নরেন্দ্র মোদীর বোড়ে! তকমা ঘোচাতে মরিয়া চন্দ্রশেখর রাও

রাজ্যে যা পরিস্থিতি, তাতে লোকসভার ১৭টি আসনের বেশিরভাগটাই দখলে রাখা যায় কিনা, সেই চেষ্টা করছেন টিআরএসের শীর্ষ নেতারা।

Advertisement

অঞ্জন সাহা

তেলঙ্গানা শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:১১
Share:

প্রচারে কেসিআর। ছবি পিটিআই।

বানজারা হিলসে ছবির মতো দোতলা বাড়ির ড্রইং রুমে মুখোমুখি বসে তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির নেতা কে কেশব রাও। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে পরিচিত নাম। কারণ, এক সময়ে এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রাজ্যের দায়িত্বে ছিলেন কেশব। পরে তেলঙ্গানা আন্দোলনের হাওয়ায় দল আর সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা, যোগ দেন চন্দ্রশেখর রাওয়ের দলে। এই মুহূর্তে তিনি তেলঙ্গানায় শাসক দলের ‘নাম্বার টু’। তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির মহাসচিব।

Advertisement

গত ডিসেম্বরের বিধানসভা ভোটে তেলঙ্গানায় ফের ক্ষমতায় আসার আগে ও পরে কী কী কাজ করেছেন, তার খতিয়ান দিচ্ছিলেন কেশব। এ রাজ্যে যা পরিস্থিতি, তাতে লোকসভার ১৭টি আসনের বেশিরভাগটাই দখলে রাখা যায় কিনা, সেই চেষ্টা করছেন টিআরএসের শীর্ষ নেতারা। এমনকি, ফেডারেল ফ্রন্টের (এ ফ্রন্টের নাম ইদানীং আর শোনা যায় না) অন্যতম প্রস্তাবক চন্দ্রশেখর রাওয়ের দলের কর্মীরা তাঁদের নেতাকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রিত্বের স্বপ্ন পর্যন্ত দেখতে শুরু করেছেন। ভোট সভায় কে সি আর অবশ্য দাবি করছেন, ‘‘ফেডারেল ফ্রন্ট জিতবে। তবে প্রধানমন্ত্রিত্ব নিয়ে আমার কোনও স্বপ্ন নেই।’’

বিরোধী দলের অনেক নেতাই অবশ্য মনে করছেন, ফেডারেল ফ্রন্ট গড়তে কে সি আরের উদ্যোগ আসলে ‘মোদীরই খেলা’। তবে কেশব বলেন, ‘‘আমাদের ধারণা, টিআরএস আর জগনের ওয়াইএসআর কংগ্রেস মিলে অন্তত ৩৫টা আসন পাবে। তেমন হলে আমরা তৃণমূল, বিজেডির মতো দলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে একজোট হওয়ার চেষ্টা করতে পারি।’’

Advertisement

গত বিধানসভা ভোটের পরে এ রাজ্যে কার্যত ভেঙে পড়েছে বিরোধী শিবির। টিআরএসের সঙ্গে জোট গড়েছেন এআইএমআইএম নেতা আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। তিনি হায়দরাবাদ আসনটিতে লড়ছেন। আর কংগ্রেসের যে ১৯ জন বিধায়ক গত ভোটে জিতেছিলেন, তাঁদের ১৩ জনই যোগ দিয়েছেন চন্দ্রশেখর শিবিরে। জমি গুছিয়ে নিয়ে তাই ‘রায়ত বন্ধু’-র মতো জনমুখী প্রকল্পগুলি নিয়েই প্রচারে শাসক দল। একমুখ হাসি নিয়ে কেশব বলেন, ‘‘বাচ্চা জন্মানোর সাত দিনের মধ্যেই পৌঁছে যাচ্ছে কে সি আর কিট। সাবান, পাউডার আরও কত কিছু! তার পর স্কুল। ১ টাকায় ৬ কেজি চাল, বার্ধক্য ভাতার বয়স ৬০ থেকে কমিয়ে ৫৮, আর রায়ত বন্ধু তো রয়েইছে। ১ একর জমিতে রবিতে ৫ হাজার, খরিফ ফসলের চাষে আরও পাঁচ— এখন সবাই তো আমাদের নকল করছে!’’

বিরোধীদের দেওয়া ‘অপবাদ’ ঘোচাতে ভোটবাজারে মোদীর দিকে তির ছুড়ছেন কে সি আর-ও। বলছেন, ‘‘তেলঙ্গানাকে ৩৫ হাজার কোটি দেওয়ার দাবি ঠিক নয়। প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসে এমন মিথ্যে মানায় না। উনি নিজেকে সরপঞ্চের থেকেও নীচে নামিয়ে এনেছেন!’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কথায় অবশ্য চিঁড়ে ভিজছে না। হায়দরাবাদের নামপল্লিতে গাঁধী ভবনে বসে প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৈয়দ নিজামুদ্দিন বলেন, ‘‘কেসিআর এমন মুখ্যমন্ত্রী, যিনি মোদীর সব সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। নোটবন্দি থেকে জিএসটি, রাষ্ট্রপতি কিংবা উপরাষ্ট্রপতির ভোট, সব সময়ে দু’জনে পাশাপাশি। আর মুসলিম ভোটের সমস্যা হবে বুঝে বিজেপির থেকে দূরে সরে একা বিধানসভা ভোটে লড়ে জিতেছেন। এখন লোকসভা ভোটের আগে দু’পক্ষই নাটক করছে।’’ কংগ্রেস নেতার দাবি, কে সি আর ভয় পাচ্ছেন! সে জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও তেলঙ্গানায় বিরোধী শিবিরকে ছত্রখান করতে নেমেছেন।

তবে হায়দরাবাদ‌ে চারমিনারের পাশে ভিড়ে ঠাসা বাজারে নিজের দোকানে বসে শহরের পুরনো বাসিন্দা, ৬৫ বছর বয়সি শামসের আহমেদ খান শুধু বলেন, ‘‘ভোটে যে পক্ষই জিতুন, যেন শান্তি থাকে। সবাই মিলে একসঙ্গে থাকতে অসুবিধা কোথায়?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement