শনিবার কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীর সঙ্গে দেখা করেন তেলুগু দেশম পার্টির নেতা চন্দ্রবাবু নায়ডু। —ফাইল চিত্র।
বিজেপি বিরোধী মহাজোট গড়ার তৎপরতা শুরু হয়েছিল লোকসভা নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই। এ বার তা নিয়ে আরও মরিয়া প্রচেষ্টা শুরু হল। এক দিকে যেমন দেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক দলকে একজোট করতে তৎপরতা তুঙ্গে তুললেন চন্দ্রবাবু নায়ডু, অন্য দিকে বিজেপি-র পাশাপাশি কংগ্রেসের থেকেও সমান দূরত্বের নীতি থেকে সরে আসার বার্তা দিলেন বিজেডি নেতা নবীন পট্টনায়ক। জোটের শরিক হতে বামেদের তরফেও মিলেছে সদর্থক বার্তা।
জোট নিয়ে ব্যক্তিগত স্তরে আগেই উদ্যোগী হয়েছিলেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। ২৩ মে দিল্লিতে বিরোধীদের নিয়ে বৈঠকের আগেই প্রাক্তন ইউপিএ শরিকদের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করেছিলেন তিনি। এ বার কে চন্দ্রশেখর রাও, জগন্মোহন রেড্ডি, নবীন পট্টনায়কদের মতো আঞ্চলিক স্তরের হেভিওয়েট নেতাদেরও বার্তা দিতে দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিলেন। পাশাপাশি, জোটের স্বার্থে মরিয়া চন্দ্রবাবু জানিয়ে দিলেন, নিজের ‘রাজনৈতিক শত্রু’ চন্দ্রশেখরের দিকেও হাত বাড়াতে আপত্তি নেই তাঁর। কংগ্রেস যখন সমস্ত আঞ্চলিক দলকে জোট গঠনের তৎপরতা বাড়াচ্ছে, সে সময় অ-বিজেপি এবং অ-কংগ্রেসি জোটের জন্য আরও উদ্যোগী হচ্ছেন তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (টিআরএস)-র নেতা কে চন্দ্রশেখর রাও।
এই আবহেই শনিবার সকালে নয়াদিল্লিতে গিয়ে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীর সঙ্গে দেখা করেন তেলুগু দেশম পার্টির নেতা চন্দ্রবাবু। মূলত ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক সমীকরণ নিয়েই আলোচনা করেন তাঁরা। এর পর তিনি এনসিপি নেতা শরদ পওয়ারের সঙ্গেও দেখা করেন। কংগ্রেসের সঙ্গে কথা হয়েছে জেডিইউ নেতা দেবগৌড়াও।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
মহাজোট গড়তে মুখ্য সূত্রধর হিসাবে উদ্যোগী নায়ডু বিএসপি নেত্রী এবং সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে কথাবার্তা চালাবেন। এ দিন দুপুরেই লখনউ উড়ে গিয়েছেন তিনি। সন্ধ্যায় সেখানে সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদবের পর বিএসপি নেত্রী মায়াবতীর সঙ্গেও দেখা করেন চন্দ্রবাবু।
অ-বিজেপি জোটের পক্ষে সুখবর, নবীন পট্টনায়কের দল বিজেডি তাদের ঘোষিত নীতি নিয়ে নমনীয় হয়েছে। এত দিন বিজেপি এবং কংগ্রেস— দুই দলের থেকেই সমদূরত্বের নীতি নিয়েছিল তারা। তবে ভোটপ্রচারে গিয়ে বিজেপি-কে ‘সাম্প্রদায়িক’ বলে আখ্যা দেওয়ার পর থেকে উত্সাহিত হয়েছে কংগ্রেস। তার পর এ দিন বিজেডি নেতা তথা ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক জানিয়েছেন, ওড়িশার স্বার্থরক্ষার্থে যে দলই কাজ করবে তাকেই সমর্থন করবে তাঁর দল। ২০০০-’০৯ পর্যন্ত ওড়িশায় বিজেপি-র জোটসঙ্গী নবীন পট্টনায়ক জানিয়েছেন, রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার জন্য যে দল রাজি থাকবে, তাদেরই সমর্থন করবে বিজেডি। তাঁর আরও দাবি, জোট গড়ায় বিজেডি বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করবে।
আরও পড়ুন: মোদী, শাহের ভাষণ নিয়ে ক্ষোভ গ্রাহ্য হয়নি কমিশনে, বৈঠক থেকে নিজেকে সরালেন লাভাসা
আরও পড়ুন: গোলমালের খবর পেলেই ৭ মিনিটে পৌঁছে যাবে কুইক রেসপন্স টিম
চন্দ্রবাবু নায়ডুর এই উদ্যোগ ছাড়াও দেশের সমস্ত আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে অ-বিজেপি এবং অ-কংগ্রেসি জোট গঠনে তৎপর হয়েছেন টিআরএস নেতা কে চন্দ্রশেখর রাও। ইতিমধ্যেই ডিএমকে নেতা স্ট্যালিনের সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছে চন্দ্রশেখরের। তবে তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখরের সঙ্গে চন্দ্রবাবুর তেমন ‘সদ্ভাব’ না থাকলেও জোটের স্বার্থে তাঁর সঙ্গেও কাজ করতে রাজি তিনি। চন্দ্রবাবু বলেন, “কেবলমাত্র টিআরএস নয়, বিজেপি বিরোধী যে কোনও দলই স্বাগত। এ রকম সব দলকেই মহাজোটে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”
২৩ মে দিল্লিতে সনিয়ার ডাকা বিরোধীদের নিয়ে বৈঠকের আগেই বাম এবং আপের সঙ্গেও কথাবার্তা চালিয়েছেন চন্দ্রবাবু। শুক্রবার সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ও আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরীবালের সঙ্গেও দেখা করেছেন তিনি। সীতারাম জানিয়েছিলেন, ধর্মনিরপেক্ষ জোটের স্বার্থে সমর্থন দেবে সিপিএম।
(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরাবাংলা খবরপেতে পড়ুন আমাদেরদেশবিভাগ।)