অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ
দু’বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা পাঁচ বছর ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না— এ সংক্রান্ত আইন আগেই তৈরি হয়েছিল। এ বার কোনও প্রার্থীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা থাকলে সেক্ষেত্রেও কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এখন আর শুধু কমিশনে জানানো নয়, সংবাদপত্র এবং টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানাতে হবে সংশ্লিষ্ট দলকে। তাও নমো নমো করে নয়, অন্তত তিন বার বিজ্ঞাপন দিতে হবে। এবং বহুল প্রচারিত সংবাদপত্র এবং টিভি চ্যানেলে। এ বার লোকসভা ভোটে এমনই নির্দেশিকা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। এর পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্টের সবিস্তার তথ্যও দিতে হবে কমিশনকে। এ বারই প্রথম লোকসভা ভোটে কার্যকর হচ্ছে এই নয়া নিয়ম।
কমিশনের নতুন নির্দেশিকায় কী বলা হয়েছে? মনোনয়ন জমা দেওয়া থেকে শুরু করে ভোটগ্রহণের আগে পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রার্থীদের ফৌজদারি মামলার সবিস্তার তথ্য অন্তত তিন বার সংবাদ পত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানাতে হবে। স্থানীয় বা ছোট কোনও সংবাদপত্র নয়, বহুল প্রচারিত সংবাদপত্র এবং টিভি চ্যানেলে সেই বিজ্ঞাপন দেওয়া বাধ্যতামূলক। আবার একই দিনে বিজ্ঞাপন দেওয়া চলবে না। দিতে হবে তিনটি আলাদা আলাদা তারিখে। তবে প্রার্থী নয়, বিজ্ঞাপন দিতে হবে সংশ্লিষ্ট দলকে।
ফলে প্রার্থীদেরও নিজের দলকে সমস্ত ফৌজদারি মামলার তথ্য তাঁর দলকে জানাতে হবে। এর জন্য নির্দিষ্ট ২৬ নম্বর ফর্ম পূরণ করে দলের কাছে জমা দিতে হবে। দল সেই মতো বিজ্ঞাপন দেবে। কমিশনের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, কেউ কোনও ফৌজদারি অপরাধের বিষয় গোপন করলে বা বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত নিয়ম ভঙ্গ করলে সেই প্রার্থীর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে কমিশন। এমনকি, প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলও হতে পারে। কমিশনের আরও নির্দেশ, দলের ওয়েবসাইটেও এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ বাধ্যতামূলক।
ভারতে সাধারণ নির্বাচনের ইতিহাস জানেন?
আরও পড়ুন: মোদীর ‘ঘরে’ই আজ কংগ্রেসের বৈঠক, এই প্রথম বক্তৃতা করবেন প্রিয়ঙ্কা!
প্রার্থীদের সোশ্যাল মিডিয়ার তথ্যও এ বার জমা দেওয়ার নির্দেশিকা জারি করেছে কমিশন। অর্থাৎ প্রার্থীর ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম-সহ যাবতীয় সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের আইডি জমা দিতে হবে কমিশনে। গোটা ভোট প্রক্রিয়ার মধ্যে সেই অ্যাকাউন্টের উপর নজরদারি চালাবে কমিশন। কোনও রকম কোনও মিথ্যা, ভুয়ো বা উস্কানিমূলক প্রচার, বিতর্কিত বা আপত্তিকর মন্তব্য ওই সব অ্যাকাউন্টে পোস্ট বা শেয়ার করা হচ্ছে কি না, তার উপর কড়া নজর থাকবে কমিশনের। এ ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপনে কত টাকা খরচ হয়েছে, সেই তথ্যও জমা দিতে হবে কমিশনে।
রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে অনেক সময়ই প্রতিহিংসামূলক মামলা হয়। আবার নেতা-নেত্রীদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার নজিরও রয়েছে হুবহু। কিন্তু অপরাধ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা অভিযুক্ত, তবে অপরাধী নন। তাই ভোটে দাঁড়াতে অসুবিধা নেই। কিন্তু প্রার্থীর বিরুদ্ধে যে ফৌজদারি অপরাধের মামলা রয়েছে এবং সেগুলি কতটা গুরুতর, সেটা ভোটারদের জানা উচিত। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই কারণেই এ বার কমিশনের এই নতুন নির্দেশিকা।
আরও পড়ুন: চেনা মুখই কি ভরসা তৃণমূলের, মমতার বাড়িতে আজ দলের নির্বাচনী কমিটির বৈঠক
গত রবিবার লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করেছেন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সুনীল অরোরা। ওই দিন থেকেই সারা দেশে কার্যকর হয়েছে আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি। ১১ এপ্রিল থেকে সারা দেশে মোট ৭ দফায় ভোটগ্রহণ চলবে। ফল ঘোষণা হবে ২৩ মে। ভোটের নির্ঘণ্টর পাশাপাশি ওই দিনই ফৌজদারি অপরাধ এবং সোশ্যাল মিডিয়া সংক্রান্ত এই নির্দেশিকা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন।
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)