হাজিপুরে বিজেপি-জেডিইউ কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ। ছবি: সংগৃহীত।
নির্বাচনের আগেই রামমন্দির ইস্যুতে বিহারে সঙ্ঘর্ষে জড়িয়ে পড়লেন বিজেপি এবং জনতা দল (ইউনাইটেড) সমর্থকেরা। সভা চলাকালীন নেতাদের লক্ষ্য করে ছোড়া হল চেয়ার, ভেঙে দেওয়া হল মঞ্চ, টেবিলের উপর উঠে পড়েও তাণ্ডব চালালেন কোনও কোনও সমর্থক। এনডিএ জোটের অন্যতম দুই শরিক দলের নেতা-সমর্থকদের মধ্যে এই মারপিটের খবর সামনে আসার পর অবশ্য তা বড় করে দেখতে নারাজ জোটের নেতারা। এই জোটের আরেক শরিক এবং লোক জনশক্তি পার্টির (এলজেপি) নেতা ও রাজ্যের মন্ত্রী পশুপতি পরসের দাবি, ‘‘স্থানীয় মানুষ কিছুই জানে না। সংবাদ মাধ্যমই তা বাড়িয়ে দেখাচ্ছে।’’
নির্বাচনের কৌশল ঠিক করতে শুক্রবার বিহারের হাজিপুরে জড়ো হয়েছিলেন বিজেপি, জেডিইউ এবং এলজেপি দলের কর্মী এবং সমর্থকেরা। সেখানেই রামমন্দির তৈরির প্রশ্নে বিজেপি এবং জেডিইউ সমর্থকদের মধ্যে মতভেদ থেকে শুরু হয়ে যায় হাতাহাতি। জেডিইউ নেতা সঞ্জয় বর্মা রামমন্দির নিয়ে তাঁর বক্তব্য জানাতেই ক্ষেপে ওঠেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। টেবিলে উঠে পড়ে তাঁর বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করেন তাঁরা। পাল্টা স্লোগান দিতে থাকেন জেডিইউ সমর্থকরাও। কিছু ক্ষণের মধ্যে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে সভাস্থল। শুরু হয় চেয়ার ছোড়াছুড়ি। কেউ কেউ মঞ্চে উঠেও সঙ্ঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
অযোধ্যায় বিতর্কিত জমিতে রামমন্দির তৈরি এবং জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ সুবিধে দিতে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারা নিয়ে দুই দলের বিরোধিতা যথেষ্ট পুরনো। যদিও সেই বিরোধিতাকে দূরে সরিয়েই জোট তৈরি করে এই মুহূর্তে বিহারে ক্ষমতাসীন বিজেপি এবং জেডিইউ। আগামী লোকসভা নির্বাচনেও বিহারের ৪০টি আসনের মধ্যে ১৭টি করে আসনে লড়ছে এই দুই দল। বাকি ছ’টি আসন ছাড়া হয়েছে এনডিএ-র আরেক শরিক রামবিলাস পাসওয়ানের লোক জনশক্তি পার্টিকে।
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক দলগুলির দুর্বলতা জেনে ফেলাই কি প্রশান্ত কিশোরের উন্নতির অন্তরায়?
এই নির্বাচনেও নিজেদের ইস্তাহারে রামমন্দির তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি। একই সঙ্গে কড়া অবস্থান নিয়েছে ৩৭০, ৩৫এ এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে। বিভিন্ন জনসভায় সারা দেশে এনআরসি চালু করা হবে বলেই জানাচ্ছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। অন্য দিকে আগামী ১৪ এপ্রিল নিজেদের ইস্তাহার প্রকাশ করার কথা জানিয়েছে নীতীশ কুমার নেতৃত্বাধীন জেডিইউ। সেখানে রামমন্দির নির্মাণ, জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য বিশেষ সুবিধে এবং নাগরিকত্ব বিল, এই তিনটি প্রশ্নেই শরিক বিজেপির সঙ্গে ভিন্নমত হতে পারে জেডিইউ, এমনটাই অনুমান রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। সেই বিরোধই আগে থেকে সংঘর্ষের চেহারা নিল বিহারের হাজিপুরে।
জোটের শরিকদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেই এই হাতাহাতির খবর সামনে আসার পর হাজিপুরের এলজেপি নেতা এবং রামবিলাস পাসওয়ানের ভাই পশুপতি পরস অবশ্য বললেন, ‘‘সংবাদ মাধ্যমই এই ঘটনাকে বড় করে দেখাচ্ছে। সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই।’’
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বিভিন্ন ইস্যুতে নিজেদের মতভেদের কথা অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন জেডিইউ নেতা কে সি ত্যাগী। সংবাদসংস্থাকে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের মধ্যে মতভেদ আছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে আমরা আগেও আপত্তি জানিয়েছিলাম। এখনও তাই জানাচ্ছি। আগামী দিনেও আমাদের বিরোধিতা জারি থাকবে।’’ একই সঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ধর্ম এবং সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদের মাধ্যমে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে। এই ঘটনা নজিরবিহীন। আমার ৪০-৪৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে এই ভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটতে দেখিনি।’’