—ফাইল চিত্র।
দেশের অনেক প্রান্তে তখনও বুথের সামনে লাইন। হাতে পুরো হিসেব আসেনি। দিল্লিতে বিজেপির এক নেতা দাবি করে বসলেন, যে ৯১টি আসনে ভোট হয়েছে, তাতে আরও চারটি আসন বাড়িয়ে নিচ্ছে দল। ২০১৪ সালে বিজেপি এই ৯১টি আসনের মধ্যে জিতেছিল ৩২টিতে। এ বার পাচ্ছে ৩৬টি।
এটি গত কালের ঘটনা। এক দিনের মধ্যেই বিজেপি শিবিরের ছবিটা অনেক পাল্টে গিয়েছে। কাল অনেক রাত পর্যন্ত জেগেছেন নেতারা। যে ২০টি রাজ্যে গত কাল ভোট হয়েছে, সব জায়গা থেকে রিপোর্ট সংগ্রহ করেছেন। তার ভিত্তিতে এখন আর কোনও আসনের দাবি করছে না দল। কিন্তু গেরুয়া শিবিরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, প্রাথমিক লক্ষণ আদৌ বিজেপির পক্ষে স্বস্তির নয়।
কেন?
দলের এক নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘অধিকাংশ রাজ্যে গত লোকসভার থেকে কম ভোট পড়েছে। গত ভোটে মনমোহন সিংহ সরকারকে সরিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে ক্ষমতায় আনার একটি তাগিদ ছিল জনতার মধ্যে। মোদী-ঝড় ছিল গোটা দেশে। কিন্তু এ বারে তেমন কোনও ঝড় কোথাও দেখা যাচ্ছে না। মোদীকে পরাস্ত করতে হবে, এমন ভাবনাও নেই। কিন্তু দেশ জুড়ে মোদীর পক্ষে জোরালো হাওয়া না থাকায় স্থানীয় বিষয়গুলি বড় হয়ে উঠেছে। স্থানীয় জাত-পাতের অঙ্কও বড় ফ্যাক্টর।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ভোট শুরুর অনেক আগে থেকেই বুথকে শক্ত করতে আক্রমণাত্মক ছিলেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ। আরএসএসও মাঠে নেমে কাজ করেছে। কিন্তু প্রথম দফার ভোটের গতিপ্রকৃতি দেখে বিজেপি শিবিরে অনেকেই মনে করছেন, ভোটারদের বুথ পর্যন্ত নিয়ে যেতেও সর্বত্র সক্ষম হচ্ছে না বিজেপি ও সঙ্ঘের কর্মীরা। কিছু দিন আগে ঠিক এই পরিস্থিতিই তৈরি হয়েছিল মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তীসগঢ়ের বিধানসভা নির্বাচনে।
‘বিজেপি ইনসাইডার’ বলে একটি টুইটার হ্যান্ডেল রয়েছে, যেটি সাধারণত বিজেপির অন্দরের খবর দেয় বলে দিল্লির অলিন্দে পরিচিত। তাঁদের অনুমান অনেক সময় মিলেও যায়। আজ সকালে এই টুইটার থেকেই একটি টুইট করা হয়। যেখানে বলা হয়, দলের সাম্প্রতিকতম অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা অনুযায়ী, গোটা দেশে বিজেপি ১৫০-১৬০টি আসনে নেমে আসবে। দলের সব থেকে বেশি লোকসান হবে উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও মহারাষ্ট্রে।
কংগ্রেস ঠিক এই ভবিষ্যৎবাণীটিই অনেক দিন ধরে করে আসছে। তাদের মতে, গত লোকসভা ভোটে বিজেপির একার জোরে পাওয়া ২৮২টি আসন থেকে এক ধাক্কায় শ’খানেক কমে গেলে এনডিএর শরিকদের নিয়েও সরকার গড়তে পারবেন না নরেন্দ্র মোদী। কোনও মতে সরকার গড়ার মতো পরিস্থিতিতে পৌঁছতে পারলেও মোদীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নেবে না এনডিএ শরিকরাই। তবে কংগ্রেস মনে করছে, বিজেপির সংখ্যা আরও কমবে। আর সরকার গড়বে বিরোধীরা মিলেই।
বিজেপি মানছে, বিশেষ করে গত কালের ভোটে মায়াবতী-অখিলেশদের জোট অনেকটাই বাজি মেরেছে। অতীতে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে মেরুকরণ কাজ করত, এ বারে সেটিও করছে না। ফলে বিজেপিকেও এখন নতুন করে ভাবতে হচ্ছে, মেরুকরণের উগ্রতা আরও বাড়ানোর প্রয়োজন আছে কি না। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ আজই দিল্লি-সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রামনবমীর যজ্ঞ করে শোভাযাত্রা বার করেছে।
ভোটে হিন্দুদের জয় হোক বলে ধ্বনি তুলেছে। পরের দফার নির্বাচনে বুথের ‘মাইক্রো-ম্যানেজমেন্ট’ নিয়েও নতুন কৌশল তৈরি করছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।