেড়ে মোদী নিশানা করেন উত্তরপ্রদেশের মহাজোট। অখিলেশ যাদব, অজিত সিংএবং মায়াবতী মহাজোট করে লড়ছে উত্তরপ্রদেশে। সেই তিন দল এসপি, বিএসপি এবং আরএলডি-র আদ্যক্ষর যোগ করে এই জোটকে ‘সরাব’ বলে কটাক্ষ করেন। জনতার উদ্দেশে মোদী প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘‘সুস্বাস্থ্যের জন্য কি মদ ভাল? উত্তরপ্রদেশের জন্য কি এই ‘সরাব’জোটকে কি আপনারা গ্রহণ করবেন?’’একই সঙ্গে মায়াবতী-মুলায়মকে মোদীর তোপ, ‘‘দু’দশক ধরে একে অন্যকে জেলে পোরার চেষ্টায় ছিলেন দুই দলের নেতা-নেত্রী। এখন চৌকিদারকে ভয় পেয়ে দুই দল একজোট হয়েছে।’’
আরও পডু়ন: মাসুদ আজহারকে কালো তালিকাভুক্ত করতে রাষ্ট্রপুঞ্জে নয়া পদক্ষেপ আমেরিকার
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তবে এ নিয়ে পাল্টা সরব হয়েছে কংগ্রেস। সরাব কটাক্ষ নিয়ে দলের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সূরজেওয়ালা সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ‘‘একজন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এই ধরনের আক্রমণ রাজনৈতিক শিষ্ঠাচারের পরিপন্থী।’’